Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে এক বছরে ৮১ অপমৃত্যু

অধিকাংশই তরুণ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নগরীর বাগবাড়ি এলাকা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান প্রতীকের ঝুলন্ত লাশ গত ১৪ জানুয়ারি উদ্ধার করে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অনার্সে ফাস্ট হওয়া এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যার জন্য তার বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করে প্রতীকের পরিবার। আর শাবির ভিসি এই আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন প্রতীকের পরিবারকে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর হঠাৎ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া নিয়ে দেশ জুড়েই চলছে নানা আলোচনা-বিশ্লেষণ।
শুধু প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনায় নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
সিলেট মহানগর পুলিশের হিসেব মতে, গত একবছরে সিলেটে আত্মহনন করেছেন ৮১ জন। যাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং শিক্ষিত। আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মহানগর পুলিশের হিসেব মতে, ২০১৭ সালে সিলেটে আত্মহত্যা করেন ৭০ জন। আর ২০১৮ সাল আত্মহত্যা করেছেন ৮১ জন। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানা এলাকায় ২৪ জন, জালালাবাদ থানায় ১৯ জন, বিমানবন্দর থানার আওতায় ১৪ জন, দক্ষিণ সুরমা থানার আওতায় ২ জন, শাহপরাণ থানার আওতায় ১৩ জন এবং মোগলাবাজার থানা এলাকার আওতায় ৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, এই আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যায় অধিকাংশই পুরুষ। বয়সের হিসেবে অধিকাংশেরই বয়স ১৬ থেকে ২৪ এর ভিতরে। তবে আত্মহতননকারীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সের।
মহানগর পুলিশের এ অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, বেকারত্ব, নেশাগ্রস্ততা, পারিবারিক কলহ, ঋণগ্রস্ত এবং প্রেম-এসব কারণেই বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। জেদান আল মুসা আরো বলেন, যেসব নারীরা আত্মহত্যা করেন তারা বেশির ভাগই সংসার জীবনে অশান্তি, স্বামীর নির্যাতন, স্বামীর সাথে মতের অমিল বা পরকীয়ায় আসক্ততার কারণে। আবার কেউ কেউ স্বামীর পরকীয়া আসক্ততার কারণেও অশান্তিতে ভোগে আত্মহত্যা করেন বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবেই চিহ্নিত করছেন। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক সচেতনতা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা এবং প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকেট্রিক বিভাগের প্রধান ডা. আর. কে. এস রয়েল বলেন, ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না পাওয়া, ২৪ থেকে ৩০ এর ভিতর বয়সে বেকারত্ব বা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থতা, ৩০ থেকে ৩৫ এর ভিতর বয়সের লোকদের সংসার জীবনে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর মতের অমিল, পরকীয়া, স্বামীর নির্যাতন ইত্যাদি এবং নেশাগ্রস্থতা-এই চারটি কারণেই মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করে থাকে।
সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন আত্মহত্যাকে আইনগত অপরাধ উল্লেখ করে বলেন, দেশে উদ্বেগজনক হারে আত্মহত্যা বাড়ছে। কারণ দেশে বর্তমান সময়ে উচ্চ শিক্ষিত, মধ্য শিক্ষিত লোকদের চাকরির প্রচুর অভাব। এসব কারণে বেকারত্ত্ব বাড়তে বাড়তে তাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দেয়।
আত্মহত্যা দন্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তার ১ বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা অথবা উভয়টি হতে পারে। এর কেউ যদি কাউকে আত্মহত্যায় সহযোগিতা করে সে ক্ষেত্রে তার ১০ বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা অথবা উভয়টিও হতে পারে। এমনকি এটি সামাজিক, ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ীও অন্যায় এবং পাপ কাজ। এজন্য এসব বিষয়ে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