বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নগরীর লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনার জনসভার আগে নির্বিচারে গুলি করে ২৪ জনকে হত্যার ৩১ বছর পরও শেষ হয়নি আলোচিত এই মামলার বিচার। ১৯৮৮ সালের আজকের এই দিনে (২৪ জানুয়ারি) স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসাবে লালদীঘি ময়দানে জনসভায় যোগ দিতে আসছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী গাড়ি কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনের পথ অতিক্রম করতেই গাড়ির বহর ও জনতার উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ শুরু হয়। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। দীর্ঘদিনেও বিচার নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশ নিহতের স্বজনেরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক অনুষ্ঠানে মামলাটির বিচার শেষ না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন। গত তিন দশকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সাক্ষী, দুই আসামি চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা ও পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন, মামলার বাদী আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা এবং সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের মারা গেছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে মির্জা রকিবুল হুদার মৃত্যু প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আটকে আছে বিচার। আমেরিকায় তার মৃত্যু হয়। আর তা নিশ্চিত হতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পত্র দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আগামী ৭ মার্চ আদালত মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন। এই মামলার আসামি রকিবুল হুদার মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে জানান তার আইনজীবী। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় আদালত। পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আবারও আবেদন করে। এরপর আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে বিচারধীন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রধান আসামি রকিবুল হুদা মারা গেছেন বলে আসামিপক্ষ একটি পিটিশন আদালতে জমা দেয় জুলাই মাসে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেওয়া একটি ডেথ সার্টিফিকেটও জমা দেয়। এরপর আমরা আদালতে এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আবেদন করি। জানা গেছে বিষয়টি নিশ্চিত হতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে। ওই প্রতিবেদন আসার পর মামলার সাক্ষ্য শুনানি দ্রæত শেষ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। আগামী ৭ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্য ও প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য আছে।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ২৪ জনকে হত্যার ঘটনার পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। তবে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে মামলা তদন্ত বেশিদূর যায়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের আদেশে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম এবং অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এতে আসামি করা হয় আট পুলিশ সদস্যকে। আসামিরা হলেন- তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালি অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর জে সি মÐল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মুশফিকুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন।
১৯৯৮ সালে দেওয়া মামলাটির দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে মোট ৭০ জনকে সাক্ষী করা হয়। মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু ও সাজেদা চৌধুরী। ওই দিনের ঘটনায় নিহতরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
তাদের স্মরণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশ পথে নির্মাণ করা স্মৃতিস্তম্ভটি দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। পরে সেটি সংস্কার করা হয়। গত ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিন দশকেও এ হত্যা মামলার বিচার না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ দিবসটিকে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আজও স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।