পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আনা অর্থের ব্যয় নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মূলকথা, প্রাপ্ত অর্থের খুব সামান্যই ব্যয় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য। অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, যারা দেখতে আসেন তাদের জন্য। এ অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বয়ং। গত বুধবার মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফিংকালে তিনি বলেছেন, আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, গত সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত এনজিওগুলো আবাসিক হোটেলগুলোর বিলই দিয়েছে দেড়শ কোটি টাকার ওপরে। ফ্লাট ও বাসাবাড়ির ভাড়া দিয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা। বিদেশ থেকে টাকা এনে খরচ করার কথা রোহিঙ্গাদের জন্য, অথচ সেই টাকার ২৫ ভাগও তাদের জন্য খরচ হয় না। ৭৫ ভাগই খরচ হয়, যারা দেখাশোনার জন্য আসেন তাদের পেছনে। এটা খুবই দুঃখজনক। মন্ত্রী এখানেই থামেননি। তিনি টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা কতিপয় এনজিওর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু এনজিও আছে, যারা ইল-মোটিভ নিয়ে কাজ করছে। আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্টে তা উঠে এসেছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এসব এনজিওকে চিহ্নিত করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্থের অপব্যয়, অপব্যবহার ও লুটপাট নিয়ে আগে থেকেই বিভিন্ন মহলে সন্দেহ ও প্রশ্ন ছিল। তবে কোনো তরফেই এভাবে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি, যেটা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। এ জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।
মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বুঝতে মোটেই অসুবিধা হয় না, কীভাবে চলছে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম। রোহিঙ্গারা, বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত জনগোষ্ঠি। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে স্বদেশ মিয়ানমার থেকে নির্বিচার হত্যা ও বিতাড়ণের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে, যার উপযুক্ত প্রশংসা বাংলাদেশ ও এর জনগণ পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আসছে। তাদের সংখ্যা ১০ লাখের কাছাকাছি। এর আগেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক নির্যাতিত ও বিতাড়িত রোহিঙ্গার আশ্রয় দেয়া সম্ভব হলেও তাদের ত্রাণসহ দৈনন্দিন চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তার জন্য কিছুটা সস্তির ব্যাপার এই যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘসহ নানান আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। তাদের থাকা-খাওয়া, অস্থায়ী আবাস ও সঙ্গত অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা যথেষ্ট না হলেও কোনো রকমে তাদের টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা বা দেখাশোনা করছে। রোহিঙ্গাদের জন্য যে অর্থ বা ত্রাণসামগ্রী এসেছে বা আসছে, তাতে বাংলাদেশের কোনো ফায়দা নেই। বাংলাদেশ চায়, এ অর্থ ও ত্রাণ রোহিঙ্গাদের কল্যাণে পূর্ণ ও যথাযথভাবে কাজে লাগুক। আন্তর্জাতিক সাহায্য সাধারণত বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হয়ে থাকে। এসব এনজিও নানা সূত্র ও উৎস থেকে টাকা পেয়ে বা এনে ব্যয় করে। কিন্তু ব্যায়ের যে নমুনা আমরা দেখছি, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিছু এনজিও প্রাপ্ত টাকা তাদের ইচ্ছেমত ব্যয় করছে। যারা টাকা দিচ্ছে বা যারা তদারক বা পরিদর্শনের জন্য আসছে তার পেছনে যদি ৭৫ ভাগই ব্যয় হয়ে যায় তবে রোহিঙ্গাদের জন্য থাকলো কী? যারা টাকা দিচ্ছে এবং এখানে যারা সেই টাকা খরচ করছে তাদের পেটেই বেশির ভাগ টাকা গেলে সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী বা করার থাকতে পারে।
বিশ্লেষক-পর্যবেক্ষকদের ধারণা, প্রাপ্ত অর্থের বড় অংশই বেহাত বা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে এবং সেই লুটপাটটি করছে কিছু এনজিও। কাজেই বিষয়টি ব্যাপক ও অণুপুংখ তদন্তের দাবি রাখে। এনজিওদের ব্যবসা ও টাকা লুটপাটের সুযোগ কোনোভাবেই দেয়া যেতে পারে না। এটা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না, প্রাপ্ত অর্থ রোহিঙ্গাদের কল্যাণে ব্যায়িত হলে তাদের জীবনমান এখনকার চেয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দময় হতে পারতো। কাজেই এমন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে এনজিওদের অপব্যয় ও লুটপাট রহিত হয় এবং রোহিঙ্গারা সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব দ্রুত করতে হবে। আর অভিযোগটি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর বরাবরে তুলে ধরতে হবে। তাহলে তারাও তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যেসব এনজিও অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করছে, তাদের অবশ্যই দ্রুত শনাক্ত করতে হবে এবং যথোচিত ব্যবস্থাও নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের জন্য আসা অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্যই যাতে ব্যয় হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।