প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর নেই (ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। গত শনিবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত ১টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তার মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনসহ সংস্কৃতি অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে আসে। গীতিকার ও সাংবাদিক কবির বকুল জানান, শনিবার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ তিনি। বারিধারস্থ নিজ বাসাতেই ছিলেন তিনি। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। এসময় তার পাশে ছিলেন স্বামী রহমতুল্লাহ। গতকাল বাদ জোহর বারিধারা স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে বনানীস্থ সেনাবাহিনীর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী এই শিল্পী অসংখ্য জনপ্রিয় গান শ্রোতাদের উপহার দেন। একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়, এক নদী রক্ত পেরিয়ে, আমার দেশের মাটির গন্ধে, একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল, সাগরের তীর থেকে, খোলা জানালা, পারি না ভুলে যেতে, ফুলের কানে ভ্রমর এসে, আমি তো আমার গল্প বলেছিÑএ রকম অসংখ্য গান দিয়ে বাংলাদেশের অগণিত শ্রোতার মন জয় করেছেন তিনি। তার গাওয়া দেশাত্মবোধক গান আজও শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রোতারা তাদের বিচারে সেরা যে গান মনোনয়ন করেছেন, তার ভিত্তিতে বিবিসি বাংলা তৈরি করেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের তালিকা। এ তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া চারটি গান রয়েছে। এর মধ্যে ৯ নম্বরে আছে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ গানটি। এই গানের গীতিকার ও সুরকার খান আতাউর রহমান। ১৩ নম্বর স্থানে রয়েছে তার গাওয়া ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি। এই গানের গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার ও সুরকার শিল্পীর বড় ভাই মরহুম আনোয়ার পারভেজ। গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারের সূচনা সংগীত হিসেবে তৈরি করা হয় ১৯৭০ সালে। গানটি আওয়ামী লীগ তার দলীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করে। তালিকার ১৫ নম্বরে রয়েছে তার গাওয়া ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। এই গানের গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার ও সুরকার আনোয়ার পারভেজ। ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ গানটি রয়েছে ১৯ নম্বর স্থানে। এই গানটির গীতিকারও গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সরকার আনোয়ার পারভেজ। তবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা এবং শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি বিএনপি তাদের দলীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করে। বছর সাতেক আগে চিরকালের জন্য তিনি বর্নাঢ্য সঙ্গীতজীবন ছেড়ে ধর্ম-কর্মে মনোযোগী হন তিনি। বাইরে খুব একটা বের হতেন না। নামাজ আর কোরআনের সঙ্গেই কেটেছে তার জীবনের শেষ দিনগুলো। একুশে পদকজয়ী শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি। তার বাবা এম ফজলুল হক এবং মা আসিয়া হক। মায়ের হাতেই ছোটবেলায় তার গানের হাতেখড়ি। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে রেডিও এবং চলচ্চিত্রের গানে তার যাত্রা শুরু হয়। করাচি টিভিসহ উর্দু সিনেমায়ও গান করেছেন। গান শিখেছেন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে। ১৯৬৪ সালে তিনি টিভিতে প্রথম গান করেন। শাহনাজ রহমতুল্লাহর মেয়ে সিনথিয়া থাকেন লন্ডনে। তার একমাত্র ছেলে ফয়সাল যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করে এখন কানাডা প্রবাসী। তার বড় ভাই সুরকার মরহুম আনোয়ার পারভেজ ও ছোট ভাই মরহুম চিত্রনায়ক জাফর ইকবাল।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া উল্লেখযোগ্য কালজয়ী গান
শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া কালজয়ী গানের তালিকায় রয়েছেÑ যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, ফুলের কানে ভ্রমর এসে, ওই ঝিনুক ফোঁটা সাগর বেলায়, পারি না ভুলে যেতে, যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি, আমি সাত সাগরের ওপার হতে, একটু সময় দিলে না হয়, স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই, আবার কখন কবে দেখা হবে, যদি চোখের দৃষ্টি দিয়ে চোখ বাঁধা যায়, তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে, তুমি কি সেই তুমি, ও যার চোখ নাই, ঘুম ঘুম ঘুম চোখে, আমি তো আমার গল্প বলেছি, বন্ধুরে তোর মন পাইলাম না, খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছো, ওই আকাশ ঘিরে সন্ধ্যা নামে, আমার ছোট্ট ভাইটি মায়ায় ভরা মুখটি, আষাঢ় শ্রাবণ এলে নেই তো সংশয়, বারোটি বছর পরে, আরও কিছু দাও না দুঃখ আমায়, আমি ওই মনে মন দিয়েছি যখন, আমার সাজানো বাগানের আঙিনায়, এই জীবনের মঞ্চে মোরা প্রভৃতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।