শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
রাষ্ট্রভাষা বাংলা ঘোষণার দাবিতে সারাদেশে যখন দূর্বার আন্দোলন শুরু হয় তখন মাগুরার শ্রীপুরেও ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অনেকে সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিষাট গ্রামের বাসিন্দা, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত ‘শ্রীপুর বাহিনী’র উপ-অধিনায়ক মোল্লা নবুয়ত আলী ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে মাগুরার শ্রীপুর এমসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বর্তমানে সরকারি) থেকে বহিষ্কার করেছিল। তিনি তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ৯ম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের নেতৃত্বে অন্যান্য ছাত্রদের সাথে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এ সময় উপজেলার নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’র দাবিতে ব্যাপক মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হতো। মিছিলে অংশ নেয়ার কারণে হামিদুজ্জামান এহিয়া ও সোহরাব হোসেনসহ অনেকের নামে মামলা হয়। তারা বেলুচ আর্মড ফোর্সের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছিলেন। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের পরে শ্রীপুর এমসি পাইলট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘মাতৃভাষা বাংলা’র কথা যাতে মনে করতে না পারে, সে জন্য সরকার সব সময় চেষ্টা করতো। আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় মোল্লা নবুয়ত আলীসহ এমসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়েল কয়েকজন ছাত্রকে সে সময় বিদ্যালয়ের শৃংঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি দেয়াসহ বহিস্কার করা হয়। এর ফলে তিনি স্বাভাবিক লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হন। সে সময় লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপায়ান্তর না পেয়ে তিনি বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নাড়–য়া ও মাগুরার একটি স্কুলে ভর্তির জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরবর্তিতে তিনি মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ পাশ করেন। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ তাকে এখনও তাড়িত করে।
মোল্লা নবুয়ত আলী ১৯৩৯ সালে শ্রীপুর উপজেলার বরিষাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৃত মোল্যা আজগর হোসেন ও মাতার নাম মৃত ডালিমন নেছা বিবি। মূলত সে সময় শ্রীপুর সদরের এমসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক নামে মাত্র দু’টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল। এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ওই সময় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন করেন। তখন এমসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসে বিভিন্ন সময় বাংলা ও উর্দু ভাষার পক্ষে বিপক্ষে তক-বিতর্ক চলত। সেই সাথে চলতো মিছিল মিটিং। এরই এক পর্যায়ে পুলিশী বাঁধা উপেক্ষা করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার দাবিতে তাদের স্কুলের একদল ছাত্র ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সেখানে তিনিও ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাংলা ভাষার দাবিতে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে। পরবর্তিতে তাদের আন্দোলন সফল হয়। তারা ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পান। মূলত, এ আন্দোলনে বিজয়ের ফলে তাদের সাহস বেড়ে যায়। তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তিতে তারা বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘শ্রীপুর বাহিনী’র ডেপুটি কামান্ডার হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র জীবন থেকেই দেশের জন্য আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। এ জন্য তিনি বহুবার জেল খেটেছেন। তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের জেলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেনছ। তিনি ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১১ দফার দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে তাকে মুক্ত করতে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেন। এই বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিষাট গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।