Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের মানুষ সুখকর অবস্থায় নেই

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১১ এএম

বাংলাদেশের মানুষের সুখ দিন দিন কমছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৮’ অনুযায়ী তাই দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫। ২০১৭ সালে ছিল ১১০। এ হিসেবে বাংলাদেশ ৫ ধাপ নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ দেশের মানুষ দিন দিন অসুখী হচ্ছে। সুখী হওয়ার সংজ্ঞা কী তা একেবারে নিরেটভাবে দেয়া সম্ভব নয়। এর সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ধন-সম্পদের অভাব না থাকলেও তাদের মনে সুখ নেই। আবার এমন অনেকে আছেন, যারা দুবেলা দুমুঠো পেটপুরে খেতে পারলেই নিজেকে সুখী মনে করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই এই দলে। উন্নত বিশ্বের মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। তাদের খানা-খাদ্যের অভাব না থাকলেও অনেকেই অসুখী মনে করে। খাদ্যাভাব কাটিয়ে তারা আরও অনেক কিছুই চায়। অর্থনীতির ভাষায়, মানুষের চাহিদার শেষ নেই। একটির চাহিদা মিটে গেলে আরেকটির চাহিদা এসে সামনে হাজির হয়। উন্নত বিশ্বের জনগণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বেশি কাজ করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে আমরা সবাই দরিদ্রসীমা অতিক্রম করতে পারিনি, সেখানে দরিদ্র মানুষের মূল চাহিদাই হচ্ছে, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা। একটি দিন এই চাহিদা মিটাতে পারলে, পরের দিনও এ চাহিদাই মনেপ্রাণে থাকে। যেহেতু মৌলিক চাহিদা মিটাতেই তাদের হিমশিম খেতে হয়, তাই অন্য চাহিদা মেটানোর দিকে তাদের দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ নেই। যাদেরকে নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়, ইচ্ছা থাকলেও বাড়তি চাহিদা মেটানোর সুযোগ তাদের থাকে না। এ নিয়ে আফসোস থাকলেও কিছু করার নেই। মনে আক্ষেপ ও হতাশা নিয়েই জীবনযাপন করতে হয়। এখানেই অসুখী হওয়ার বিষয়টি লুকিয়ে থাকে। মোটা দাগে বাংলাদেশের মানুষের অসুখী হওয়ার এটি অন্যতম কারণ এবং দিনের পর দিন তাদের এ অবস্থার মধ্যে থাকা বা তার চেয়ে নিচে নেমে যাওয়াই অসুখী দেশের তালিকায় অবনমন ঘটছে।
দুই.
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ডেনমার্ক, আর সবচেয়ে অসুখী দেশ বুরুন্ডি। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১০। সংস্থাটি তিন বছর ধরে ১৫৬টি দেশে জরিপ চালিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতিটি দেশের এক হাজার নাগরিকের কাছে প্রতিবছর তাদের জীবন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এবং শূন্য থেকে দশের মধ্যে একটি পয়েন্ট তালিকায় নম্বর দেয়ার জন্য বলা হয়। সুখের এ মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, দাতব্য সেবা এবং দুর্নীতিহীনতা। জরিপে দেখানো হয়েছে, যেসব দেশে বৈষম্য বা ভেদাভেদ কম, সে দেশের মানুষ বেশি আনন্দে থাকে। বিশেষ করে যেসব দেশে সামাজিক সহায়তা বেশি, বিপদে সমাজ বা রাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া যায়, সেসব দেশের নাগরিকরাই বেশি সুখী। তবে এ কথাও সত্য, জরিপ বা পরিসংখ্যানে সবসময় সত্যিকারের চিত্র প্রতিফলিত হয় না। এটা একটি ধারণামাত্র। সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য এক ধরনের পরিমাপক। বাংলাদেশ চিরকালই একটি দুঃখী দেশ, এটা সবারই জানা। এদেশের মানুষকে শত শত বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন সইতে হয়েছে। এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে অনেক সংগ্রাম ও রক্ত দিতে হয়েছে। অবশেষে নিজের দেশে সুখে-শান্তিতে বসবাসের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। তারপরও এদেশের মানুষ সুখের সন্ধান পায়নি। সুখের সন্ধান যে পায়নি, তা জাতিসংঘের জরিপে ১১৫ নম্বর হওয়া থেকেই বোঝা যায়। তার চেয়েও বড় বিষয়, এখনও আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে একটি সুখী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কথা শোনা যায়। এ থেকে এটাই বোঝা যায়, জনগণ দুঃখের মধ্যেই আছে। তাদের সুখের জন্য যে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন-তা সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে। তা নাহলে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫ নম্বরে হবে কেন? সহায়-সম্পদে না হোক, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে রেহাই পেয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার মধ্যেই তো সুখী হওয়ার কথা। তাছাড়া এ কথাও বলা হয়, আমাদের দেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট হয়। মোটা কাপড় আর মোটা চালের ভাত খেতে পারলে তাদের আর কিছু লাগে না। তাদের এ চাহিদার বিপরীতে তো আমাদের সম্পদ অনেক ছিল। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছের কথা আমরা সবাই জানি। মুরুব্বিদেরও গল্প করতে শুনেছি। ফলে যার গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ থাকে, তার তো অসুখী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তারপরও কেন বাংলাদেশ সুখী মানুষের দেশের তালিকায় একশ’র পরে? এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন না হলেও এটা সবাই স্বীকার করবেন, বিভিন্ন সময়ে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা জনগণকে সুখে রাখতে বা সুখী করতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। জনগণ তাদের ‘গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ রক্ষা এবং তা বৃদ্ধির দায়িত্ব একেকবার একেক শাসক দলের উপর দায়িত্ব দিয়েছে। তারা যে এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পরিবর্তে উল্টা জনগণের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল তা মোটামুটি সবারই জানা। সাধারণ মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখেছে এবং দেখছে শাসক গোষ্ঠী এবং তার লোকজনরা নিজেদের সুখী করার সব বন্দোবস্ত করায় ব্যস্ত থেকেছেন এবং এখনও আছেন আর বলছেন জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে তারা কাজ করছেন। একশ্রেণীর কিছু মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে যারা দরিদ্র তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। এটা এক ধরনের প্রপঞ্চ ছাড়া আর কিছুই নয়। জনগণেরও কিছু করার নেই। তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেরাই নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করার নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে নিজেদের সুখী করার চেষ্টা করছে। ফসলের বাম্পার উৎপাদন করছে। বিদেশ গিয়ে আধুনিক দাসবৃত্তি অবলম্বন করে বিলিয়ন বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। মানুষের এই উদ্যমী ভূমিকার কারণেই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে। এ নিয়ে শাসক গোষ্ঠীরও গর্বের সীমা থাকে না। জনগণের এ ভেবে দুঃখ হতে পারে, কার ফসল কার ঘরে যায়। বাম্পার ফসল ফলালাম আমরা, কৃতিত্ব নেয় শাসক গোষ্ঠী। বিদেশে কামলা দিয়ে টাকা পাঠাই আমরা, আনন্দ করে সরকার। বিষয়টি তাদের কাছে এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘কেউ মরে বিল সেচে, কেউ খায় কৈ’। তাদের আরও দুঃখ হতে পারে যখন তাদের উৎপাদিত ফসল রক্ষায় সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণে উৎপাদন খরচ দিয়েও ফসল কিনে না। এ দুঃখে কৃষকদের রাস্তায় ফসল ফেলে প্রতিবাদ করতে আমরা দেখেছি। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে! আবার যাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়, সেই অর্থও আবার চোরে চুরি করে নিয়ে যায়। সরকার রক্ষা করতে পারে না। জনগণের উৎপাদিত ও উপার্জিত সম্পদই যদি চুরি হয়ে যায়, তখন তাদের কি সুখী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে?
তিন.
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ কতটা সুখী আর কতটা অসুখী, তা তারা বলতে পারছে না। বলার মতো কোনো প্ল্যাটফর্মও নেই। আমাদের সুখের কথা বলে দিচ্ছে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের দেশে এসে হাজার খানেক মানুষের মতামত নিয়েই সুখী-অসুখীর রায় দিয়ে দিচ্ছে। এখন হাজার খানেক মানুষের সুখ-দুঃখের উপর ভিত্তি করে ষোল কোটি মানুষের সুখ-দুঃখের বিচার করা কতটা যৌক্তিক, তা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন। হতে পারে কিছু মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে এ জরিপ করা হয়। তবে তা যে সঠিক হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই সময়ে যদি বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখের হিসাব করা হয়, তবে অনেকেই একমত হবেন, তারা ভাল নেই। এই ভাল না থাকার মূল কারণ হচ্ছে সুশাসনের অভাব। দেশে যে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, তা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের দিকে তাকালেই এটা বোঝা যায়। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, দেশে এক ধরনের ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি বিরাজ করছে। ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের কথাই সঠিক, মানতে হবে, এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এমন একটা অপসংস্কৃতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। লুটতরাজকারীরা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করে দিলেও তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। একটু পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখব, লুটেরারা শেয়ার বাজার থেকে ৯৬ হাজার কোটি টাকা লুট করে প্রায় ৩৩ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল। বিনিয়োগকৃত অর্থ খুইয়ে তাদের কেউ কেউ অত্মহত্যা করেছেন। সোনালি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রæপ প্রভৃতি হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত টাকা উদ্ধার করা যায়নি। দেশের মানুষ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে, তাদের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। যে দেশে জনগণের অর্থ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা হয়, সে দেশের মানুষ কিভাবে সুখে থাকে? এর উপর জনগণকে যতভাবে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলা যায়, তার প্রক্রিয় তো রয়েছেই। তারা এক পা আগালে দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনযাপন হয়ে পড়েছে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে উঠানামার মতো। তবে ক্ষমতার কাছাকাছি ও প্রভাবশালী মহলের কিছু লোক যে মহাসুখে আছে, তাতে সন্দেহ নেই। তারা এ দেশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করলেও এ দেশকে সুখের আবাস মনে করে না। তাদের সব সুখ হয়ে আছে বিদেশ। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকায় তারা বসতভিটা বানিয়েছে। অনেকের সুইস ব্যাংকে অঢেল টাকা জমা আছে। তাদের আচরণ অনেকটা ইংরেজদের মতো। ইংরেজরা যেমন ব্রিটেনের বাসিন্দা হয়ে এ দেশ দুইশ’ বছর শাসন করেছে এবং সম্পদ লুটে নিয়ে গেছে, তেমনি আমাদের দেশেরও কিছু লোক এ কাজ করে চলেছে। লুটপাটের কথা বাদ দেয়া যাক। আমরা যদি মানুষের নিরাপত্তার দিকে তাকাই, তাহলে মানুষের চেহারায় আতঙ্কই দেখব। অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, সন্ত্রাস এতটাই বেড়েছে যে কে কখন অপহরণ বা খুনের শিকার হবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। এখনতো রাস্তাঘাটে অহরহ মানুষের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনায় খুনের শিকার ব্যক্তির পরিবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। যাদের দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের কেউ যদি এমন ভয়ংকর হয়ে উঠে, তাহলে মানুষ সুখে থাকে কীভাবে! এভাবে কী সুখে থাকা যায়? এর পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ তো রয়েছেই। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, নীতি-নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে যে নিজের স্ত্রী-স্বামী-সন্তানকে পর্যন্ত খুন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে না। পুরো সমাজ ব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রের পরিচালকরা যদি সঠিক পথে না থাকে বা সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে না পারে, তবে অনিবার্যভাবে তার প্রতিক্রিয়া দেশের সর্বত্র পড়তে বাধ্য। মাথা যদি ঠিক না থাকে, শরীর ঠিক থাকার কোনো কারণ নাই। আমরা যদি রাজনীতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানে যারা বিচরণ করেন, তারা সুখে আছেন, এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা বাদ দেয়া যাক। তাদের দুঃখের সীমা নেই। তবে সরকারে যারা আছেন এবং যেভাবে আছেন, তারা কি সুখে আছেন? শান-শওকত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তির মধ্যে থেকেও কি শঙ্কার মধ্যে নেই? বিশেষ করে যে দল জনসাধারণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে, তাদের শঙ্কা তো বেশি থাকার কথা। কারণ ক্ষমতাচ্যুত হলে এর জবাব জনগণকে অবধারিতভাবে দিতে হবে। এটা অবশ্য পরের কথা। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, যে দেশ জোরজবরদস্তির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়, সে দেশের মানুষ কোনোভাবেই সুখে থাকতে পারে না।
চার.
আমরা প্রায়ই সরকারের সর্বোচ্চ পার্যায় থেকে বলতে শুনি, ‘বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই’। সচেতন মহল থেকে এর বিপরীতে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার এত বছরেও বাংলার দুঃখী মানুষ সুখী হতে পারল না কেন? সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যমলা সমৃদ্ধ সোনার বাংলার দুঃখ ঘুচলো না কেন? সমস্যা কোথায়? ঘুরে-ফিরে এসব প্রশ্নের উত্তর ঐ এক জায়াগায়ই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে সোনার বাংলা যারা চালিয়েছেন, তারা দক্ষ চালক ছিলেন না। বড়ই অদ্ভুত বিষয়, যে দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, সে দেশ পরিচালনার জন্য দক্ষ চালক খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশ ও দেশের মানুষকে সুখী করার জন্য সর্বপ্রথম যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, তা আজও প্রতিষ্ঠা কারা যায়নি। এখনও এ নিয়ে আলোচকরা এন্তার আলোচনা করছেন। তাদের কথাবার্তা আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। সুশাসন আর প্রতিষ্ঠা হয় না। এর ফলে মানুষের প্রাণহানি, অপহরণ, নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে এক ধরনের লুটপাটতন্ত্র কায়েম হয়েছে। জনগণের পয়সা মেরে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু হওয়া এবং কিভাবে তাদের জীবনে টান ধরানো যায়, তার প্রক্রিয়া চলছে। এক ‘বর্গী’ শ্রেণীর হানা যেন বিস্তৃত হয়েছে। সব লুটপাট করে তারা নিজেরা সুখে থাকতে চাচ্ছে। দেশকে এক ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের সুখে থাকার কারণ থাকতে পারে না। জাতিসংঘ সুখী দেশের যে তালিকা প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ যে অবস্থানে রয়েছে, তা না দেখলেও বুঝতে কারোই অসুবিধা হয় না, দেশের মানুষ সুখে নেই।
[email protected]



 

Show all comments
  • Md Mazharul Islam ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 1
    কি বলে সুখে নাই,প্রতিদিন পদ্মাসেতু আর মেট্রোরেল খাচ্ছি না বুঝি?
    Total Reply(0) Reply
  • Farid Hossen ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 1
    Awami league er polapan sukhe ache
    Total Reply(0) Reply
  • S Alam Manik ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 1
    শুধু আওয়ামী বংশধরদের জরিপ করলে দশের মধ্যে এসে যাবে বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Nazmul Hasan ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 1
    পাকিস্তান, আফগানিস্থানের মতো মসজিদে বোমা মারলে সুখে থাকা যেতো মনেহয় কি বলেন ?
    Total Reply(1) Reply
    • Nadia ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৪ এএম says : 4
      Ager din nai bro.
  • Jabed Hosen Miji ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    সুখের কি দরকার ,,,,,,দেশ তো উন্নয়ন হচ্ছে ।।
    Total Reply(0) Reply
  • Sarwer Morshed ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    গুড!চমৎকার বলেছেন!
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Kabir Ahmed ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    Bangladesher position 156
    Total Reply(0) Reply
  • Mosa Alam ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 1
    আওয়ামীলীগ মুক্ত দেশ হলেই মানুসের মনে শান্তি ফিরে আসবে ইনশাল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Omeoo Barrua ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
    এটা Bangladeshr jonoহাস্যকর
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৭:৪৪ এএম says : 0
    অনেকদিন পর চমৎকার একটা সুন্দর গুছানো লেখা পড়লাম।। পত্রিকায় এখন সব আজে-বাজে লেখা পড়তে পড়তে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।।।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৯ পিএম says : 0
    When Allah's rule prevail---All the peace will descend from Allah [SWT]
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন