Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনার বিবরণ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের ময়ুরপঙ্খী নামের উড়োজাহাজটি রোববার বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই এক অস্ত্রধারী যুবক বিমানের ক্রু ও যাত্রীদের জিম্মি করে তা ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। ক্রুদের বি”ক্ষণতায় শেষ পর্যন্ত বিমানটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হয়। ওই বিমান বন্দরে দু’ঘণ্টার চেষ্টায় এবং ৮ মিনিটের সেনা কমান্ডো অভিযানে ছিনতাই চেষ্টার অবসান ঘটে। বিমানে ১৪ জন ক্রু ও ১৩৪ জন যাত্রী ছিল। তারা সবাই নিরাপদে বিমান থেকে বেরিয়ে আসেন। সেনা কমান্ডো অভিযানে অস্ত্রধারী যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। ছিনতাই চেষ্টাকারী যুবকের নাম মাহদী বলে জানা গেছে। তার বয়স ২৫-২৬ বছর। এছাড়া তার সম্পর্কে আর তেমন কিছুই জানা যায়নি। ছিনতাই চেষ্টার অবসানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো তাৎক্ষণিকভাবে যে আয়োজন করে তা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। বিমান ও বিমান বন্দরের নিরাপত্তা এবং যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে বের করে আনা, অভিযানের প্রস্তুুতি ও সফলভাবে তা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে র‌্যাব-পুলিশ, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস সর্বোপরি সেনা কমান্ডোরা যে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ ও ভূমিকা পালন করেন তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে কোনোরূপ অঘটন ছাড়াই ছিনতাই চেষ্টার অবসান ঘটেছে। এটা অবশ্যই একটি স্বস্তির ব্যাপার।
এই সফলতার সঙ্গে কিছু প্রশ্নও সামনে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রশ্নগুলো নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা হচ্ছে। প্রথমেই বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে কথা উঠেছে। বিমান বন্দরের নিরাপত্তা কি এতই ঠুনকো যে, একজন অস্ত্রধারী বিনা চ্যালেঞ্জে বিমানে উঠতে পারে? বিমানে কোনো যাত্রী ওঠানোর আগে নানা পর্যায়ে তল্লাশি করার ব্যবস্থা আছে। যাত্রীর দেহ থেকে মালামাল-সব কিছুই তল্লাশি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার তীক্ষ্ নজরদারিও বহাল আছে। যেখানে যাত্রী দেয়াশলাই কিংবা গ্যাস লাইট পর্যন্ত নিতে পারেনা সেখানে অস্ত্র নিয়ে একজন যাত্রী কি করে বিমানে উঠতে পারলো? সঙ্গত প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ওঠে, তাহলে নিরাপত্তা তল্লাশি কি নিতান্তই লোক দেখানো? যেসব সংস্থার সদস্যদের নজরদারি করার কথা, তারাও কি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া খুবই জরুরি। কারণ, এর সঙ্গে যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতোপূর্বে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্ন উঠেছিল। নিরাপত্তায় বড় ধরনের ত্রুটি ও ঘাটতির অভিযোগে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল ব্রিটেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোরও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। এ বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনকে দায়িত্ব দেয়ার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষীয় দাবি। এই প্রেক্ষাপটেই বিমানে ছিনতাই চেষ্টার ঘটলো। অত:পর নিরাপত্তা নিয়ে সেই আগের প্রশ্নই জোরদার হতে পারে। এটা বিমান বন্দর ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও অসামর্থের প্রমাণই তুলে ধরবে না, দেশের ভাবমার্যাদাও অবনমিত করবে। কাজেই, কিভাবে একজন অস্ত্রধারী বিমানে উঠতে পারলো তার অনুপুংখ তদন্ত অবশ্যই হতে হবে। কোথায় এবং কাদের দায়িত্বহীনতা বা অবহেলায় এটা সম্ভবপর হলো, সেটা খুঁজে বের করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছিনতাই চেষ্টাকারী যুবক কেন বা কি উদ্দেশ্যে বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছিল, তা জানা যায়নি। সংবাদ মাধ্যমে শুধু এই তথ্যটুকু এসেছে, সে নাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। সে তার স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিল। যে কারণেই হোক, সেটা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সেনা কমান্ডো অভিযানে তার আহত ও পরে মৃত্যু হওয়ার কারণে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হলো না। প্রশ্ন উঠেছে, তাকে অক্ষত অবস্থায় আটক করা সম্ভব ছিল কিনা। ঘটনার বিবরণ থেকে বুঝা যায়, বিমান থেকে একে একে যাত্রী ও ক্রুরা সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে তারা কোনো বাধা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েননি। এমতাবস্থায়, অস্ত্রধারী যুবককে অক্ষত অবস্থায় আটক করা হয়তো সম্ভব ছিল। মনে হয়, অভিযানকারীরা কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। এখন জানা যাচ্ছে, যুবকটির হাতে যে অস্ত্র ছিল, তা আসলে একটি খেলনা পিস্তল। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবার রহমান এই তথ্য দিয়েছেন। বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী এ তথ্যই নিশ্চিত করেছেন। বলা বাহুল্য, তাকে জীবিত রাখা ও সে অবস্থায় আটক করা সম্ভব হলে বিভিন্ন মহলে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তার জবাব হয়তো পাওয়া যেতো। প্রশংসার্হ অভিযান ও তার সাফল্যের পরও এই অপ্রাপ্তিটা থেকেই গেল। হয়তো অনেক কিছুই আর কখনোই জানা যাবে না।



 

Show all comments
  • md rayhan khan ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৭:২৫ পিএম says : 0
    Very sad
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন