গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর ডেমরা থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত দুই শিশুর নাম ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) ও নুসরাত জাহান (৪)। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে ডেমরার কোনাপাড়ার হযরত শাহজালাল রোডের নাসিমা ভিলার নিচতলার একটি কক্ষ থেকে শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের ধারণা, ধর্ষণ শেষে শিশু দুটিকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও ময়নাতদন্তে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন মোস্তফার স্ত্রী আঁখি আক্তার ও শ্যালককে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এছাড়া অভিযুক্ত মোস্তফাকে ধরতে অভিযান চলছে। গতকাল রাতে মোস্তফা ও আজিজুল নামে দু’জনকে আসামি করে ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত দুই শিশুর বাবা।
নিহত নুসরাত ঝালকাঠির গজনী থানার ভাউকাঠি গ্রামের মো. পলাশ মিয়ার মেয়ে। আর দোলা পটুয়াখালী জেলার দশমিনা এলাকার আলীপুরা গ্রামের মো. বদিউজ্জামানের মেয়ে। শিশু দুটি পরিবারের সাথে শাহ জালাল রোডে টিনশেড ও পাকা ভবনের দুটি পৃথক বাসায় থাকতো।
নিহত দোলার চাচা রাশেদুল ইসলামের ভাষ্য, গত সোমবার দুপুরে খেলা করার পর থেকে শিশু দুটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজি শেষে তাদের না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। তিনি বলেন, মাইকিং করার সময় এলাকার এক যুবক তাদের বলেন, স্থানীয় মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি দুপুরের পর শিশু দুটিকে ডেকে তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছে। পরে ওই যুবকের তথ্য পেয়ে মোস্তফার খালা সেই ফ্ল্যাটে যান। তিনি শিশু দুটিকে খাটের নিচে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় মোস্তফা যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারে সে জন্য তিনি (খালা) বাইরে থেকে তালা দিয়ে আশপাশের লোকজনকে খবর দেন। তবে লোকজন এসে মোস্তফাকে ঘরে পাননি। রাশেদুলের ধারণা, মোস্তফা হয়তো দরজা বন্ধের বিষয়টি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে গেছে।
নিহত শিশু দোলার বাবা ফরিদুল ইসলাম গতকাল বলেন, মোস্তফার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এমনকি নিহত আরেক শিশু নুসরাতের পরিবারের সঙ্গেও কোনো আলাপ-পরিচয় ছিল না। যার কারণে শিশু দুটিকে কেন হত্যা করা হলো, এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
এলাকাবাসী জানায়, মোস্তফা পেশায় পোশাক শ্রমিক। আবার কেউ তাকে রাজ মিস্ত্রি হিসেবেও বলছে। স্থানীয়রা বলেন, মোস্তফা একজন মাদকসেবী। সে স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে নাসিমা ভিলার ওই বাসায় সাবলেট থাকতো।
গতকাল দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মর্গে নিহত শিশু ফারিয়া ও নুসরাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মাকসুদুর রহমান বলেন, দুপুরের পর শিশু দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুই শিশুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এই চিকিৎসক বলেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত যে শিশু দুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
গত সোমবার রাতে পুলিশের তৈরি সুরতহাল প্রতিবেদনেও প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- নিহত শিশু নুসরাত জাহানের কপালে অর্থাৎ বাম চোখের ওপরে চাপ লাগা কালচে দাগ রয়েছে। নাকের ওপরেও কালচে দাগ রয়েছে। তবে তার কান ও যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক ছিল। এছাড়া শিশু ফারিয়া আক্তার দোলার গলার ডানপাশের সামনের দিকে কালচে দাগ রয়েছে। তবে তারও যৌনাঙ্গ, নাক ও কান স্বাভাবিক ছিল।
এদিকে, শিশু দুটিকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন মোস্তফাকে আটক করা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। নিহত শিশু দোলার পরিবার দাবি করেছে, মোস্তফাকে আটক করা হয়েছে। তবে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। দোলার মামা মো. হাসান বলেন, আমরা সোমবার রাতে থানায় গিয়ে সেখানে মোস্তফাকে দেখেছি। তার ভাষ্য, সোমবার রাতে যাত্রাবাড়ী থানাধীন শেখদি এলাকা থেকে মোস্তফার শ্যালক (স্ত্রীর বড় ভাই) তাকে (মোস্তফাকে) ধরে থানায় দিয়ে আসেন। রাতেই ওসির রুমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে সময় আমরা থানাতেই ছিলাম।
ডেমরা থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, ঘটনার পর থেকে মোস্তফাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধ্যান চালানো হচ্ছে। খুব দ্রুত তাকে আটক করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এ ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার এসআই শাহআলম অভিযুক্ত মোস্তফার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গতকাল রাতে দুই শিশুর বাবা মোস্তফা ও আজিজুল নামে দু’জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মোস্তফার স্ত্রী ও শ্যালককে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে, হত্যাকান্ডে কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মোস্তফাকে গ্রেফতার করা গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে আজ বুধবার গণমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত বলা হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
ডেমরা জোনের সিনিয়র এসি ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী জানিয়েছে মোস্তফা মাদকাশক্ত ছিলো। সে ক্ষেত্রে মাদকের টাকার জন্য মুক্তিপণ দাবির জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে, আমরা কোনো বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নই। আশা করছি খুব শীঘ্রই মোস্তফাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই হত্যাকান্ডের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।