Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাকসু নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। একইসঙ্গে হলগুলোরও ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ২৮ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সময়ে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন, তারা চাননি বলে কোনো নির্বাচন হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনের দাবিতে সভা-সমাবেশ, অনশন অনেক কিছুই হয়েছে। এমন কি উচ্চ আদালতে রিট পর্যন্ত হয়েছে। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছে। বহুল প্রতিক্ষিত এই নির্বাচনে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হওয়ার কথা, নানা কারণে তার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেলেও প্রায় সব ছাত্র সংগঠন এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ডাকসুতে যারা প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করছে তাদের মধ্যে রয়েছে, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মুক্তি জোট, জাতীয় ছাত্র সমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে। হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন পূর্ণ প্যানেল দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের সংখ্যা মোট ১৮টি। ১৩টি ছাত্রদের, ৫টি ছাত্রীদের। এই হলগুলোর ২৪ শতাংশ পদে (পদ সংখ্যা ৫৬টি) কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। এই পদগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের চাপ দিয়ে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন কোনো জাতীয় নির্বাচন না হলেও জাতীয় রাজনীতিতে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সঙ্গতকারণে, এই নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, ও নিরপেক্ষ হয়, সেটাই সবার একান্ত প্রত্যাশা। নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক হলেই যে নির্বাচন সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই এর প্রমাণ বহন করে।
সবাই চায় ডাকসু নির্বাচন যেন ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো না হয়। ওই নির্বাচন দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ ব্যাপারে সাধারণ অভিমত এই যে, ৩০ ডিসেম্বরে আসলে কোনো নির্বাচনই হয়নি। তার আগের রাতেই নির্বাচন হয়ে গেছে। রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ক্ষমতাসীন দলের বিজয় নিশ্চিত করা হয়েছে। পরের দিন ভোটাররা অধিকাংশই ভোট দিতে পারেনি। আগের নির্বাচনের মত এ নির্বাচনেও তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। জোর করে তাদের ভোটাধিকার ছিনতাই করা হয়েছে। আগের রাতেই যে ভোট হয়ে যায়, সেটা সিইসি’র সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়। ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে কালচার গড়ে উঠেছে, তা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই শুভকর নয়। আমরা লক্ষ্য করছি, ভোট দেয়ার ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে সেটা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন ট্রেডবডির যেসব নির্বাচন হয়েছে বা হচ্ছে তাতেও এ প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এহেন প্রেক্ষাপটে ডাকসুর আজকের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্ববহ। জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচনে যে ‘ঐতিহ্য’ দাঁড়িয়ে গেছে, তা ডাকসু নির্বাচনে অনুসৃত হলে, আমাদের আশাবাদী হওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না। পক্ষান্তরে এ নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠ,ু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর একটা পথ বেরিয়ে আসবে। একটি ভালো, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রলীগ ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কিছু কমন দাবি ছিল; যেমন ভোট কেন্দ্র স্থানান্তর, ভোটের সময় বাড়ানো, আচরণবিধি লংঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি-কোনো কিছুই মানা হয়নি। সর্বোপরি নির্বাচনের খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই বিধিনিষেধ আরোপ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ কী আড়াল করতে চায়?
ডাকসু নির্বাচন কেমন হবে, তা দেখার জন্য গোটা জাতি অপেক্ষায় আছে। আজকের দিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য এক মহাপরীক্ষার দিন। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, সকল ভোটার নির্বিঘ্নে, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তবে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তো প্রশংসিত হবেই, সেইসঙ্গে এর ইতিবাচক প্রভাব অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল নির্বাচনে পড়বে। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনেও এর প্রভাব বিস্তৃত হবে। আর যদি এর ব্যতিক্রম হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিন্দা ও ধিক্কারই কুড়াবে না, এর ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা, ছাত্র রাজনীতি, বিশেষত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তরুণ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে। দেশে আজকে যারা রাজনীতি করছেন, তাদের প্রায় সবাই ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। গত ২৮ বছর এই রাজনীতিবিদ তৈরির সূতিকাগৃহগুলো বন্ধ ছিল। ফলে দেশ তরুণ ও সৃজনশীল বিপুল সংখ্যক নেতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এতে যে দেশের কত বড় ক্ষতি হয়েছে, সেটা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ রাখেনা। ডাকসু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একটি সূতিকাগৃহ খুলবে। পরবর্তীতে খুলবে অন্য সূতিকাগৃহগুলো। ছাত্র রাজনীতির অতীত ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে। কাজেই, ডাকসু নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতেই হবে। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের যথাযথ গুরুত্ব উপলদ্ধি করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকাকে নিরপেক্ষ রাখবে এবং সর্বোচ্চ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকসু

৩ নভেম্বর, ২০২১
১৪ মার্চ, ২০২০
২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন