শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ঝুপ করে আঁধার নেমে এল, আঁধার যখন আসে এমন করেই আসে। অমলকান্তি রোদ্দুর অবশেষে গোধূলির শেষ অস্তমিত রাগে মিশে গেল চিরদিনের
জন্য। গত ২৫শে ডিসেম্বর স্তব্ধ হয়ে গেল কবিতার
ক্লাস, এক বিস্ময়কর সমাপতনে এ দিনটিই ‘কলকাতার যিশু’র কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর
প্রয়াণদিবস হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে গেল!
কাব্য,সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বাতাবরণে বাঙালী
অভিভাবকহীন ও হয়ে পড়ল অনাথবৎ।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবনের শুরুটা আর
পাঁচটা গড়পড়তা সাধারন শিক্ষিত বাঙালী পরিবারের পরিমণ্ডলেই। জন্মেছিলেন বাংলাদেশের
ফরিদপুরের চান্দ্রা গ্রামে ১৯২৪ সালে ১৯শে অক্টোবর। গ্রামের নিরালা নিভৃত পরিবেশের সান্নিধ্যই তাঁর কবিসত্তার জমিনে প্রকৃতি ও মানুষ
এই দুই সত্তাকে প্রোথিত করে দিয়েছিল। প্রকৃতির
প্রভাব মানবজীবনের মধ্যে সংযোগসাধনের সেতু।
কবির তাই উপলব্ধি ছিল বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবপ্রকৃতির মধ্যে এমনই নিবিড় সম্পর্ক যে একটিতে আস্থা হারালে অপরটির প্রতিও আস্থা হারিয়ে যায়। তাই ্রনীরক্ত করবীগ্ধ বোধহয় তাঁর
কবিতার নাম। তিনি যথার্থ মানবপ্রেমিক ছিলেন, মানুষকে অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন বলেই তাঁর কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছিল একদিন
‘কলকাতার যিশু’, উলঙ্গ রাজাগ্ধ , অমলকান্তি
রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’ বা ‘বাতাসী’।
জ্ঞানের অহমিকা তার মধ্যে কখনো মানুষের সঙ্গে তাঁর প্র্জ্ঞার দূরত্ব তৈরী করে নি বরং মানুষের
সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বন্ধুত্বের, আন্তরিকতার ছিল। জ্ঞানীর অহঙ্কার নিয়ে নয় বরং জানানোর আনন্দে তাঁর কবিমন আনন্দে বিভোল থাকতো।
তিরিশের দশকে রবীন্দ্র প্রভাব থেকে মুক্ত হবার জন্য বাংলা কাব্য জগতে যখন এক বিদিশা চলছে
কিন্তু কেউ রবিপ্রভা থেকে বিমুক্ত থাকতে পারছেন না তখন সেই সঙ্কটপ্রবণ মুহূর্তেই কবি নীরেন চক্রবর্তীর আবির্ভাব। বিদ্রোহ বা বিপ্লব প্রত্যক্ষভাবে তার কবিতায় ঝঙ্কার না তুললেও মানুষ, দেশ ও সমাজের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগ ভালবাসা তাঁকে জীবনমুখী, নির্ভীক করে তুলেছিল। আলঙ্কারিকভাবে নয় সহজ সরল ভাষায় গভীর কথা বলবার যাদুকাঠিটা তার আয়ত্তে ছিল সহজাত। তাই যৌবন অতিক্রমিত হবার অনেক
আগে থেকেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান,জনপ্রিয় কবিব্যক্তিত্ব। একদম আটপৌরে মানুষের আটপৌরে ভাষায়, চারপাশের
পরিচিত মানুষ ও জগৎই ছিল কবির ভাষা। তাই
এখনো চিরনবীন হয়ে আছে তার বাতাসী,
কলকাতার যিশু, হ্যালো দমদম, জঙ্গলে
এক উন্মাদিনী, স্বপ্নে দেখা ঘর-দুয়ার কবিতাগুলো।
সাংবাদিকতা দিয়ে শুরু করেছিলেন কবি জীবন তারপর ১৯৫১ সালে আনন্দবাজারে যোগ দেবার
পর তিনি হয়ে উঠলেন দুরন্ত সাংবাদিক। আড্ডাসুলভ আলাপ আলোচনা ও বৈঠকী বাঙালির
রসবোধের শরিক হয়ে উঠলেন। বক্তব্যে ছিলেন ক্ষিপ্র, স্পষ্টবাদী, দৃঢচেতা। তিনি কানায় কানায়
পরিপূর্ণ হয়ে ঊঠলেন আনন্দমেলার সম্পাদক হিসেবে। তিনি শুধু কবি নন বাংলা বনান রীতি
ও সাধারন মানের বাংলা ব্যাকরনের জন্য তিনি
আজীবন কাজ করে গেছেন। ‘কবিতার ক্লাস’বা
‘কবিতার কি এবং কেন’ বই দুটিও কবিতা অনুরাগীদের কাছে মূল্যবান আকর গ্রন্থ বলা যায়।
বাংলা কবিতার প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি বহুবার বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন আর হয়ে উঠেছেন প্রবাদপ্রতিম ও প্রতিষ্ঠান স্বরূপ। বিচিত্র সাহিত্যকীর্তি তাঁকে এনে দিয়েছে ‘সাহিত্য একাডেমি’
পুরস্কারক, শরৎ স্মৃতিগ্ধ পুরস্কার ও ‘আনন্দ পুরস্কার’। কবিতার অঙ্গন ছাড়াও লিখেছেন অজগ্র গদ্য, গ্রন্থ সমালোচনা, শিশুতোষ সাহিত্য, গোয়েন্দা ও রহস্যকাহিনী আর উপন্যাস। ইতিহাস বেঁচে থাকে প্রতিষ্ঠা আর পরম্পরায়, কবি নীরেন চক্রবর্তী এই দুই বিশ্বেই বেঁচে থাকবেন শাশ্বত কাল ধরে। বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি চিরকাল প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন কারন তিনি ছিলেন প্রকৃতি ও মানুষের প্রানের প্রকৃত দোসর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।