Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ব্যর্থতা

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আবারো যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হল দুই সহদোর শিক্ষার্থী শিশু। সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীতে দুই ভাইবোন, শ্যালক-দুলাভাইসহ সারাদেশে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ চললেও সড়ক-মহাসড়কে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। একেকটি দুর্ঘটনা ও হৃদয়বিদারক প্রাণহানির ঘটনার সংবাদ প্রকাশের পর আমরা বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্পাদকীয় লিখছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রত্যাশিত শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। গত বছর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবীতে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসলে দেশব্যাপী তা এক ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি করে। দেশের প্রায় সব মানুষ শিক্ষার্থীদের এ দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবীগুলো মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর সঙ্গত কারণেই মানুষের প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো সড়ক নিরাপত্তায় ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে। কিন্তু নতুন বছরে নতুন মন্ত্রীসভা এবং পুলিশ বাহিনীর ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের মধ্যেও সড়কে বিশৃঙ্খলা, যানজট এবং প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনা সমাজে বড় ধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট দুই সহদোর স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু সংবাদটি গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত শিরোনাম ছিল, ‘সড়কে দুটি স্কুলব্যাগ ও ছিন্নভিন্ন শরীর’। পিতামাতার এমন আহাজারির দৃশ্য আর কত দেখতে হবে আমাদের? প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে যে সব প্রাণ ঝরছে তার সব নিছক দুর্ঘটনা নয়। প্রয়োজনীয় নজরদারী, জবাবদিহিতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এসব মৃত্যুর অধিকাংশই রোধ করা সম্ভব ছিল। একেকটি দুর্ঘটনায় হতাহত মানুষের পরিবারগুলোর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। গত বছর সারাদেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন মহাসড়কে তো বটেই, ব্যস্ত রাজপথ ও ফুটপাথে অপেক্ষমান যাত্রী ও শিক্ষার্থীরাও বেপরোয়া গাড়ী চালকদের উন্মত্ত প্রতিযোগীতার শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের শিক্ষার্থীরা সড়ক নিরাপত্তার দাবীতে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিল। ঢাকার সেই বিমানবন্দর সড়কে সোমবার একই পরিবারের দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ সড়ক নিরাপত্তার গণদাবী এবং সরকারের শীর্ষ মহলের প্রতিশ্রæতির কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি। সহযোগী একটি দৈনিক পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘সড়ক শৃঙ্খলার সমন্বিত কার্যক্রম থেমে গেছে, ৬ মাসেই উদ্যোগে ভাটা’।
সড়কে অহরহ মানুষের প্রাণহানী ঘটছে। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবগুলো মেট্টোপলিটান সিটি এমনকি জেলাশহরের ব্যস্ত সড়কগুলোও দু:সহ যানজটে স্থবির হয়ে থাকতে দেখা যায়। একদিকে দুর্ঘটনায় প্রাণহানী অন্যদিকে যানজটে জনজীবনের স্থবিরতা এসবই হচ্ছে সড়কে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম ও নিয়ন্ত্রণহীনতার চিত্র। বিশেষত রাজধানীতে যানজট ও গণপরিবহণে বিশশৃঙ্খলা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে যে ২৯ দফা প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের শীর্ষ মহলের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ৬ মাস পর এই বাস্তবতা খুবই হতাশাজনক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হলেও তা শুধু নির্দেশেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আলোর মুখ দেখছেনা। ২৯টি প্রস্তাবনার কয়েকটির আংশিক এবং ট্রাফিক কারিগরী ইউনিটের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলেও এসব উদ্যোগের কোনো ইতিবাচক ফলাফল সড়কে দেখা যাচ্ছে না সোমবার কেরানীগঞ্জে দুই শিশু এবং বিমানবন্দর সড়কে দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঘাতক ট্রাক ও বাসের চালকদের আটক করা হয়েছে কিনা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়া এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সেই সাথে সড়কে চলাচল ও পারাপারে পথচারীদেরও শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতায় নিয়ে আসতে হবে। সব দুর্ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণ দেয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন