মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০১৪ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের ১৩ বছর পূর্ণ হয়ে ১৪ বছরে পড়ে সে যুদ্ধ। তখন তা ভিয়েতনামের পর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত হয়। তার পাঁচ বছর পর একটি অজনপ্রিয় যুদ্ধ থেকে আরেকটি আমেরিকান প্রত্যাহারের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সাম্প্রতিক সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে দুটি যুদ্ধের মধ্যে আবারো তুলনার চল দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা তার বহু নেতাকেই আফগানিস্তানে প্রেরণ করে।
কাবুলে দু’বার আমেরিকার শীর্ষ ক‚টনীতিকের দায়িত্বে থাকা বর্তমানে প্রিন্সটনে আবাসিক কূটনীতিক রায়ান ক্রোকার বলেন, এটা আমাকে প্যারিসে ভিয়েতনাম শান্তি আলোচনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই আলোচনার টেবিলে বসার মাধ্যমে আমরা আসলে উত্তর ভিয়েতনামি ও ভিয়েতকংদের বলেছিলাম যে, আমরা আত্মসমর্পণ করছি, এখানে এসেছি শুধু তার শর্তগুলো প্রণয়নের জন্য।
তিনি প্যারিস আলোচনা যা ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকার প্রত্যাহারের পথ রচনা করে, তার সাথে কাতারের দোহায় আফগানিস্তান বিষয়ক মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ ও তালিবানের মধ্যকার ছয়দিনের আলোচনার তুলনা করেন। ২৬ জানুয়ারি এই প্রাথমিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে আলোচনা শেষ হয় যে সন্ত্রাসীরা পুনরায় আমেরিকায় হামলা করবে না বলে তালিবানের নিশ্চয়তার বিনিময়ে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। ক্রোকার বলেন, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু দেখছি না। আমাদের এখানে ব্যাপক সুবিধা নেই। মার্কিন প্রত্যাহারের চেয়ে অন্য আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।
অনেক বছরই এ দু’যুদ্ধের মধ্যে তুলনা করার ব্যাপারটি পছন্দসই ছিল না। কারণ, এ দুয়ের মধ্যে ছিল ব্যাপক পার্থক্য। স্নায়ু যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সে সময় পরাশক্তি দুটি ছিল পরস্পরের বৈরী। আর ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের মধ্যে সংস্কৃতি, ভূগোল ও ইতিহাসের দিক দিয়ে রয়েছে নাটকীয় পার্থক্য। এমনকি যুদ্ধের মাত্রায়ও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৫ লাখ আমেরিকান সৈন্য সেখানে গিয়েছিল। আফগানিস্তানে এসেছিল সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার। ভিয়েতনামে ৫৮ হাজার আমেরিকান সৈন্য মারা গিয়েছিল, আফগানিস্তানে মারা গেছে ৩ হাজারের কিছু কম।
তা সত্তে¡ও আফফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ও সামরিক নেতা এই সামঞ্জস্য বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক কমান্ডার ও তারপর ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, বর্তমানে স্ট্যানফোর্ডে অধ্যাপক কার্ল এইকেনবেরি বলেন, উভয় স্থানেই স্বাগতিক দেশের সেনাবাহিনী, যাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রশিক্ষিত, নতুন করে মনোবল হারানোর শিকার হয় এ কারণে যে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে কিনা সে সম্পর্কে তাদের সন্দেহ ছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে শুধু বেরিয়ে যেতে চায় এবং সেখানে যা অর্জিত হয়েছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে, তা বিসর্জন দিতে চায় বলে যারা চিন্তিত, ক্রোকার তাদের একজন। তারা মনে করেন যে তাড়াহুড়ো করে করা চুক্তি তালিবানকে দেশটিকে কব্জা করার অবস্থানে নিয়ে আসবে যেমনটি ঘটেছিল ভিয়েতনামে যখন মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হল। উত্তর ভিয়েতনামিরা তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি।
ক্রোকার বলেন, আমি মনে করি যে আমরা ও আফগানরা অধিকাংশ অপদার্থ ও বোকা তালিবান যোদ্ধাদের হত্যা করেছি। ১৮ বছর পর এখন যারা তালিবানে আছে তারা দুর্ধর্ষ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তারা কোনো ফলপ্রসূ চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আমি মনে করি না। তরা শুধু সমঝোতার আলোচনা করবে।
তবে আফগানিস্তানে কাজ করা সব সাম্প্রতিক রাষ্ট্রদূতই ভিয়েতনামের সাথে আফগানিস্তানকে তুলনা করতে চান না। যেমন ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আফগানিস্তানে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে ওয়াশিংটনে আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো জেমস কানিংহ্যাম বলেন, আমি জানি, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে আসবে এ ভয় যেমন এখানে আছে তেমনি আফগানিদেরও আছে । কিছু লোক থাকতে পারে যারা এটা চায়। কিন্তু তিনি বলেন, এ অনুমান সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমেরিকায় আফগানদের জন্যও তারা যা করার চেষ্টা করছে তার প্রতি বিপুল সহানভ‚তি রয়েছে। এটা দ্রুত মার্কিন প্রত্যাহারের সহায়ক নয় এবং আমি আশা করি তা ঘটবে না।
কানিংহ্যাম বিশ্বাস করেন না যে ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে সরে আসবে যদিও ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের বহু সমর্থক তা চান। তিনি বলেন, এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে প্রেসিডেন্ট আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পছন্দ করবেন, যেমনটি তার পূর্বসূরি করেছিলেন। তবে বাস্তবতা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিত আলাদা। বহু বিশেষজ্ঞই আফগানিস্তানে মার্কিন অভিজ্ঞতায় ভিয়েতনামের শিক্ষা দেখতে পান। আফগানিস্তানে এক ক‚টনীতিক তা বলেছেন এভাবে যে ‘তুমি তোমার ভুলগুলো থেকে ভালো শিক্ষা নিয়েছ যাতে তুমি ঠিকভাবে তার পুনরাবৃত্তি করতে পার।’
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে প্রতিরক্ষা বিভাগে থাকা একজন কর্মকর্তা বর্তমানে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এ স্কলার অ্যান্থনি কর্ডসম্যান সম্প্রতি দুই যুদ্ধের মধ্যকার সমান্তরালতা বর্ণনা করে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি স্মরণ করেন যুদ্ধের শেষদিকে আমরা নিহতদের সংখ্যা, অনুপস্থিতদের সংখ্যা, ভৌতিক সৈন্যদের সংখ্যা কীভাবে গোপন রেখেছিলাম যেমনটি এখন করছে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণির সরকার।
কর্ডসম্যান বলেন, ভিয়েতনামে শীর্ষ নেতৃত্বের খোলসের নীচে বহু গভীর বিভক্তি ছিল। আফগানিস্তানে ক্ষমতার লড়াই আছে। অর্থনীতি মারাত্মক রকম দুর্বল, যুদ্ধ ও সাহায্য ভিত্তিক। যখন সে দুর্বলতা কমেছে, তখন অর্থনীতি ও রাজনৈতিক কাঠামোকে একীভ‚ত করার কমই কারণ দেখা গেছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী যখন ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম ত্যাগ করে, কিছু দিক দিয়ে আফগানিস্তান তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আফগান্তিানে প্রধান মুদ্রা আয়কারী হচ্ছে মাদক খাত। কর্ডসম্যান বলেন, পক্ষান্তরে ভিয়েতনামের অর্থনীতি ছিল বহুমুখী। এমনকি আফগান সামরিক বাহিনীর ইউনিটগুলোও দুর্বল। কিন্তু ভিয়েতনামে কিছু ভালো সেনা ইউনিট ছিল।
‘ভিয়েতনাম, অ্যান এপিক ট্র্যাজেডি, ১৯৪৫-১৯৭৫’ গ্রন্থের লেখক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ম্যাক্স হেস্টিংস বলেন, তিনি ভিয়েতনাম ও আফগাস্তিানের মধ্যে বহু সাদৃশ্য দেখেন। পাশ্চাত্য সরকার ও কমান্ডাররা এখনো এ বার্তা পেয়েছেন বলে মনে হয় না যে যুদ্ধে জয়লাভ অর্থহীন যদি না আমরা স্থানীয় সমাজগুলোর সাথে প্রকৃত সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক অর্জন করতে না পারি।
হেস্টিংস বলেন, ভিয়েতনামের মত আফগানিস্তানের অধিকাংশ লোকের দৈনন্দিন জীবনও কে জয়ী হতে পারে তাকে গ্রহণ, সমঝোতা ও বিচারের অনিঃশেষ ধারাবাহিক বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের অধিকাংশই এখন তালিবানের সাথে সম্পর্ক রাখে। তা তারা তাদের পছন্দ করে বলেই শুধু নয়, তার কারণ তারা আমাদের চেয়ে তাদের চারপাশে দীর্ঘদিন ধরে আছে বলে।
একিনবেরি বলেন যে আফগানিস্তানে মার্কিন প্রত্যাহারকে ভিয়েতনামের সাথে তুলনা না করে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত প্রত্যাহারের সাথে তুলনা করাই ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের মত সোভিয়েতরাও তাদের ক্ষমতা ও মর্যাদার অবনতির সময়ে আর আফগানিস্তানের বোঝা ও দায় বহন করতে চায়নি। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও আফগান যুদ্ধ উভয়ই ছিল মূলত পছন্দের যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সম্পদ ও শক্তির কারণে আমরা এ পছন্দ বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু উভয় পছন্দই ছিল খারাপ। (নিবন্ধকার নর্ড রডল্যান্ড দি টাইমসের কাবুল ব্যুরো প্রধান।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।