পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৫০ বছর বয়সী মঞ্জুর হাসান। ২০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন পা। পঙ্গু হয়েও পরিবার ও সমাজের বোঝা হননি। ইচ্ছাশক্তির বলে সংসারে ছড়িয়েছেন আলোর ঝলকানি। পঙ্গু হয়েও যে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো কাজ করে সংসার চালানো যায় সে উদাহরণ মঞ্জুর হাসান। তিনি পঙ্গুত্বের কাছে পরাজিত না হয়ে সমাজের কর্ম অক্ষম প্রতিবন্ধীদের প্রেরণার উৎস হয়েছেন। পরের সহায়তায় চলাফেরা নয়, বরং চাকরি করে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু বনানীর ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ড থামিয়ে দিয়েছে তার চলার পথ। পুড়িয়ে দিয়েছে পরিবারের স্বপ্ন। স্বপ্নপোড়ার স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বনানীর এফ আর টাওয়ার। মঞ্জুর হাসানের পরিবার নেমে এসেছে অন্ধকার। তার স্ত্রী ছেলেমেয়ের সামনে শুধুই অন্ধকার। এতোক্ষন যে লড়াকু মঞ্জুরের কথা বলা হলো তার বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মুনছুর রহমান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারানোর আগ মুহুর্তেও সাহসী মঞ্জুর হাসান ভাইকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন ‘আমিতো অফিস থেকে বের হতে পারছিনা, পঙ্গু মানুষ। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। সবাই অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি কোন উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করিস। তোরা ভালো থাকিস।’ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আগুনে ঝলসে যাওয়ার কয়েক মহুর্ত আগে মোবাইলে ছোট ভাই মেহফুজ জুবায়ের পলাশকে এসব কথা বলেন। মঞ্জুর হাসানের এই মোবাইল বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
পঙ্গুত্বকে জয় করে চাকরি করে সংসার চালিয়ে সমাজের উদাহরণ হয়ে থাকা মঞ্জুর হাসানের ভাই জানান, ছাত্রজীবন তথা ১৯৮৭-৮৮ সাল থেকেই মঞ্জুর ঢাকায় থাকতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে ছাত্রজীবন কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি পান। এরপর সংসার। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে থাকতেন। স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে; সুখী পরিবার। কিন্তু একটি অগ্নিকান্ড সেই সুখকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল!
অন্য দশ দিনের মতো ২৮ মার্চও সকালে বনানীর এফআর টাওয়ারের অফিসে আসেন মঞ্জুর হাসান। নিজের টেবিলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হঠাৎ চিৎকার চেঁচাম্যাচি এবং প্রাণ বাঁচাতে সহকর্মীদের দৌঁড়াদৌঁড়ি। আগুন থেকে বাঁচতে সবাই যখন ছুটাছুটি করছিলেন তিনি কোন উপার না পেয়ে নিজের চেয়ারে বসে ছিলেন। মৃত্যু নিশ্চিত বুঝতে পেরে জীবনের শেষ সময়টুকু স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তার ছোটভাই মোনাফ হাসান জানান, আগুনের লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ায় এক সময় ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বার বার রিং হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।
ঘটনার পরের দিন শুক্রবার মঞ্জুর হাসানের নওগাঁ সদরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকরা দেখেন, শত শত মানুষ বাড়িতে ভীড় করছে। গ্রামের লোকজন মঞ্জুর হাসানের বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেন। মঞ্জুরের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। তবে ছোট ভাই মোনাক হাসান শিমুল নওগাঁ মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির বগুড়া ব্রাঞ্চ অফিসে চাকরি করেন। সেখান থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে আসেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পেয়েই বাড়িতে ছুটে আসেন। এসেই দেখেন গ্রামের লোকজন মঞ্জুরের বাড়িতে ভীড় করেন।
মঞ্জুরের ছোট ভাই মোনাক হাসান শিমুল জানান, কাশেম গ্রুপের অফিস মতিঝিলে ছিল। চাকরিরত অবস্থায় ২০০০ সালে অফিসের সামনের রাস্তায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মঞ্জুর হাসান পঙ্গু হন। এরপর থেকে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। কিন্তু কাজে উদ্যোমী ছিলেন। সে জন্যই কোম্পানি মঞ্জুরকে চাকরি থেকে বাদ দেয়নি। পরবর্তীতে মতিঝিল থেকে অফিস বনানীতে নেয়া হয়। তিনি বনানীর হেড অফিসেই কাজ করতেন। অফিসে যখন আগুন লাগে সবাই বাঁচার জন্য ছুটাছুটি করছিল। কিন্তু ভাই (মঞ্জুর) পঙ্গু হওয়ায় কিছু করার উপায় ছিল না। অফিসে বসেই মোবাইল ফোনে আমাদের সাথে কথা বলছিল। নিজেই দোয়া দরুদ পড়ছিলেন আর আমাদের সবার দোয়া চেয়েছিলেন। তার শেষ কথা ছিল ‘আমি তো বের হতে পারছি না- এখানে হয়তো আমার শেষ সময় যাবে।’
মঞ্জুর হাসানের স্মৃতিচারণ করে চাচাতো ভাই ফজলুর রহমান বলেন, যখন ঢাকায় থাকতাম নিয়মিত তার (মঞ্জুর) সাথে দেখা করতাম। তার অফিসে যেতাম। অত্যান্ত সাহসী মানুষ; তবে তাকে ধরে উঠা বসাতে করাতে হতো। যখন আগুন লাগার সংবাদ পেলাম তখন ধারণা করেছি হয়তো সে আর বের হতে পারবে না। উদ্ধারকর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে তাকে শনাক্ত করা হয়। তার পরিবার ও সন্তানদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় দাফন করা হয়। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।