পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রতিদিনই সড়কে প্রাণ যাচ্ছে প্রায় ২০জন মানুষের। আহতের সংখ্যা আরো বেশী। গতকাল প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, গত ১০ দিনে সড়কে প্রাণ গেছে ১৭শিক্ষার্থীর। গত বছরের আগস্টে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবীতে দেশকাঁপানো আন্দোলন শুরু করলে শিক্ষার্থীদের সব দাবীই মেনে নেয় সরকার। আন্দোলন ও দাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উঠলেও এটি মূলত দেশের সব মানুষের দাবী। এই গণদাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকার দাবী বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করলেও সেই আন্দোলনের পর থেকে সড়কে প্রাণহানি ও বিশৃঙ্খলা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাফিকপক্ষ পালিত হওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনা, বিশৃঙ্খলা জনদুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। গত ১৯ মার্চ সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় সুপ্রভাত বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার পর আবারো শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসে নিরাপদ সড়কের দাবীতে সড়ক অবরোধ করে। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে এবং মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার ও আন্দোলন স্থগিত করলেও সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে তীব্র গণপরিবহন সংকট এবং ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য আগের চেয়ে বেড়েছে।
সুপ্রভাত বাসের চাকায় মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত হয়ে গেলেও রাজধানীতে তীব্র গণপরিবহণ সংকট দেখা দিয়েছে। গণপরিবহণের উপর নির্ভরশীল অফিস যাত্রী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অধিকাংশ গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকা এবং চালকের বৈধ লাইসেন্স না থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর প্রায় সবগুলো রুটেই এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। ফিটনেসবিহিন গাড়ী, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের কারণেই সড়কে বেপরোয়া গাড়ী চালনা ও দুর্ঘটনা ঘটছে। সঙ্গত কারণে গাড়ীর ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স ও রুট পারমিট ইত্যাদি যাচাই ও নিশ্চিত করতে ট্রাফিক বিভাগের মোবাইল টিম মাঠে নেমেছে। এ কারণে অবৈধ ও ফিটনেস-লাইসেন্স বিহীন গাড়ীর মালিক ও চালকরা রাস্তায় গাড়ি নামানো থেকে বিরত থেকে একদিকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে এই সংকটকে তারা ভাড়াবৃদ্ধির সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে লোকাল বাসকে গেইটলক দাবী করে দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে। গাড়ীর সংকটের মধ্যে যাত্রিরা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। গণপরিবহণে নিরাপত্তা ও নৈরাজ্য দূর করার দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাড়াও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভোক্তা অধিকার ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবী-দাওয়া ও কর্মসূচিতে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শুধুমাত্র বিশেষ সময়ের আন্দোলন ও প্রতিশ্রুতি অবস্থার পরিবর্তনে তেমন কোনো কার্যকর ভ’মিকা রাখেনা, এমন ধারণাই করছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করার পর সরকার তা মেনে নিয়ে অবস্থা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব অবস্থা সম্পুর্ণ বিপরীত। গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর প্রথমে পরিবহন সংকট বেড়ে যাওয়া, অত:পর পরিবহন শ্রমিকদের কথিত কর্মবিরতিতে সারাদেশে নজিরবিহীন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সে সময় ব্যক্তিগত গাড়ীচালক এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিবহন শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত ও মুখে কালি মাখিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স আটকে মুমুর্ষূ শিশু হত্যার ঘটনাও পরিবহন শ্রমিকরা ঘটিয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের হাতে জনদুর্ভোগ ও যখন তখন কোটি কোটি মানুষের জিম্মিদশায় পতিত হওয়ার ঘটনাও বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের কাছে দেশের সাধারণ মানুষ এবং সরকারও যেন নিরুপায়। অথচ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারী দলের এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এদের মনোপলি নেতৃত্ব থেকে দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে মুক্ত করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সরকারের পক্ষে অসম্ভব নয়। গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তাহীনতা, যাত্রীসেবা ও অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়। যাত্রীবেশে গাড়ীতে উঠে এই সেলের সদস্যরা যাত্রী হয়রানিসহ বিদ্যমান ইস্যুগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করবেন। শুধুমাত্র এ উদ্যোগেই অবস্থার কাঙ্খিত পরিবর্তন হবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের হাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল আছে কিনা, ট্রাফিক পুলিশ এবং সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা, সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ সংকট, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দূর করা অসম্ভব। তবে রাজধানীর গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনদুর্ভোগ নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত সর্বোচ্চ কঠোর নজরদারি ও নীতিগত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।