পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত মঙ্গলবার থেকে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শুরু হয়েছে। বেশ ঢাক- ঢোল পিটিয়ে শুরু হওয়া ট্রাফিক পক্ষের প্রথম দিনেও রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, নিয়মহীনতাসহ বেপরোয়া গাড়ী চালনা, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করানো এবং পথচারিদের যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের চিত্র দেখা গেছে। ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত সতর্কতা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা আদায়সহ বাড়তি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মধ্যেও চালক ও পথচারীদের অপতৎপরতা ছিল ধরনার চেয়ে অনেক বেশী। অধিকাংশ চালকই নির্ধারিত বাস স্টপেজের বদলে যত্রতত্র গাড়ী থামিয়েছে, অসংখ্য পথচারি নিয়ম না মেনে দৌড়ে রাস্তা পার হয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়। তবে দরজা বন্ধ রেখে গাড়ী চালনা এবং বাইকারদের হেলমেট ব্যবহারের নির্দেশনার ইতিবাচক ফলাফলও দেখা গেছে বলে কোনো কোনো রিপোর্টে বলা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা নিয়ন্ত্রণহীনতা, বিশৃঙ্খলা এবং আইন অমান্য করার বদভ্যাস হঠাৎ করেই আমূল বদলে ফেলা হয়তো সম্ভব নয়। এ জন্য অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও উন্নয়নের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ, গাড়ী চালক, সাধারণ যাত্রী ও পথচারীদের আচরণ ও অভ্যাসের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। গাড়ী চালক, যাত্রী ও পথচারীদের আইন মেনে রাস্তায় চলাচলে বাধ্য করতে প্রথমত ট্রাফিক পুলিশকেই যথাযথ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
শোনা যাচ্ছে, ট্রাফিক পক্ষে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় স্বেচ্ছাসেবি হিসেবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরকেও সম্পৃক্ত করছে ঢাকা মেট্টোপলিটান পুলিশ(ডিএমপি)। তাদের মাথায় এই আইডিয়া এসেছে সম্ভবত গত বছরের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে। গত আগস্টের শুরুতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দাবীতে রাস্তায় নেমে আসা লাখ লাখ শিক্ষার্থী অভাবনীয়ভাবে সড়কের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আশ্চর্য সক্ষমতা দেখিয়েছিল। সে সময় সড়কে লাইসেন্স বিহিন গাড়ী চালক এবং সমাজের উঁচু স্তরের মানুষদের ট্রাফিক আইন অমান্য করার নানাবিধ উদাহরণ শিক্ষার্থীরা জাতির সামনে তুলে ধরেছিল। নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এবারের ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শিক্ষার্থীদের সেই দাবী-দাওয়াগুলোকে সামনে রেখেই পালিত হচ্ছে বলেই ধরে নেয়া যায়। ট্রাফিক শৃঙ্খলা যে কোনো নগর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবনের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ যাতায়াত মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। ট্রাফিক পুলিশ এবং গণপরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিশেষ সময়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিরাপত্তার দাবীতে রাজপথে নেমে এসে দায়িত্ব পালনের উদাহরণ সৃষ্টি করলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা, সড়ক ও গণপরিবহণে শৃঙঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মত স্থায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার চিন্তা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখতে হবে। তবে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালক, যাত্রী ও পথচারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরীর ক্ষেত্রে বিশেষ ক্যাম্পেইনে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা যেতে পারে।
পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সমাজব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দেয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও আমাদের সড়ক ও গণপরিবহণ ব্যবস্থায় তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। উপরন্তু গত নভেম্বরে অন্যায় দাবীতে কর্মবিরতির নামে গণপরিবহণ শ্রমিকরা সারাদেশের গাড়ী চালক ও যাত্রীদের জিম্মি, নাজেহাল হতে দেখা গেছে। তাদের অবরোধে শিশুসহ মুমুর্ষ রোগী প্রাণ হারিয়েছে, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত গাড়ীচালকসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের গায়ে পোড়া মবিলের কালি লেপন করার সচিত্র খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের চলমান বাস্তবতায় সড়কের নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থার প্রত্যাশিত উন্নয়ন এবং গণপরিবহনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো এড-হক ভিত্তিক পদক্ষেপ নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নগর পরিকল্পনা, বাস্তু ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিল্প কারখানার বিকেন্দ্রিকরণসহ গণপরিবহন ব্যবস্থার সুসমন্বিত আধুনিকায়ণের পাশাপাশি চালকদের লাইসেন্স প্রদান, গাড়ীর ফিটনেস নিশ্চিত করণ এবং যাত্রী ও পথচারীদের আইন জানতে এবং মানতে বাধ্য করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি, নানা অজুহাতে যথেচ্ছ হয়রানি, মামলাবাজিসহ ট্রাফিক পুলিশের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে হবে। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করানো, যাত্রী হয়রানির ঘটনা এবং যথেচ্ছ রাস্তা পারাপারকারী পথচারীদের শাস্তি ও জরিমানার আওতায় আনতে হবে। ট্রাফিক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিআইপি ও সাধারণ গাড়ীচালকদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ রাখা যাবে না। ট্রাফিক আইন এবং নাগরিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কারিকুলাম গ্রহণসহ আরো ব্যাপক ভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।