মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
থাইল্যান্ডের নির্বাচনে বেসরকারি ফলে সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত পালাং প্রচারাত এগিয়ে রয়েছে। দলটির এ ফলাফল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এর ফলে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনীর অবস্থান আরো দৃঢ় হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের মতে, ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোট গণনার পর দেখা যায় সামরিক বাহিনী সমর্থিত পালাং প্রচারাত দল ৭৫ লাখ ভোট পেয়েছে। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে। সর্বশেষ অভ্যুত্থান ঘটে ২০১৪ সালে। তারপর থেকে জান্তার মাধ্যমে তারা দেশ শাসন করে আসছে।
অন্যদিকে সম্ভাবনাময় বিজয়ী দল ফিউ থাই রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তারা এ নির্বাচনে প্রথম স্থানে থাকবে বলে অধিকাংশ জনমত জরিপে বলা হয়েছিল। দলটি পেয়েছে ৭০ লাখ ভোট। বিগত দুটি অভ্যুত্থানেই ফিউ থাই পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার দলটি ২০০১ সাল থেকে সব নির্বাচনেই জয়ী হয়। রোববারের ভোটের ফফলাফল থাকসিন সিনাওয়াত্রার জয়ের ধারাকে রুদ্ধ করল বলে মনে হচ্ছে। তবে দলটি যদি নির্বাচনে জয়লাভও করত তাহলেও বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হত।
জান্তার প্রণীত সংবিধানের খসড়ায় বলা হয়েছে যে সামরিক বাহিনী উচ্চ কক্ষ বা সিনেটের ২৫০ জন সদস্যকে নিয়োগ করবে। এর অর্থ সেনাবাহিনী নিয়োগকৃতরাই পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রণের অবস্থায় থাকবে যদি বিরোধীরা নিম্নকক্ষে ব্যাপকভাবে জয়ী না হয়।
রোববার রাতে পরের দিকে নির্বাচন কমিশন জানায় যে সোমবার সকালে তারা ভোটের বাকি ফলাফল জানাবে। আরেকটি ঘোষণায় এ সময় বিকেল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
নির্বাচন কমিশন জানায়, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৬ শতাংশ। ৮০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি আশা করা হয়েছিল। ৬ শতাংশ ভোট অকার্যকর হয়েছে। ফিউ থাই পার্টির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে।
৪টি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার সম্মুখীন গণতন্ত্র কর্মী নুত্তা মাহাত্তানা বলেন, ব্যালটের অনিয়মের খবর সামরিক বাহিনী সমর্থিত সংবিধান দ্বারা থাই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সামগ্রিক ভাবে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, তারা সংবিধানের খসড়া করার পর নির্বাচনে কারচুপি শুরু হয়েছে।
সেনাবাহিনী সমর্থিত দলটি নির্বাচনে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন জানায়। দলটি ২০১৪ সালে অভ্যুত্থানকারী জান্তার নেতা জেনারেল প্রায়ুথ চান-ওচাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখা অনুমোদন করেছে।
ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক সুরাত হোরাচাইকুল বলেন, বিশেষ করে জেনারেল প্রায়ুথ ক্ষমতায় আসার পর সামরিক বাহিনী থাই সমাজ ও রাজনীাতির প্রতিটি কোণে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা রাজনীতি থেকে সহজে সরবে না।
গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারী প্রায়ুথ বারবার নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করার পক্ষে। রাজনৈতিক কর্মীদের হয় কারাদন্ড‘‘ দেয়া হয়েছে অথবা তথাকথিত মনোভাব সমন্বয় শিবিরে পাঠানো হয়েছে। সাইবার অপরাধ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘হাংগার গেমস’ ছবি থেকে তিন আঙ্গুলে স্যালুট দিতে রাজি না হওয়া ছাত্রদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
কোনো ভোট পড়ার আগেই নির্বাচনী নিয়ম কানুন কয়েকটি রাজনৈতিক জোটের ক্ষমতা খর্ব করে দিয়েছে। ফিউ থাইসহ জান্তা বিরোধী কয়েকটি দলের উপর বিলুপ্তি বা কারাদন্ডের হুমকি ঝুলছে। এর মধ্যে ফিউচার ফরোয়ার্ড নামের তরুণদের একটি দল এবার প্রথম নির্বাচন করেছে এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
থাইল্যান্ডের আসন ব্যস্থা এমন জটিল করা হয়েছে যে ফিউ থাই পার্টি যদি বাকি আসনের ভোট পেয়ে ৫শ’ আসনের পার্লামেন্ট বা নিম্নকক্ষের পালাং প্রচারাতের সমসংখ্যক আসনও পায় , কিন্তু যেহেতু উচ্চকক্ষ বা সিনেট রয়েছে সামরিক বাহিনীর হাতে তাই দলটি বিরোধী দলের ভূমিকাও জোরালো ভাবে পালন করতে পারবে না।
