Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখল-দূষণ রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নদী দখল ও দূষণ নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। দেখা গেছে, দখল ও দূষণ কোনোটাই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়নি। কিছুদিন দখলমুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে আবার দখল হয়ে গেছে। শুধু নদী নয়, রেলের শত শত একর জমি এবং সড়ক দখল হয়ে গেলেও উচ্ছেদ করা যায়নি। দখলদাররা এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের দখলদারিত্ব নিবৃত করা যায় নি। এ প্রেক্ষিতে, গত বৃহস্পতিবার এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সচিবালয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীসহ ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলোর দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরী সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু এবং টঙ্গী খাল দূষণের উৎস শিল্পবর্জ্য রি-সাইকেল করতে হবে। নদী তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ, ইকো পার্ক নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে। মাস্টার প্ল্যানে চারটি পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এক বছর মেয়াদে রয়েছে ক্রাশ প্রোগ্রাম, দুই বছরের স্বল্প মেয়াদ, ৫ বছরে মধ্য মেয়াদ এবং ১০ বছরে দীর্ঘ মেয়াদ। এতে নদী দখল রোধে করণীয়, নদীর পানি দূষণ রোধে করণীয় ও নাব্যতা বৃদ্ধিতে করণীয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রী সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই প্ল্যান বাস্তবায়নের তাকিদ দেন। সভায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের নদী, রেল, সড়কের জায়গা অবৈধ দখল এবং উচ্ছেদের বিষয়টি বহুবছর ধরেই ইঁদুর-বেড়াল খেলায় পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে নিজ থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ খুব কমই নিতে দেখা যায়। পরিবেশবিদদের আন্দোলন ও পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলেই কেবল তাদের কিছুটা টনক নড়ে। তখন বেশ হাকডাক দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। উচ্ছেদও করা হয়, তবে তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। পুনরায় দখল হয়ে যায়। এই উচ্ছেদ-দখল খেলা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। গত মাসে বেশ ঘটা করে বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী কিছু অংশে অবৈধ দখল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করে বিরতি দিয়েছে। আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও যারা দখলদার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে পুনরায় অবৈধ দখলদাররা ধীরে ধীরে দখল করতে শুরু করে। অবৈধ দখলদারদের সাময়িক উচ্ছেদ করা হলেও, নদী দূষণ রোধে কোনো পদক্ষেপই নিতে দেখা যায় না। এক রাজধানীর কথাই যদি ধরা হয় তবে দেখা যাবে, এর চারপাশের নদ-নদীগুলো পুরো শহরের ময়লা-আবর্জনা, শিল্পর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়ে আছে। শহরের সব দূষিত তরল, কেমিক্যাল বর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জ্য, স্যুয়ারেজ লাইন গিয়ে নদ-নদীতে পড়ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য, কয়েক হাজার লিটার কেমিক্যাল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এসব বর্জ্যরে সিংহভাগই রাজধানীর আশপাশের নদ-নদীতে গিয়ে পড়ছে। বলা যায়, রাজধানীর চারপাশে একসময় যে সব ¯্রােতস্বিনী নদী ছিল, সেগুলো এখন বর্জ্যরে আধারে পরিণত হয়েছে। দুঃখের বিষয়, এসব বর্জরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কখনোই কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। যেসব শিল্পকারখানা এসব বর্জ্য নিঃসরণ করছে সেগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া বা পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিলের কোনো খবর পাওয়া যায় না। এই যে একদিকে অবৈধ দখল, অন্যদিকে দূষণÑএই দুইয়ের কারণে নদীগুলো মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এমনও দেখা যায়, যে জায়গায় একসময় নদী ছিল, সে জায়গায় বসতি গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ণ তো রয়েছেই। শুধু যে রাজধানী কেন্দ্রিক এই দখল-দূষণ চলছে তা নয়, অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও একইচিত্র দেখা যাচ্ছে। এই চিত্র দেশবাসী আর কতকাল দেখবে, তাই দেখার বিষয়।
রাজধানীর খাল, বিল, ঝিল দখল ও বিলুপ্ত হওয়া এবং নদী দূষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এগুলো উদ্ধার ও সংরক্ষণে তাকিদ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন। তবে তার একার পক্ষে এসব দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী দখলদারদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এলজিআরডি মন্ত্রীও এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা মনে করি, নদ-নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রলায়ের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সকলে মিলে উদ্যোগ নিলে স্বল্প সময়ে দখল-দূষণ অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। লোক দেখানো উচ্ছেদ-উচ্ছেদ খেলা দিয়ে দখল-দূষণ বন্ধ করা যাবে না। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্রের সম্পদ যারাই দখল করে আছে বা দখল করছে এবং তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। শুধু উচ্ছেদ করলেই চলবে না, উচ্ছেদকৃত জায়গা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিল্পকারখানা পরিশোধন ছাড়া বিষাক্ত কেমিক্যাল বর্জ্য নদীতে ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দখল

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন