পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ত্রুটি-বিচ্যুতি, সংস্কার-পুনঃসংস্কারের বিষয়টি নতুন নয়। যে বাঁধ লোকালয়, বসতভিটা, জমিজমা রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো তা রক্ষা করতে পারছে না। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দুর্বলভাবে নির্মিত এসব বাঁধ যে কোনো সময় জোয়ারের পানিতে ভেসে যেতে পারে। আসন্ন বর্ষার সময় পানির তোড়ে এসব বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় এখন সেখানে বসবাসরত মানুষ চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তারা আতঙ্কিত হয়ে আছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকুলীয় এলাকায় প্রায় ২২৯২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪২৪ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। উপকূলবাসীরা আশঙ্কা করছে, যে কোনো সময় জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে তাদের সহায়সম্বল তলিয়ে যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য অঞ্চলেও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বলা যায়, উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো অনেকটা শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে এগুলো ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে, খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাট উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুঁইয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এলাকার মানুষ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, যে কোনো সময় এসব এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হতে পারে।
দেশে যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে এন্তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও তার বেশিরভাগই দুর্বল ও ভঙ্গুর অবস্থায় থেকে যায়। এক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি সবার আগে সামনে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে যে, বাঁধ নির্মিত হয় তা অত্যন্ত দুর্বল ও ভঙ্গুর অবস্থায় থেকে যায়। জোয়ার বা বন্যার সময় সেগুলো ভেসে যায়। আমরা দেখেছি, বন্যার সময় কীভাবে বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের জমিজমা ও বসতভিটা তলিয়ে যায়। সেখানকার সাধারণ মানুষ নিজ উদ্যোগে মাটি ফেলেও বন্যার পানি ঠেকাতে পারে না। প্রতি বছরই এ চিত্র দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্মিত বাঁধগুলো যদি যথাযথভাবে নির্মাণ ও নিয়মিত সংস্কার করা হতো, তবে কি এভাবে বন্যার তোড়ে ভেঙ্গে যেত? এর দায় নিশ্চিতভাবেই পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও ওপর বর্তায়। বোর্ডের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণেই বাঁধগুলো ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। বলা যায়, উপকূলীয় বেড়িবাঁধসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাঁধগুলোকে এই শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা তাদের ব্যবসায় পরিণত করেছে। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে, আর তা নিয়ে তারা বাঁধ ও নির্মাণের নামে ব্যবসা করে নিজেদের পকেট ভারি করছে। বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। তা নাহলে, বছর না ঘুরতেই বাঁধগুলো এমন ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীতি হবে কেন? বাঁধের ভেতর বসবাসকারি সাধারণ মানুষকে কেন বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে? অনুমাণ করা যায়, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অনেক বাঁধই ভেঙ্গে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আবহাওয়া যে বিরূপ আচরণ করছে তাতে ঝড় ও বন্যা হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলে ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় যেসব বাঁধ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে সেগুলো মুহূর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে। ইনকিলাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পানি উন্নয়ন বোর্ড উপকূলীয় কিছু এলাকায় ভাঙ্গনপ্রবণ বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বেড়িবাঁধগুলো যে ঝুঁকিপূর্ণ, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এগুলোর নির্মাণে ত্রুটি ছিল এবং সময়মতো সংস্কার করা হয়নি। ত্রুটিমুক্তভাবে নির্মাণ ও সংস্কার করা হলে পুনরায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো না।
প্রতি বছরই দেখা যায়, বর্ষা মৌসুম এলেই বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের ধুম পড়ে। শুকনো মৌসুমে এ কাজটি করা হয় না। এর কারণ, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার পুরোপুরি শেষ করা যায় না এবং তা টেকসইও হয় না। এ সময়টি বেছে নেয়া যে অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়ার জন্য, তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুকনো মৌসুমে যদি বাঁধগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে কাজও মজবুত হতো, অর্থও সাশ্রয় হতো। আমাদের কথা হচ্ছে, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও উপকূলের বেড়িবাঁধগুলোর পুরোপুরি সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব বাঁধ নির্মিত হয়েছে সেগুলো সারাবছরই তদারকি করতে হবে। কিভাবে বাঁধ টেকসই করা যায়, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাঁধ নির্মিত হবে আর বন্যা হলে তা বালির বাঁধের মতো ভেসে যাবে, তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। যেসব বাঁধ যথাযথভাবে নির্মিত ও সংস্কার হয়নি, সেগুলোর কাজ যারা করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কিছু অসাধু মানুষের ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাষ্ট্রের বিশাল অংকের অর্থের অপচয় হবে এবং সাধারণ মানুষের জানমাল বিপন্ন হবে, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।