Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদী পুনরুদ্ধারে ডিসিদের ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:১০ এএম

নদ-নদীর উপর অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদে দেশের সব জেলা প্রশাসকদেরকে প্রয়োজনীয় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ জারি করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়। গত ফেব্রুয়ারীর শুরু থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের অভিযানে চার দফায় বুড়িগঙ্গা ও বালুনদী দখল করে নির্মিত প্রায় ১৭০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অভিযানে এসব নদীর উপর অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদের খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এসব উচ্ছেদ এবং পুর্নদখলের ঘটনা এক ধরনের ইঁদুর বেড়াল খেলায় পরিনত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ,পানিসম্পদ, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের নিয়ামক উৎস হিসেবে দেশের নদীগুলো অবিচ্ছেদ্য ও অন্যতম জাতীয় সম্পদ। দখল ও দূষণ থেকে নদীগুলোকে রক্ষা করতে না পারলে দেশের অন্য সব প্রাকৃতিক-অর্থনৈতিক সম্পদ ও সম্ভাবনা কোনো কাজে আসবে না। এ কারণেই নদী দখল ও দূষণমুক্ত করে নাব্য ফিরিয়ে আনা এখন অন্যতম গণদাবীতে পরিনত হয়েছে। রাষ্ট্র এবং আদালত এই লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করলেও বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু প্রায় প্রতিদিনই নদীর নতুন এলাকা দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে। বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বিভিন্ন সময়ে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করার লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে দখল ও দূষণের শিকার হওয়া নদীগুলোকেও সমান গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে দখলমুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ অপরিহার্য।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখলমুক্ত করতে সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে এবং কখনো কখনো আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তবে উচ্ছেদকৃত ভ’মি পুনরায় বেদখল হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং উদ্ধারকৃত জমির পরিকল্পিত উন্নয়ন ও সংরক্ষণে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এহেন বাস্তবতায় গতমাসে হাইকোর্টের এক বিশেষ নির্দেশনামূলক রায়ে নদনদী সুরক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি সুনির্দ্দিষ্ট গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। নদীকে একটি আইনগত জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে নদনদীর আইনগত অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের আইনের সংশোধন করে নদী কমিশনের ক্ষমতাবৃদ্ধির আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেই সাথে দেশের যে স্থানে নদী দখলের শিকার হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দখলদারদের তালিকা তৈরী করে জনসম্মুখে প্রকাশ এবং সব নদী, খালবিল, জলাশয়ের একটি ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরীরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের এসব সুনির্দ্দিষ্ট নির্দেশনার পর ইতিমধ্যে মাসাধিককাল পার হয়ে গেলেও দেশের কোনো জেলা প্রশাসক ও নগর কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা নদী দখলকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ বা আদালতে হস্তান্তর করেছে বলে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। নদী দখলমুক্ত করার আগে অবশ্যই দখলদারদের নামের তালিকা প্রকাশ করে নিজ নিজ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নোটিশ জারি করা আবশ্যক। আদালতের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা ও গাইডলাইন জারি করার পরও সংশ্লিষ্ট কেউ দখলবাজদের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি। এখন নদী নদ-থেকে দখল উচ্ছেদে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় দেশের সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি যে নির্দেশনা জারি করল তা কিভাবে, কতটা বাস্তবায়িত হয় তাই দেখার বিষয়।
বুড়িগঙ্গা দখলমুক্তির দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের লাইফলাইন কর্ণফুলী নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। দখল উচ্ছেদ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসকের মন্তব্য হচ্ছে, মৌসুমী দখলদার উচ্ছেদে মোবাইল কোর্টের অভিযানই যথেষ্ট হলেও নদীতীরে গড়ে ওঠা বড় বড় অবৈধ স্থাপনা ও ভারী শিল্প কারখানা উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আরো দৃঢ় পদক্ষেপ ও আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োজন। নদনদীর নিরাপত্তার সাথে দেশের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার মত বিষয়গুলো জড়িত। এ ক্ষেত্রে কোনো লুকোচুরি, ধামাচাপা বা ইঁদুর-বেড়াল খেলা বরদাশ্তযোগ্য নয়। নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আইনগ নির্দেশনা কঠোরভাবে প্রতিপালনে পিছ পা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই । তবে কোনো বৈধ ভ‚মি বা স্থাপনার মালিক যেন অহেতুক হয়রানিরর শিকার না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিনিধি হিসেবে সরকার বা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশীল দখলদার উচ্ছেদের প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ ও কঠোর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলার নদী, খাল-বিল, হাওরসহ প্রাকৃতিক জলাভূমি সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত করা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন