পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মিয়ানমারের মতো ভারতও সেখানে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত ৩ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ১৩০০ রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। মূলত এসব রোহিঙ্গার ভারত সরকার বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করেছে। সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) তাদের আটক করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনাকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিয়ানমারের মতো ভারতও রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা মনে করছেন, আপতদৃষ্টিতে ভারত থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা সংখ্যা কম মনে হলেও এটি ভারতের একটি নীতির ফসল এবং তা ভবিষ্যতে আরও বড় আকার নেয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ। গত অক্টোবরে ভারত যখন সাত রোহিঙ্গাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়, তখন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আপত্তি ও সমালোচনা করলেও ভারত তাতে গা করেনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যেভাবেই হোক ভারত রোহিঙ্গাদের বহিষ্কারের পথে এগুচ্ছে। তাদের এ আশঙ্কাই এখন সত্য বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। ৭ রোহিঙ্গার পর ১৩০০ রোহিঙ্গাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য করার বিষয়টি ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা বিতাড়নে দেশটির নীতি পরিষ্কার করে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় সংখ্যায় হয়তো ভারত রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মিয়ানমারের নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিরাপত্তার অজুহাতে ভারত যে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের নীতি অবলম্বন করেছে, তা মূলত মিয়ানমারের নীতিরই প্রতিফলন। কারণ মিয়ানমার সরকার মুসলমান বিদ্বেষী হয়েই রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়নে ইতিহাসের বর্বরতম নৃশংস পথ অবলম্বন করে। মিয়ানমার থেকে যখন রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন নিয়ে সারাবিশ্ব সোচ্চার, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিয়ানমার সফর করে মূলত রোহিঙ্গা বিতাড়নকে সমর্থন দিয়ে আছেন। অথচ ভারত সরকার মুখে মুখে এবং কূটনৈতিক ভাষায় রোহিঙ্গাদের পাশে আছে বলে বিভিন্ন সময় বলেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সহায়তা করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। ভারত সরকারের এসব কথা যে ‘আই ওয়াশ’ তা সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিজেপি সরকার যে বরাবরই মুসলিম বিদ্বেষী এ থেকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ভারতে এখনো মুসলমানদের ওপর অকথ্য নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আশ্রয় নেয়া মুসলমান রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া। বিজেপির মুসলমান বিদ্বেষ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, আসাম থেকে বাংলাদেশী বিতাড়নের উদ্যোগের মাধ্যমে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র আয়তনের একটি দেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে, সেখানে ভারতের মতো বিশাল দেশে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া কোনো ব্যাপার না। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মভিত্তিক বৈষম্য, বিশেষ করে মুসলমান জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ভারত সরকারের নানা ব্যবস্থা, মোদী সরকার কোনো রকম রাখঢাক না করেই করছে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এত দিন ধরে ভারতে যে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়িয়েছে, রোহিঙ্গা বিতাড়নের মাধ্যমে তা এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভারত যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দীর্ঘসূত্রতা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের যুক্তিকে সমর্থন করছে, তা কোনোভাবেই বাংলাদেশের জন্য অনুকূল নয়। রোহিঙ্গা সংকটে ভারত যে মিয়ানমারের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে তা নয়, মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার মধ্য দিয়ে যে আচরণ করছে, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধীও। দুঃখজনকভাবে ভারতের এ আচরণে আমাদের সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ দূরে থাক, টুঁ শব্দটিও করছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারে যে মুসলমান বিদ্বেষ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করছে, ভারতও একই নীতি অবলম্বন করে সেখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের এ আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে বাংলাদেশ তাকে চাহিবামাত্র দ্বিধাহীনভাবে সবকিছু দিয়ে দিয়েছে, বিনিময়ে কিছুই পায়নি, সে দেশের সাথে এ ধরণের আচরণ বন্ধুত্বের পরিবর্তে দাদাগিরিই প্রকাশ করছে। অথচ বর্তমান সরকার ভারতকে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু ভাবলেও ভারত তার কোনো মূল্যই দিচ্ছে না। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রথম বিদেশ সফরে ভারতকেই বেছে নিয়েছেন। আমরা জানি না, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ভারত থেকে তাদের বিতাড়নের বিষয়টি আলোচনা করবেন কিনা। এমনিতেই ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ভারে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত, তার উপর ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের যদি ঠেলে দেয়া হয়, তবে কী উপায় হবে! বন্ধুর দায়িত্ব কি এটা যে, বন্ধুর জন্য যা বিরাট বোঝা ও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা আরও ভারি করা? দেখা যাচ্ছে, ভারত তার ইচ্ছা মতো বাংলাদেশের সাথে যেমন খুশি তেমন আচরণ করে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমাদের সরকারসহ নাগরিক সমাজের কেউই কোনো প্রতিবাদ করছে না। তারা যেন মৌখিক প্রতিবাদটুকু করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আমরা আশা করি, রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার বিরুদ্ধে সরকারসহ রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজ প্রতিবাদে উচ্চকণ্ঠ হবে। আরও গভীর হওয়ার আগেই সঙ্কটের সন্তোষজনক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।