নির্বাচনের সরকারী ফলাফল ঘোষণা করা হবে মে মাসের প্রথম দিকে। সেনাবাহিনীর সমর্থিত দলের অপ্রত্যাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে থাইল্যান্ডে একটি অস্বস্তিকর স্থিতাবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। দেশটিতে একদিকে থাকবে সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যদিকে পরিবর্তনকামী হতাশ জনতা।
রোববার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ‘থাইল্যান্ডের জন্য প্রার্থনা করুন’ শীর্ষক হ্যাশট্যাগ প্রবণতা ছিল তুঙ্গে।
সাবেক টেলিযোগাযোগ বিলিওনেয়ার থাকসিন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসেন। দেশের চাল উৎপাদনের কেন্দ্র থেকে সমর্থন পেয়ে থাকসিন ক্ষমতায় আসার পর সমগ্র জাতি এক উচ্চ এলিট সমাজ ও জনতার মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। কারো কারো মতে, থাইল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা অসম সমাজ এবং জান্তার গত ৫ বছরের শাসনকালে সম্পদের বৈষম্য শুধু বেড়েছে।
রোববার থাকসিনের দলের পক্ষে ভোটদানকারী ননগাঞ্চ ওয়ারি বলেন, ফিউ থাই পার্টি সব সময়ই জনগণের সাথে আছে। তাদের নীতি সকল শ্রেণির মানুষের জন্য, বিশেষ করে নিম্ন শ্রেণির লোকদের জন্য।
নির্বাচনের পর নির্বাচনে ভোটারদের বড় অংশই থাকসিন সিনাওয়াত্রার দলকে সমর্থন করেছে, বিশেষ করে দলটির স্বাস্থ্য সেবা ও চালের ভর্তুকি দান কর্মসূচির জন্য। যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান করে। একটি তার বিরুদ্ধে , আরেকটি তার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিরদ্ধে। নিরাপত্তা বাহিনী থাকসিনের অনুসারীদের বিক্ষোভ দমন করে কয়েক ডজন লোককে হত্যার মধ্য দিয়ে।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজপ্রাসাদ থেকে এক অনির্ধারিত বিবৃতিতে মহা ভাজিরানলংকর্ন বোদিনদ্রেদবায়াইয়ারাংকুন -এর এক বিবৃতি প্রচার করা হয়। এতে বলা হয় যে রাজতন্ত্র রাজনীতির ঊর্ধ্বে। বিবৃতিতে দেশ পরিচালনার জন্য ভালো লোকদের সমর্থন প্রদান এবং খারাপ লোকদের ক্ষমতায় আসা ও দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করতে বাধা দিতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানানো হয়।
গত মাসে উবলরতানা রাজাকন্যা সিরিভাদানা বর্নাবাদীর নির্বাচন করার আশা ধূলিসাৎ করেন রাজা ভাজিরানলংকর্ন । উবলরতানা থাকসিন সমর্থিত থাই রক্ষা চার্ট পার্টি নামে আরেকটি দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মনোনীত হন। তার মনোনয়ন পাওয়ার কথা ঘোষণার পর রাজা এক রাজকীয় ফরমান জারি করেন যাতে বলা হয় যে এটা ঠিক কাজ নয়। তার রাজনৈতিক সম্ভাবনা বিলুপ্ত হয়।
সাংবিধানিক আদালত এ মাসে রায় দেয় যে উবলরতানার প্রার্থিতা একটি বৈরী পদক্ষেপ। অন্যদিকে থাই রক্ষা চার্ট পার্টি বিলুপ্ত করা হয়।
শুক্রবার এক সামাজিক মাধ্যমের ছবিতে উবলরতানাকে হংকঙে থাকসিনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়। থাইদের জন্য একেবারেই যেটা দেখা যায় না, উবলরতানাকে একটি ছবিতে থাকসিনকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায়।
রোববারের নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৫ শতাংশ। তাদের সমথনপুষ্ট দল ফিউচার ফরোয়ার্ডের নেতা হচ্ছেন ৪০ সবছর বয়স্ক অটোপার্টস ব্যবসায়ী ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান থানাথর্ন জুয়াংগ্রুয়ানকিট।
ব্যাংককে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে নাপাকাং সাংদাং নামের ২১ বছর বয়স্কা একটি বৃত্তিমূলক স্কুলের একাউন্টিং স্নাতক বলেন, থাইলান্ডের এখন নতুন মুখের দ্বারা শাসিত হওয়ার সময় এসেছে। আমরা জানি না থানাথর্ন আসলেই ভালো কিনা, তবে তাকে চেষ্টা করার একটা সুযোগ দিচ্ছি। থানাথর্নের বিরুদ্ধে যে কম্পিউটার মামলা করা হয়েছে তাতে আগামী সপ্তাহে তার কারাদন্ড হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা কোনোটিই মুক্ত নয়।
মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারো কারো মতে, থাইল্যান্ডের নির্বাচন যদিও ত্রুটিপূর্ণ, কিন্তু এশিয়ার প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশটিতে দায়িত্বশীলতা পুনরুদ্ধারের এটি একটি পন্থা। ব্যাংককের এক ব্যাংক নির্বাহী নাতাপং কাসেমসান্ত বলেন, আমাদের দেশের জন্যই যে নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক রক্ষার জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এমন একটা সরকার দরকার যে জানবে যে কিভাবে এ দুই শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।