পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বড়েছে। বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছিনতাইকারী চক্র। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে রাজধানীবাসী। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত এমনকি দিনে-দুপুরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যত কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন ভুক্তভোগিরা। তাদের দাবি, গোয়েন্দারা ছিনতাই প্রতিরোধে তৎপর থাকলেও থানা পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি বুধবার রাত ৭টায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে ৬৫টি খাসি নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর পথে রওনা করেন ব্যবসায়ী হরমুজ আলী। এ সময় একটি ট্রাক এসে তার সামনে হাজির হয়। ট্রাকচালক তাকে বলে, সে মধুপুর থেকে এসেছে। ঢাকায় আসবে চিনির জন্য। হরমুজ আলী ছাগল নিয়ে ঢাকায় আসতে চাইলে অল্প টাকায় আসতে পারবেন। ৩ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রওনা দেন তারা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার আমিন বাজার এলাকায় অস্ত্রের মুখে হরমুজ আলীকে বেঁধে ট্রাক ফেলে দিয়ে খাসির ট্রাক নিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা।
৬৫টি খাসি হারিয়ে দিশেহারা হরমুজ আলী বলেন, ট্রাকে ড্রাইভারসহ মোট ৫ জন ছিল। আর একজন লেবারসহ হরমুজ আলীরা ছিলেন দুই জন। আমিন বাজারে ঢোকার আগে তাদের সন্দেহ হচ্ছিল। তবে এরকম ঘটনা ঘটাবে তা বুঝতে পারেননি। হঠাৎ চলন্ত গাড়ি সামনে এসে দাঁড়ায় ছিনতাইকারীরা। ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরিসহ দুজনের গলায় রাম দা ধরে। আর কয়েকজন দুই হাত পেছনমোড়া করে বেঁধে ফেলে। গামছা দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দুই জনকেই ট্রাক থেকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয় তারা। এরপর ট্রাক ঘুরিয়ে সাভারের দিকে চলে যায়।
হরমুজ আলী বলেন, খাসিগুলোর মূল্য ছিল ৬ লাখ টাকা। প্রায় ২০ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশসহ অনেক জায়গায় খাসি সরবরাহ করে করেছেন। কোনোদিন এরকম ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, হাত বাঁধার সময় তারা মারধরও করেছে। এ ঘটনার সময় ওই এলাকায় কোনো পুলিশ ছিল না। এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি নেয় বলেও তিনি জানান।
গত ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গেন্ডারিয়ার লোহারপুল এলাকা থেকে রিকশায় কমলাপুর রেল স্টেশনে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তিনি গ্রামের বাড়ি রাজশাহী যাচ্ছিলেন। মুহূর্তেই চলে যায় তার ভ্যানিটি ব্যাগ। ট্রেনের টিকিট, টাকা পয়সাসহ সব। এ ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থী থানায় যাননি। তিনি স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে বাড়িতে চলে যান।
ওই শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে জানান, ঘটনাটি ঘটেছে মুরগীটোলা মোড়ে। সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না। থানায় যাইনি একারণে যে, ঝামেলা করতে চাইনি। আমি নারী। থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পর বারবার এ বিষয় নিয়ে ঝামেলা হবে। তাই যাইনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাস্থলের আশেপাশেও পুলিশ থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না।
এর আগে, গত ১১ জানুয়ারি রাতে মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে ৬ ছিনতাইকারীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওইদিন রাত পৌনে নয়টার দিকে তারা ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। আটককৃতরা হলো, গৌতম রাজবংশী, আব্দুস সালাম, সুব্রত কুমার ঘোষ, সুব্রত কুমার দত্ত, মাসুদ রানা ও মহিন।
এই প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিরপুর, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডসহ মহানগরীর বিভিন্ন জন-কোলাহলপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আসে।
জানা গেছে, ছিনতাইকারীরা কখনো মোটরসাইকেল, কখনো প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস যোগে পথচারী বা রাস্তায় অপেক্ষমাণ ব্যক্তির কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী, ভ্যানিটি ব্যাগ, গলার চেইন, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে দূরদূরান্ত থেকে আসা পথচারী ও নাগরিকদের মনে সার্বক্ষণিক একটি ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে গোয়েন্দা উত্তরের গুলশান জোনাল টিম কাজ শুরু করে। এই ছিনতাইকারীচক্রকে তারা ধরেও ফেলে।
অন্যদিকে, গত ১৬ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে তিন ছিনতাইকারীকে আটক করে র্যাব-৩-এর একটি দল। তারা হলো, বিল্লাল হোসেন, রাশেদ আলী ও আব্দুস সালাম। র্যাব-৩-এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, পল্টন মোড়ে তারা ভোরের দিকে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। গ্রামের বাড়ি থেকে বাসে কিংবা অন্যকোনো যানবাহনে এসে ঢাকায় নেমে বাসায় যাওয়ার পথে যাওয়া পথচারীরা এই ছিনতাইকারীদের শিকার হন। ভুক্তভোগিরা বলেন, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় দায়সারা তদন্ত ও অপরাধের গুরুত্ব কম দেখানোর প্রবণতা রয়েছে থানা পুলিশের। শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে ছিনতাইয়ের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়। থানা পুলিশের সদস্যদের নগরীতে টহলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রতি রাজধানীতে ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। পুলিশ সদস্যদের অন্য একটি বড় ইভেন্টে ব্যস্ত থাকার পর রাস্তায় থানা পুলিশের টহল কিছুটা কম হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।