মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অকস্মাৎ এক কেলেঙ্কারিতে টলে উঠেছে কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। ক্রমেই ঘনিভূত হওয়া সংকটে জড়িয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। তার সরকারেরই সাবেক বিচার মন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল অভিযোগ করেছেন, তার কাজে বাধা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন অনেকেই ট্রুডোকে পদত্যাগ করতে বলছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেল অভিযোগ করেছেন যে, দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি একটি কোম্পানির সঙ্গে আদালতের বাইরে বোঝাপড়ার জন্য তাকে চাপ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন এতে সম্মত হননি তখন তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে সরিয়ে দেওয়ার। অবশেষে সেটাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রুডো ও তার কর্মকর্তারা মাসের পর মাস তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে কর্মসংস্থান হারাবে অনেক কানাডিয়ান। অপরদিকে দলও হারাবে গুরুত্বপূর্ণ ভোট।
জডি উইলসন রেবুল্ড নামে ওই সাবেক বিচার মন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে এই পদে আসীন হওয়া প্রথম ব্যক্তি। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচার মন্ত্রী আলাদা পদাধিকারী হলেও, কানাডায় একই ব্যক্তি দুই দায়িত্ব পালন করেন। জডি উইলসন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন পাশে ভূমিকা রাখেন। এর মধ্যে রয়েছে গাজাসেবন ও স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ করা। জানুয়ারিতে মন্ত্রীসভা রদবদলের সময় তাকে বিচার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে প্রবীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা অনেকের কাছেই তার পদাবনমন বলে মনে হয়েছিল।
যেই কোম্পানিকে নিয়ে এত আলোচনা সেই এসএনসি লাভালিন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রকৌশলী ও নির্মান খাতের কোম্পানি। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত লিবিয়ার সরকারী কর্মকর্তাদেরকে এই কোম্পানি বিভিন্ন প্রকল্প বাগিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি ছিলেন ক্ষমতায়। এসএনসি লাভালিন এ নিয়ে বিচারের মুখোমুখির বদলে আদালতের বাইরে সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চায়। কোম্পানিটি বলছে, তারা জড়িত অনেককে সরিয়ে দিয়েছে ও নিজেদের কর্মপন্থা পরিবর্তন করেছে।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, লিঙ্গ সমতা ও কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিরোধ নিরসনের অঙ্গীকার করে ২০১৫ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন ট্রুডো। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ফের নির্বাচনে লড়বেন তিনি। তিনি ও তার কর্মকর্তারা যে কারণে এসএনসি লাভালিনের পক্ষালম্বন করে অ্যাটর্নি জেনারেলকে চাপ দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে অবশ্য দুর্নীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে ভোটের রাজনীতির একটা সম্পর্ক রয়েছে। এসএনসি লাভালিন হলো কুইবেক প্রদেশ কেন্দ্রীক। এই কুইবেক প্রদেশ একটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য। ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি ক্ষমতায় আসা বা না আসার ক্ষেত্রে কুইবেক প্রদেশের জনসমর্থন থাকা বা না থাকার বড় ভূমিকা থাকে। কুইবেকে লিবারেলরা জিতলে দেশের পার্লামেন্টেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কুইবেকে হারলে, তারা বাজেভাবেই হেরে যায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি বিচারের মুখোমুখি হলে, অনেক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে যার দরুন লিবারেল পার্টির জনসমর্থনও কমবে।
যেই সময়টায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে চাপ দিচ্ছিলেন ট্রুডো, তখন কুইবেকে প্রাদেশিক নির্বাচন চলছিল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ওই নির্বাচনে কুইবেকের লিবারেল দলীয় প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী শেষ অবদি হেরেই যান। উইলসন বলছিলেন, এই নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেও তাকে বলা হয়েছে এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিতে।
ট্রুডো কোনো বেআইনি কিছু করেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, শুধু মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষা করতেই তিনি চাপ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেলকে। তবে তিনি বলেছেন, উইলসন যেভাবে পুরো ঘটনার রঙ দিয়েছেন, তার সঙ্গে তিনি একমত নন। তার আরও দাবি, তার কর্মকর্তারা নিয়মনীতি মেনেই অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অবশ্য উইলসনও বলেছেন যে, এর দরুন কোনো আইন ভঙ্গ হয়নি বলে তার বিশ্বাস, তবে প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের আচরণ যথাযথ ছিল না।
ইতিমধ্যেই ট্রুডোর দীর্ঘদিনের বন্ধু ও মুখ্যসচিব জেরাল্ড বাটস পদত্যাগ করেছেন। অনেকে অনুমান করছেন, উইলসন আরও যেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তারাও পদত্যাগ করতে পারেন। কানাডার এথিকস কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করছেন। তিনি পরখ করে দেখবেন স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত কোনো নিয়মনীতি লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা। বিরোধী দল কনজারভেটিভ দলের প্রধান অ্যান্ড্রূ শির ইতিমধ্যে ট্রুডোকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ‘নৈতিক কর্তৃত্ব’ ট্রুডোর আর নাই। ট্রুডোর পদত্যাগের সম্ভাবনা কম। কিন্তু আসছে নির্বাচনে এই ইস্যুটি গলার কাঁটা হয়ে থাকবে শাসক দলের জন্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।