পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্ষা মওসুম শেষ হবার আগেই ভরা পদ্মার ক্ষনিকের নাচন থেমে যায়। মাথা উচু করে জানান দিতে থাকে ডুবো চরগুলো। শীত মওসুম শুরুর আগে ভাগেই পদ্মার বুকজুড়ে জেগে ওঠে বিশাল বালিচর। প্রতি বছরই এমন হয়। তবে ব্যাতিক্রম হয় চরে বালিপড়ার ব্যাপারটি। কখনো বিশাল এলাকাজুড়ে পলি পড়ে। আবার কখনো বেশীর ভাগই বালি। যেখানে পলি পড়ে সেখানে চলে আবাদ। মরুময় বালিচরকে মরুদ্যান বানানোর প্রানান্ত চেষ্টা।
এবারো পদ্মার বুকজুড়ে চাষাবাদ হয়েছে নানা ফসলের। শুরুতে মাস কালাই, মশুর, খেসারী ডালের বীজ ছড়ানো হয় কাদা মাটিতে। এরপর সরিষা, গম, মটর, বেগুন, টমেটোসহ নানা ধরনের শাকসবজি। এরপর আবাদ হয় বোরো ধানের। আগে চরে কি পরিমাণ জমিতে আবাদ হয় তা কৃষি বিভাগের হিসাবের খাতায় ছিলনা। চরের ফসল সামগ্রীক কৃষি উৎপাদনে কি ভূমিকা রাখছে তার হিসেব ছিলনা। দিন বদলেছে। চরে ফসল আবাদে বৈচিত্র এসেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে এবার জেলার পদ্মার চরে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে মসুর ডাল এক হাজার হেক্টর, সরিষা সাড়ে তিনশো হেক্টর, সবজি জাতীয় সাড়ে পাঁচশো হেক্টর ভুট্টা সাড়ে পাঁচশো হেক্টর, মসলা জাতীয় ফসল সাড়ে সাত’শ হেক্টর আর গম চারশো হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।
পদ্মার চর ঘুরে দেখা যায়, সরিষা ও ডাল জাতীয় ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছে। চরের শাকসবজী যদিও আগেই বাজারে এসেছে। বিশাল আকারের বেগুন ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। বিশেষ করে ভর্তা খাবার জন্য। মাসকালাইয়ের রুটির সাথে এ ভর্তা অনন্য। চরের টক মিষ্টি স্বাদের টমেটো ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। বাজারে আসছে ভুট্টাও। এসব ফসল ঘরে তোলার পর এখন জমি তৈরী করা হচ্ছে বোরো আবাদের জন্য। চরের বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্র্াক্টর। আর সেচের জন্য নদীর বুক ফুড়ে বসানো হয়েছে সেচ যন্ত্র। বোরোর বীজতলা নজর এড়ায়না। চরে চাষাবাসের ফলে বেড়েছে কর্মসংস্থান আর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। কোথাও কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে গরুর বাথান। শত শত গরু লালন পালন করা হচ্ছে। দুধ উৎপাদনও হচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে গো-চারণ ভূমি।
নদী সরকারী হলেও এর বেশীর ভাগ দখল করছে চর জমিদাররা। শহর থেকে গিয়ে এসব চরের জমি দখল নিয়েছে মহল বিশেষ। গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চর দখলে সরকারী দল বিরোধী দল বলে কিছু নেই। যদিও সাম্প্রতিককালে বেড়েছে সরকারী দলের প্রভাব। এরাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। নদীর ভাঙ্গনে সর্বশান্ত চর খিদিরপুর, খানপুরের সব হারানো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা মধ্যচরে। আশ্রয় নেয়া এসব মানুষের অধিকার নেই চরের জমিতে চাষাবাদের। ওরা কামলা খাটে। শৈত্য প্রবাহ আর লু হাওয়া গায়ে মেখে ফসল ফলায়। আর ভোগ করে চর জমিদাররা। চরে আশ্রয় নেয়া মানুষদের কথা পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানিয়ে আমি রয়। সেই ঘরের মালিকতো আমি নই।
সাবেক একজন বিভাগীয় কমিশনার এসব নদী ভাঙ্গনে সব হারানো মানুষের মাথা গোজার ঠাই ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। চরে ঠাই নেয়া মানুষগুলো নতুন করে ঘুরে দাড়াবার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তিনি বদলী হয়ে যাবার পর সব স্বপ্ন ভেস্তে যায়। এসব চরে আবার আস্তানা গাড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। সীমান্তের ওপার থেকে ফেন্সিডিল মদ ইয়াবাসহ নানা মাদক এনে জড়ো করে। সুবিধামত সময়ে নগরীতে নিয়ে আসে। সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ক্রসফায়ারে একজন জীবন হারায়। ফলশ্রুতিতে এলাকার সাধারণ মানুষ পড়ে বিড়ম্বনায়। ভয়ে ঘরছাড়া হতে হয়েছে অনেককে। কদিন আগে চরের মানুষের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে এমন সব কথা জানা যায়। সঙ্গে যাওয়া কাতার রেডক্রিসেন্টের বাংলাদেশ প্রতিনিধি বাসাম খাদ্দাম চরের বাসিন্দাদের অবস্থা দেখে মন্তব্য করেন এদের অবস্থাতো রোহিঙ্গাদের চেয়ে খারাপ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।