Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উদ্ধারকৃত জায়গা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

গত কয়েক দিন ধরে বুড়িগঙ্গা নদী দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) গত তিনদিনে অভিযান চালিয়ে বুলডোজার দিয়ে সবমিলিয়ে ৪৪৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এসব অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে, সাত, পাঁচ, তিন ও দোতালা ভবন, স’মিল, গোডাউন, প্লাস্টিক কারখানা এবং আধাপাকা ভবন। নদী ও নদীর তীর দখল করে এসব ভবন ও স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ের অভিযান শেষে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুনরায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে। বিআইডব্লিওটিএ-এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করতে তাদের এই উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এই অভিযানে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। নতুন করে কাউকে নদী দখল করতে দেয়া হবে না বলেও তিনি জানান। অভিযানের আগে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে। প্রথম পর্বের অভিযানে ৪৪৫টি উচ্ছেদ করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বুড়িগঙ্গাকে অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য পরিবেশবিদসহ সচেতন নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে। তাদের এ দাবীর প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিওটিএ-এর উচ্ছেদ অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই।
ঢাকার চার পাশের নদী অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ নতুন কিছু নয়। যুগের পর যুগ ধরে এই অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হতে চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উচ্চ আদালত অবৈধভাবে নদী দখল এবং উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারণের নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। গত ৩১ জানুয়ারি তুরাগ নদী দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবীতে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নদী রক্ষা কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ‘ডামি কমিশন’ বলে মন্তব্য করেন। প্রতিষ্ঠান দুটি কোনো অনিয়মের বিষয়ে শুধু প্রতিবেদন তৈরি ও সুপারিশ করতে পারে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন। এমনকি নদী দখল আর উচ্ছেদে কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন। উচ্চ আদালতের এ পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য যে নিরেট সত্য, তা বিগত বছরগুলোতে অবৈধভাবে দখল হওয়া নদীগুলো দখলমুক্ত না হওয়া থেকে বোঝা যায়। বলা বাহুল্য, অবৈধভাবে দখল হওয়া নদ-নদী দখলমুক্ত করার দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের, তাদের অকার্যকারিতার কারণে সচেতন মানুষকে নদী রক্ষার জন্য আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বই হচ্ছে, নদ-নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ঠিক রাখা এবং কেউ অবৈধভাবে দখল করলে তা দ্রুত অপসারণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। দুঃখের বিষয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে বাস্তবানুগ কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে মিডিয়া ডেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে নামকাওয়াস্তে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তারপর আর কোনো খবর থাকে না। উচ্ছেদকৃত জায়গা যে দখলমুক্ত করে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা দরকার তা তারা করেনি। দেখা গেছে, উচ্ছেদের পর পুনরায় উচ্ছেদকৃত জায়গা দখল হয়ে গেছে এবং আরও মহাসমারোহে দখলদারিত্ব চলেছে। বিগত বছরগুলোতে নদীতে দখল উচ্ছেদ এবং পুনর্দখল নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলে আসছে। এ থেকে পরিবেশবিদরা মনে করছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের সমঝোতা রয়েছে। তাদের এ ধারণা যে অমূলক নয়, তা উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল হয়ে যাওয়া থেকেই বুঝা যায়। ঢাকার চারপাশের নদ-নদী ও জলাশয় যে শুধু অবৈধ দখলদাররাই দখল করে তা নয়, সরকারি সংস্থাকেও দখল করতে দেখা যায়। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ উত্তরাস্থ ৬১৫ একর জলাশয়ের মধ্যে ৪০ একর ভরাট করে হাউজিং প্রকল্প নির্মাণ করছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রকল্প বাংলাদেশ পানি আইন, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান এবং পরিবেশ আইনের পরিপন্থী। এতে রাজধানীতে মারাত্মক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। অবৈধ দখলদারদের পাশাপাশি সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানও যদি জলাশয় ভরাট করা শুরু করে, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও অবৈধ দখলদাররা আরও উৎসাহী হয়ে উঠবে বলে নগরবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তখন পুনরায় এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
রাজধানীর চারপাশ ঘিরে যে নদ-নদী রয়েছে, তা প্রকৃতির এক অপার আনুকূল্য। এমন রাজধানী বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। অথচ দিন দিন অবৈধ দখল এবং দূষণে নদ-নদীগুলো মেরে ফেলা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতে যেখানে খনন করে কৃত্রিম খাল নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রকৃতির এই অপার দান আমরা রক্ষা করতে পারছি না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না। আমরা মনে করি, রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বোপরি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু লোক দেখানো উচ্ছেদ নয়, স্থায়ীভাবে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ দখলদার যতই প্রভাবশালী হোক, তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। বর্তমানে যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে, তা স্থায়ী করতে হবে। উচ্ছেদ করলেই হবে না, উচ্ছেদকৃত জায়গা যাতে পুনরায় দখল হয়ে না যায়, এজন্য তা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, নদ-নদী ও জলাশয় কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। তাদের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় সম্পদ যারাই দখল করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন