Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুদককে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভুক্তভোগীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এবার স্বয়ং উচ্চ আদালত দুদকের কর্মকান্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত বৃহস্পতিবার কোচিং সেন্টার সংক্রান্ত নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিটে শুনানিকালে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে স্কুল শিক্ষকদের (দুর্বল) দুর্নীতি অনুসন্ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে দুদুক। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আদালত দুদককে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ছোট দুর্নীতির আগে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য খাতে যে সব বড় ধরনের দুর্নীতি হয় এবং হচ্ছে, এসব নিয়ে দুদককে তৎপর হতে খুব কমই দেখা যায়। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। নামকাওয়াস্তে চিঠি দিয়ে দুদকে এসে সাক্ষাৎকার দিয়ে যেতে বলা হয়। দুদকের এ ধরনের কর্মকান্ড নিয়ে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজও বিভিন্ন সময়ে তীব্র ক্ষোভ করেছে।
দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও এর কর্মকান্ডে তা খুব কমই প্রতিফলিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি যেন কোথায় বাঁধা পড়ে আছে। অদৃশ্য এক শক্তির ইশারায় যেন এটি পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে বড় বড় দুর্নীতি হয় এবং হচ্ছে, সেখানেই সে তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অনেক রাঘববোয়ালের কাছে ঘেঁষতেই পারে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, রাঘববোয়ালদের যত এড়িয়ে যাওয়া যায়, ততই যেন ভালো। শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক চিঠি দিয়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়। তারপর আর কোনো খোঁজ থাকে না। পত্র-পত্রিকায় তথ্য প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও দুদক তা দেখেও না দেখার ভান করে। এর বিপরীতে যেখানে ছোট-খাটো দুর্নীতি হয়, সেখানে প্রতিষ্ঠানটি তার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। তার এই একচোখা নীতির বিষয়টি এখন সর্বজনবিধিত। একজন সাধারণ মানুষও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে, দেশের কোন কোন খাতে এবং কোথায় কোথায় দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হয়। গত বছর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও যোগাযোগ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেখানে দুদককে হানা দিতে দেখা যায়নি। বাঁধ নির্মাণসহ নদ-নদী ড্রেজিংয়ে যে বড় বড় দুর্নীতি হয়, তা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে কাজের গতি ধীর হয়ে যাওয়া এবং সময়মতো শেষ না হওয়ার পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও দুর্নীতির কথা সবাই কম-বেশি জানে। এসব জায়গায় বড় বড় দুর্নীতির সাথে অনেকেই জড়িত। দেখা যাচ্ছে, দুদক এসব জায়গার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার ক্ষমতা ও সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। কেবল ছোট ছোট জায়গায় যেখানে তার হানা দিতে কষ্ট করতে হয় না, সেসব জায়গায় বাহাদুরী দেখাচ্ছে। অনেককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে এবং এ নিয়ে আদালতে জোর ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তাকে সব সময়ই অতি সক্রিয় দেখা যায়। একের পর এক মামলা করে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। দুর্নীতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, দল-মত নির্বিশেষে সকলের বিরুদ্ধেই দুদকের সোচ্চার হওয়া উচিত। ক্ষমতাসীন দলের কেউ যে দুর্নীতির সাথে জড়িত নন, দুদক কি হলফ করে তা বলতে পারবে? অথচ স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া হয়, ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার কাছাকাছি যারা থাকেন তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বেশি থাকে। ব্যাংকিং খাতে যে এত বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে এর সাথে জড়িতরা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন দল বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তি। অথচ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির জোরালো কোনো ভূমিকাই দেখা যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের দুদকের কার্যালয়ে ডেকে সাক্ষাৎকার নিয়েই কাজ শেষ করছে এবং কাউকে কাউকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণাও করেছে। দেশের অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়া মাদকের সঙ্গে অনেক রাঘববোয়াল জড়িত থাকলেও সেখানে দুদকের কোনো উপস্থিতিই নেই। পত্র-পত্রিকায় কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে মাদক সম্রাটদের আলিশান বাড়ির ছবি ছাপা হলেও দুদকের যেন সেদিকে নজর নেই। এসব বাড়ি কাদের তার কোনো খোঁজ নেয়ার খবর পাওয়া যায় না। উচ্চ আদালত যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তার অন্যতম কারণও উল্লেখিত বিভিন্ন খাতে সক্রিয় না হওয়া।
বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, কাজেই তাদের দুর্নীতিতে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বর্তমান সরকার দুর্নীতি প্রশ্রয় দেবে না। দুদককে প্রধানমন্ত্রীর এ মেসেজ বুঝতে হবে। তাকে তার মূল নীতি ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে যত বড় দুর্নীতিবাজ হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। চুনোপুটিদের ধরে মামলা করে কার্যকারিতা দেখানো বা বাহবা নেয়ার কোনো অর্থ হয় না। দুদককে বুঝতে হবে, তার কারণে দেশের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। দুদকের অহেতুক হয়রানির আশংকায় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বিমুখ হয়ে আছেন। দুদকের অপরিনামদর্শী আচরণ ও খবরদারির কারণে বেসরকারী আবাসনখাত কার্যত কলাপস হয়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে দুদকের লাগাম টেনে ধরা দরকার।



 

Show all comments
  • abid ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৫:৫৩ এএম says : 0
    Dudok is involve with every big crime even dudok take bribe people know that Dudok Chairman is a honest person but his 90% members are corrupt .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন