শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ফজলুল কবির পাভেল
কুসুমকুমারী দাশ। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশের মায়ের নাম। অনেকেই তাকে চেনেন না। তিনি খুব বেশি লিখে যাননি কিন্তু যেটুকু রেখে গেছেন তাতে তার প্রতিভার ছাপ সুস্পষ্ট। তারপরও কুসুমকুমারী দাশের প্রতিভার মূল্যায়ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চন্দ্রনাথ দাশ আর মাতা ধনমণি দাশ। চন্দ্রনাথ দাশ কবিতা লিখতেন। কুসুমকুমারী দাশ জন্মসূত্রেই লেখার ক্ষমতা পেয়েছিলেন যেমন পেয়েছিলেন তার সুযোগ্য পুত্র জীবনানন্দ দাশ। ছোটবেলা থেকেই কুসুমকুমারীর প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তার কবিতা নিয়মিতভাবে ছাপা হতে থাকে। মুকুল, ব্রাহ্মবাদী, প্রবাসী প্রমুখ পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হত। বিভিন্ন পত্রিকা কবির বাসায় আসত। তবে অগোছালো স্বভাবের কারণে সেগুলো প্রায়ই খুঁজে পাওয়া কঠিন হত।
কুসুমকুমারী দাশ কলকাতার বিখ্যাত বেথুন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স ছিল ১৯। স্বামীর নাম ছিল সত্যানন্দ দাশ। কুসুমকুমারী সন্তানদের নাম রেখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ, আশোকানন্দ দাশ এবং সুচরিতা দাশ। এদের মধ্যে পরবর্তীকালে জীবনানন্দ দাশ খুব নাম করেছিলেন।
কুসুমকুমারী দাশ শুধু যে একজন কবি ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নিপুণভাবে গৃহকর্ম সম্পন্ন করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করতেন। ব্রাহ্ম সমাজের মহিলা সদস্যও ছিলেন তিনি। কুসুমকুমারী বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন মহিলাকে স্বাবলম্বী হতে এবং মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে শিখিয়েছেন। কবি নেতৃত্ব দিতে পারতেন। বাংলা ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ পর্যন্ত তিনি ব্রাহ্মসমাজের আধ্যাত্মিক নেতার দায়িত্ব পালন করেন। কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল মহিলা সমাজের সভানেত্রীও ছিলেন। আসলে নানা গুণের সমাবেশ ঘটেছিল তার মধ্যে।
কুসুমকুমারী দাশ বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। এসবের মধ্যে আছে কাব্যকুমারী, পৌরাণিক আখ্যায়িকা, কুসুমকুমারী দাশের কবিতা এবং দৈনন্দিন দিনলিপি। এসব লেখায় তার মুন্সিয়ানা সহজেই চোখে পড়ে। তার কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা’ গদ্যগ্রন্থ।
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
কবি কুসুমকুমারী দাশের এই কবিতা পড়েনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে।
মা কুসুমকুমারী দাশ সম্বন্ধে এক নিবন্ধে জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, “আমার মা শ্রীযুক্তা কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার বেথুন স্কুলে পড়েছিলেন। খুব সম্ভব ফার্স্ট ক্লাস অবধি পড়েছিলেন, তার পরেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তিনি অনায়াসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় খুব ভালোই করতে পারতেন, এ বিষয়ে সন্তানদের চেয়ে তার বেশি শক্তি ছিল মনে হচ্ছে।” (আমার মা বাবা)
বিপদ আসিলে কাছে, হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তবে রক্ত মাংস প্রাণ?
হাত পা সবারি আছে, মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যায়, সে কি পড়ে রয়?
এই কবিতাই বলে দেয় তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। কুসুমকুমারী দাশ প্রবন্ধ লিখে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অনেক গুণী এই কবির কথা বাংলা সাহিত্য অনেকদিন মনে রাখবে। কারণ তিনি যে সময় কাব্যচর্চা বা লেখালেখি করতেন সে সময়ের মেয়েরা অনেক পিছিয়ে ছিল। তার লেখা বা কবিতার আরো প্রসার হোক এই প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।