পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফিল্মি স্টাইলে দিন-দুপুরে ঢাকার আদালতপাড়া থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ছি্িনয়ে নিয়েছে জঙ্গিরা। তাদের সহযোগীরা পুলিশের চোখে স্প্রে ও কিল-ঘুষি মেরে মোটরসাইকেলে করে ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। দুই জঙ্গি হচ্ছে- মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। জঙ্গিদের হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাদের ধরতে সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দেশের সবকটি বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। ছিনতাইকৃত জঙ্গিদের ধরতে পুলিশ সদর দফতর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমি ও আইনমন্ত্রী একসঙ্গে বসে বলে দিয়েছিলাম, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের আদালতে আনতে হবে না; যেহেতু তাদের ফাঁসির আদেশ হয়েই গেছে। এই আদেশ কেন মানা হলো না, তা খতিয়ে দেখা হবে। ঢাকার সিজেএম আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রাজধানীর রায়সাহেব বাজার মোড় সংলগ্ন ঢাকার সিজেএম আদালত ফটকের সামনে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় পুলিশের কোনো ধরনের গাফিলতি আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের ধরতে পুলিশের সবকটি থানা মাঠে নেমেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চার আসামি কোর্টে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন পুলিশ এবং একজন আনসার সদস্য। গেটের সামনে আসার পরপরই ওই ৪ আসামি পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। বাইরে আরো চারজন লোক ছিল বাইক নিয়ে। ঘুষি দেয়ায় পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়। যার ফলে তার হাতে থাকা দুই আসামি ছেড়ে দেন তিনি। আনসার সদস্য তার হাতে থাকা দুই আসামিকে ছাড়েননি। তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। তাকেও ঘুষি দেয়া হয়েছে, স্প্রে মারা হয়েছে। কিন্তু তিনি আসামি ছাড়েননি। পুলিশ সদস্য যে দুই আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা বাইরে রাখা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়।
তিনি আরো বলেন, রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে মোটরসাইকেলে থাকা লোকেরা সিগন্যাল দেয়ার পরই গেটের কাছে এসে আসামিরা পুলিশকে কিলঘুষি দেয়া শুরু করে। এর মধ্যে গেটের দারোয়ান ধরতে এলে তাকেও স্প্রে মারা হয়, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পার্কিংয়ে আরো ৩ জন ড্রাইভার ছিলেন, তাদেরও স্প্রে মেরে অজ্ঞান করা হয়। পথচারী ছিলেন অনেক, তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে স্প্রে মারার পর বাকি পথচারীরা সরে যান। ‘ওপেন’ কাজ হয়েছে; কিন্তু কেউ ভয়ে সামনে যায়নি। ওই যে যাওয়ার পরপর স্প্রে মারে, আর অজ্ঞান হয়ে যায়, এটা দেখে আর কেউ ভয়ে এগোয়নি। বাইরে ওনাদের যে লোকজন ছিল তারাও হয়তো চাকু-ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এজন্য আমিও সামনে যাইনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামিরের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামে। মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামে। গতকাল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে দুই জঙ্গির মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। ঢাকার সিজেএম আদালতের অষ্টম তলায় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান বলেন, আদালতে শুনানি শেষে এই দুজনকে হাজতখানায় নেয়ার পথে তাদের ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট, ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার : গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকার সিজেএম আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ পুরস্কার দেয়া হবে। এদিকে দেশের সবগুলো কারাগারে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ আদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের নাম রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেদিন বিকেলে তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে আশপাশের সব স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। তাদের ধরতে পুলিশের একাধিক ইউনিট মাঠে কাজ করছে। দিনজুড়ে আদালতপাড়া থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ। পুরো এলাকায় চালানো হচ্ছে তল্লাশি। ডিবি পুলিশ, সোয়াট, র্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরাও তৎপর। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট-সোয়াট ও পুলিশের বিভিন্ন সাজোয়া যান মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি : দুই জঙ্গি পালানোর ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, দীপন হত্যা মামলার দুই সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলায়ন সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে- ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস)। অপর সদস্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স), যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি), উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিআরও)। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।