পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ভারতের সঙ্গে চলমান সঙ্কট সমাধানে পাকিস্তানকে জোরালো সমর্থন প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন সেদেশ সফররত সউদী আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে বৈঠক করে এ আশ্বাস দেন। সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে মন্ত্রী পাকিস্তান সফর করছেন। মন্ত্রীর সফরসূচি ঘোষণাকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, সউদী দূত প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছ থেকে একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে পাকিস্তানে আসছেন। গত ১ মার্চ তার পাকিস্তান সফরের কথা ছিল।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সউদী মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো হয় যেখানে পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা ও আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি, বাণিজ্য উপদেষ্টা আবদুর রাজ্জাক দাউদ ও পররাষ্ট্র সচিব তাহমিনা জানজুয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, তার পাকিস্তান আগমনের পর, আল-জুবাইরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বাগত জানান শাহ মাহমুদ কুরেশি। দুই দেশের কর্মকর্তারা এই অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন, পাশাপাশি অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সাধারণ আগ্রহের বিষয়েও আলোচনা করেছেন। গতকালের বৈঠকে সউদী মন্ত্রী ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পক্ষে মন্ত্রী কেরেশিকে পূর্ণাঙ্গ ও জোরালো সমর্থন প্রদানের আশ্বাস দেন।
গত মাসে, দখলিত কাশ্মিরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় সেনাদের হত্যার পর ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করে বোমা হামলা করে জয়েশ-ই মোহাম্মদ এর ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেবার দাবি করে। এদিন পাকিস্তানে অনুপ্রবেশকারী দুটি ভারতীয় বিমান পাকিস্তান বিধ্বস্ত করে এবং একজন পাইলটকে বন্দী করা হয়। এই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছে এবং ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়। হাইকমিশনার গতকাল নতুন দিল্লিতে ফিরে গেছেন।
এদিকে গত বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাসে অবদান রাখায় সউদী আরবসহ অন্যান্য দেশকে ধন্যবাদ জানান।
এফ-১৬ ইস্যু গ্রহণে মার্কিন অস্বীকৃতি
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভারতের সাথে যুদ্ধে এফ-১৬ ব্যবহারের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেছে যে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী আমরা এটা সাধারণের মাঝে প্রকাশ করতে পারি না।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো বলেন, ‘আমরা ওই প্রতিবেদনগুলো দেখেছি এবং এ ইস্যুটি খুব নিবিড়ভাবে অনুসরণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো কিছুই নিশ্চিত করতে পারছি না। তবে নীতিমালাজনিত কারণে মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কিংবা যোগাযোগগত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয় নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে পারি না। আমরা এটি পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। এর বেশি কিছু আমি আর বলতে চাই না।’
বুধবার নিউইয়র্কে টাইমস সাংবাদিক মারিয়া আবী-হাবিব টুইটের একটি সংকলন প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ভারতের চাপাচাপি সত্তে¡ও পাকিস্তান আমেরিকার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ -১৬ বিক্রয় চুক্তির লঙ্ঘন করেনি। যদিও তারা গত সপ্তাহে ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সেগুলো ব্যবহার করে।
২৭ ফেব্রæয়ারি পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘোষণা করেছিল যে, পাকিস্তানি বিমানের পশ্চাদ্ধাবন করার চেষ্টা করে পাকিস্তানি বিমান দুটি ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, পিএএফ দখলিত কাশ্মীরে প্রবেশ করার জন্য একটি এফ -১৬ অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
নয়াদিল্লি জোর দিয়ে বলেছিল যে, ভারতের বিরুদ্ধে এফ-১৬ এর ব্যবহার করে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা বিক্রয় চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। জঙ্গি বিমানগুলি শুধুমাত্র সন্ত্রাস বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করেছিল।
তবে, নিউইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক সংবাদদাতা আবী-হাবিব ব্যাখ্যা করেছেন যে, পাকিস্তানীরা গুলি করার জন্য এফ-১৬ ব্যবহার করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার বিক্রয় চুক্তির লঙ্ঘন করেনি। (পিএএফ অবশ্য জানায় যে, তারা এফ-১৬ ব্যবহার করেনি।) তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যদি পাকিস্তান একটি ভারতীয় মিগকে গুলি করার জন্য একটি এফ-১৬ ব্যবহার করে তবে সেটি বিক্রয় চুক্তি লঙ্ঘন করেনি।
‘তারা বলছে, ভারত যদি দ্বিতীয় দফা পাকিস্তানে প্রবেশ করে এবং পাকিস্তান এফ-১৬ বিমানকে তাদের দেশকে নিরাপদ করার জন্য ব্যবহার করে তবে চুক্তিটি লঙ্ঘন করা হয়নি। কিন্তু, যদি পাকিস্তান প্রথমে ভারতকে আক্রমণ করার জন্য একটি এফ-১৬ ব্যবহার করে তবে চুক্তিটি লঙ্ঘন করা হয়।’
অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আবী-হাবিব ভারতীয় বিমান বাহিনীর দাবির উপর একটি প্রশ্ন তুলে ধরেন যে, দিল্লিতে প্রদর্শিত এআইএম-১২০ ক্ষেপণাস্ত্রটি বালাকোট ঘটনায় এফ-১৬ এর ব্যবহারের প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা এখনও বিশ্বাসের যথাযথ কারণ আছে বলে মনে করেন না যে, ভারত এফ-১৬ গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যেমন ভারতীয় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
আবী-হাবিব উল্লেখ করেছিলেন যে, ভারতের সাথে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহের ঘটনাগুলির ভারতীয় অবস্থানকে সমর্থন করে না। তিনি মার্কিন স্বার্থপরতা ‘খুব মজার’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ে মিস্টার প্যালাদিনো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক সশস্ত্র প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ‘উচ্চস্তরের’ কিন্তু ‘শান্ত’ কূটনীতিতে নিয়োজিত।
‘আমরা উভয় পক্ষকে এই পরিস্থিতি শান্ত রাখার পদক্ষেপ নিতে বলি এবং এটি সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, অধিকতর সামরিক কার্যকলাপ পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে তুলবে’।
তিনি গত সপ্তাহে উল্লেখ করেছেন যে, পররাষ্ট্র সচিব মাইকেল পম্পেও উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সরাসরি উত্তেজনা হ্রাসে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করেছিলেন’। তিনি কথা বলেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে। সূত্র : ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।