পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের পূর্ববর্তী মামলায় গত ৯ জানুয়ারি জামিনের জন্য আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নজির হোসেনকে নির্বাচনের আগে গ্রেফতার দেখানো হয় ২০১৪ সালের একটি মামলায়। নির্বাচনের পর আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলে না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। একই ইউনিয়নে ভোটের আগে গোলাগুলি, সংঘর্ষের পৃথক তিনটি মামলায় ২৩৮জনকে আসামী করে পুলিশ। নির্বাচনের পর তাদের অনেকে জামিন পেয়েছেন আবার অনেকে পলাতক রয়েছেন। যশোরের বাঘারপাড়া-অভয়নগর দুটি উপজেলাতে ২২ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে। আগামী সপ্তাহে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করবেন। একটি দুটি সংসদীয় আসন, উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন নয়, সারাদেশেরই এই একই চিত্র বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনের আগের মতো নির্বাচন পরবর্তী সময়েও এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা, কোর্ট, কারাগার নিয়েই মহাব্যস্ত। রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ছুঁটতে হচ্ছে সারাদেশের আদালতগুলোর বারান্দায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে জামিন পাচ্ছেন অনেকে। অনেককেই আবার যেতে হচ্ছে কারাগারে। পুরনো মামলার সাথে নতুন নতুন মামলায় এখন প্রতিটি আদালত পাড়া ও কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানান, সারাদেশে এখনো প্রায় বিশ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। নির্বাচনের পর জেলা পর্যায়ে কোনো কোনো এলাকার নেতাকর্মীরা জামিন বা মুক্তি পেলেও ঢাকায় বেশিরভাগ নেতাকর্মীর ক্ষেত্রে তা হচ্ছেনা। বরং জামিনের জন্য আবেদন করলে তা না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি রিমান্ডেও নেয়া হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০ হাজার ২০৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৬৯২জন এবং অজ্ঞাত আসামী ৪ লাখ ২৬ হাজার ৩০৩ জন। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৭ হাজার ৩ জন। আর গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫ হাজার ৭৫৩ টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহার নামীয় জ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার ৯৬৭ জন এবং এজাহার নামীয় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৯৮ হাজার ৫৪৬ জন।
গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৪৫ জন নেতাকর্মীকে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নেতাকর্মীরা ৪ হাজার ১১৬ টি হামলার শিকার হয়েছেন। হামলাকালে ১৭ হাজার ৩১৩ জন আহত এবং ১৯ নিহত হয়েছেন। দফতর সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির বিরুদ্ধে মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯০ হাজার ৩৪০ টি, আসামির সংখ্যা ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন, হত্যার সংখ্যা ১৫১২ জন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা ৭৮২ জন), গুমের সংখ্যাও সহস্রাধিক (বর্তমানে ৭২ জন)।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএস আইয়ুব বলেন, প্রতিনিয়তই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বরের আগে সব মামলায় নেতাকর্মীদের নিয়ে হাইকোর্টে জামানি নিলেও ২২ ডিসেম্বরের পরই ৯টি মামলায় আবারও সহস্রাধিক আসামী করা হয়েছে। এভাবে প্রতি মাসেই নেতাকর্মীদের নিয়ে হয় হাইকোর্ট নয়তো জেলা জজ কোর্টে আমাদের সময় কাটছে। যাদের ভাগ্য ভাল তারা জামিন পাচ্ছেন নাহলে ঠিকানা হচ্ছে কারাগার। এভাবে মামলা, আদালত, কারাগারেই আমরা চক্কর কাটছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার হিড়িক লেগে যায়। বিশেষ করে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গায়েবি তথা ভুতুড়ে মামলা দায়ের শুরু হয়। ফলে রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছু মামলার এজাহারে মৃত, বিদেশে অবস্থানরত এবং গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়। এ নিয়ে সমালোচনাও তৈরি হয়। তবে গায়েবি মামলায় তটস্থ থাকায় স্বাভাবিক পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেনি বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। বিরোধ জোট কিংবা সরকারের বাইরে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল কেন্দ্রিক নির্বাচনী তৎপরতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি।
নির্বাচনে নেত্রকোণা-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. মো: আনোয়ারুল হক বলেন, ১ সেপ্টেম্বরের পর তার নির্বাচনী আসন নেত্রকোণা সদর ও বারহাট্টা থানায় মোট ৩০টি গায়েবি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এসব মামলায় গড়ে একশ থেকে দেড়শ জনকে আসামি করা হয়। নির্বাচনের আগে ও পরে সব মিলিয়ে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এদের মধ্যে অনেকের জামিন হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত বছর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করে পুলিশ। বিদেশে থাকা এবং মৃত ব্যক্তিও বাদ যায়নি পুলিশের গায়েবি মামলা হতে। মূলত একতরফা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যেই এসব গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়। যে কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিরোধীদলের প্রার্থীদের এলাকায় যেতে বাধা দেয়া হয়। ফলে তারা গণসংযোগ করতে পারেনি। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে থেকেই সেসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন গায়েবি মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে পরিকল্পিতভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মুহুর্তে বিএনপির প্রায় বিশ হাজারের বেশি নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় অবৈধ সরকারের কারাগারে বন্দি। সংশ্লিষ্ট নেতারা তাদের জামিন ও মুক্তির ব্যাপারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জামিনও মিলছেনা বলে তিনি অভিযোগ করেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।