২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আট বছর বয়সের ছেলেটির প্রায়ই পা ব্যথা করে, বিশেষ করে পায়ের মাংসপেশীগুলোতে বেশী ব্যথা করে যেদিন বেশী হাটাহটি হয় কিংবা স্কুলে খেলাধুলা করে সেইদিন সম্যসাটি বেড়ে যায়। এটি প্রথম দেখা দেয় ৩ বছর আগে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি কিছু পরীক্ষা করান, এর মধ্যে এএসও টাইটার বেশি পাওয়ায় বাতজ্বর হয়েছে বলে প্রতিমাসে মাংসে পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সেই থেকে প্রতিমাসে ইঞ্জেকশন নিচ্ছে, তারপরও সম্যসার সমাধান হচ্ছে না। তাই তার মায়ের মনে প্রশ্ন এত ইঞ্জেকশন নিচ্ছে তারপরও কেন এই পায়ে ব্যথা?
রোহানের মত অনেক ছেলে মেয়েরা এরকম পায়ে হাতে ব্যাথার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তারা কিছু পরীক্ষা করান. আর এই এএসও টাইটার বেশি পেলে বাতজ্বর আখ্যা দিয়ে বছরের পর বছর পেনিসিলিন ট্যাবলেট কিংবা ইঞ্জেকশন দিতে থাকেন. পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে অনেকের বাতজ্বর ভুল প্রমাণিত হয়, তবে এই চিকিৎসায় শিশুটির শারিরীক ক্ষতির পাশাপাশি অনেক অর্থ এবং সময় অযথা নষ্ট হয়ে যায়।
তাহলে আসুন জেনে নিই বাতজ্বর কি?
বাতজ্বর কে ইংরেজিতে বলে রিউমেটিক ফিভার. এটা বাচ্চাদের একটি প্রদাহ জনিত রোগ। গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামের অনুজীবের সংক্রমণের পর তার বিরুদ্ধে শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তা আবার হৃৎপিন্ড, ব্রেইন, গিঠ, চামড়া ইত্যাদি স্থানের টিস্যুকে আক্রমণ করে প্রদাহ জনিত রোগের সৃষ্টি করে।
বাতজ্বরের ঝুকিপুর্ণ কারা?
এটা সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের বেশি হয়। স্কুলের ছাত্র ছাত্রী দলবদ্ধ হয়ে থাকা, কিংবা ঘনবসতিপুর্ণ জায়গায় বসবাস করলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি. তবে স্ট্রেপটোকক্কাস দিয়ে গলা ব্যাথা জাতীয় রোগ হওয়ার ৭/৯ দিনের মধ্যে এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে বাতজ্বর হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
বাতজ্বর হলে বুঝবেন কি করে?
আগেই বললাম এই বাতজ্বর ব্রেইন, হৃৎপিন্ড, গিঠ, চামড়া ইত্যাদি অনেক স্থানকে আক্রমণ করে. তাই কোনো একক লক্ষণ কিংবা পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তাররা এটা নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করতে পারেন না, তাই অনেক গবেষণার পর একজন বিজ্ঞানী এটা নির্ণয়ের যে বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দিয়েছেন তার নামানুসারে সেটা জোন্স নির্ণায়ক এবং কিছু পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে পরিবর্তিত জোনস মানদন্ড নামে চিকিৎসকদের জন্য অবশ্য অনুকরণীয় হয়ে আছে। এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তিনি ৫ টি মুখ্য এবং কিছু গৌণ বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। সেই সাথে থাকতে হবে স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণের প্রমাণ।
মুখ্য বৈশিষ্ট্যের যেকোনো দুটি অথবা একটি মুখ্যর সাথে দুটি গৌণ বৈশিষ্ট্য এবং স¤প্রতি স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে বাতজ্বর হিসেবে ধরতে হবে অন্যথায় নয়।
এই মুখ্য বৈশিষ্ট্য গুলো হল -
১. হৃৎপিন্ডের প্রদাহ ২. হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ ৩. ব্রেইন প্রদাহ জনিত কাঁপুনি খিঁচুনি ৪. চামড়ার লাল দাগ ৫. চামড়ার নিচে আর গৌণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে থাকতে পারে হাতে-পায়ে হালকা ব্যথা, জ্বর বেড়ে যাওয়া এবং দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া তবে এদের সাথে অবশ্যই স¤প্রতি সংক্রমণের প্রমাণ হিসেবে গলা পরীক্ষায় জীবাণুর অস্তিত্ব, বাড়তি টাইটার থাকতে হবে।
গৌন বৈশিষ্ট্যের কিছু ধারণা –
১. হৃৎপিন্ড প্রদাহ শতকরা ৪০/৮০ ভাগ বাচ্চার এটা হতে পারে. হৃৎপিন্ডের কম্পন বেড়ে যাওয়া এবং হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া, অনিয়মিত স্পন্দন বাড়তি হৃৎ কম্পন দেখেও ডাক্তাররা এটা নির্ণয় করতে পারেন।
২. শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর হাত-পায়ের বড় বড় জয়েন্টে এই প্রদাহ থাকতে পারে। যার ফলে জয়েন্টগুলো ব্যথা করে ও ফুলে যায়। সাধারণত মাংসপেশীতে ব্যথা করে না।
তাই মনে রাখতে হবে পায়ে ব্যাথা কিংবা পায়ের মাংসপেশীতে ব্যাথা হলেই বাতজ্বর এমনটি ঠিক নয়। উপরে উল্লেখিত বাচ্চাটার এই পায়ে ব্যথার কারণ হলো ‘গ্রোইং পেইন’ নামক সাধারণ একটি সমস্যা। ব্যথার নামটি ‘গ্রোইং পেইন’ হলেও শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কেন শিশুরা এই ব্যথায় আক্রান্ত হয়, তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে শিশুর সারাদিনের দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি ও খেলাধুলাকে এজন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। সাধারণত তিন বা চার বছর বয়স থেকে শিশুর গ্রোয়িং পেইন শুরু হয় এবং আট থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত সে এই ব্যথা অনুভব করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ব্যথার মাত্রা কমে যায় বা ব্যথা আর হয় না। শিশুর গ্রোয়িং পেইন তার দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতি করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রোয়িং পেইনের ব্যথা শিশুর উরুর সামনের বা পায়ের পেছনের মাংসপেশিতে হয়। কখনও কখনও হাতেও ব্যথা হতে পারে। তবে কখনোই এই ব্যথা হাত-পায়ের কোনো গিরাকে আক্রমণ করে না। শিশুর গ্রয়িং পেইনের ব্যথা কমানোর জন্য তার পায়ের মাংসপেশির কিছু ব্যায়াম করতে হবে, পাশপাশি হালকা গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। তাই শিশুর পায়ে ব্যথা হলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে।
বাত, ব্যাথা, পারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান ফিজিওথেরাপি বিভাগ
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা ।
মোবা : ০১৭৮৭-১০৬৭০২
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।