Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদির বিজেপি ধরাশায়ী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চার বছর ধরে ক্রমাগত সাফল্যের পরে বিধানসভা নির্বাচনে বড়সড় ধাক্কা খেল বিজেপি। ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের কোনও প্রান্তে বিজেপি এত বড় ধাক্কা খায়নি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ধাক্কাটা এল হিন্দি বলয়ের সুবিশাল গেরুয়া দূর্গ থেকেই। মোদির শিবিরে অতএব বিষন্নতার ছায়া। আর উচ্ছ্বাস বাড়ল রাহুল বলয়ে।
এদিকে, নির্বাচনের ফল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, সেমিফাইনালে বিজেপির পরাজয় ২০১৯ সালের ফাইনালে কী হবে তারই ইঙ্গিত। বিজেপি দেশের কোথাও নেই। অন্যদিকে, বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ ও নাম পরিবর্তন নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটিরই এক সংসদ সদস্য সঞ্জয় কাকাদে।
পাঁচ রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচন ছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ভোটযুদ্ধ। ‘দিল্লি দখলের সেমিফাইনাল’ হিসেবেই এই লড়াইকে ব্যাখ্যা করছিল রাজনৈতিক শিবির। সেই সেমিফাইনালের সামগ্রিক ফল যে কংগ্রেসের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে পড়ল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ৫টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। এ রাজ্যগুলো হল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মিজোরাম। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ২টি রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সামান্য এগিয়ে আছে বলা হচ্ছে। তেলেঙ্গানায় আঞ্চলিক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস) জয়ী হয়েছে। মিজোরামে জয়ী হয়েছে আঞ্চলিক দল এমএনএফ। ৫ রাজ্যের একটিতেও জয়ী হতে পারেনি বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এ ফলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
সবচেয়ে চমকে দেওয়া ফলাফল ছত্তীশগঢ়ে। বিজেপি সে রাজ্যে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল, অধিকাংশ জনমত সমীক্ষা এবং ভোটের দিন হওয়া অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল, চতুর্থ বারের জন্য রমন সিংহের নেতৃত্বে ছত্তীশগঢ়ে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। তবে আসন কমতে পারে। কিন্তু ছত্তীশগঢ়ে ভোট গণনায় দেখা যায়, সেখানে বিজেপির পরাজয় শুধু নয়, শোচনীয় পরাজয় হয়েছে।
৯০ আসনের বিধানসভায় ৬৫ আসন নিশ্চিত করে ফেলেছে কংগ্রেস। অর্থাৎ মধ্য ভারতের জনজাতি প্রধান রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পেল তারা। বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৭ আসন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগীর দল জেসিসি এবং মায়াবতীর বিএসপির সম্মিলিত আসনসংখ্যা ৮।
প্রায় সব সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল, রাজস্থান বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছেই। মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ রয়েছে মরুরাজ্যের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে, তা বিজেপি নেতারাও স্বীকার করছিলেন। কিন্তু ছত্তীশগঢ়, মধ্যপ্রদেশ এবং মিজোরামের পরে বিজেপির গোটা নেতৃত্ব জোরদার ঝাঁপ দিয়েছিলেন রাজস্থানের রণাঙ্গনে। তীব্র মেরুকরণের চেষ্টা হচ্ছে বলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছিল। আর ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগে থেকে বিজেপি বলতে শুরু করেছিল, মরুরাজ্যের হাওয়া ঘুরছে।
ফলাফল বোঝাল, হাওয়া কিছুটা হলেও ঘুরিয়েছে বিজেপি। বসুন্ধরা রাজের সরকারের বিরুদ্ধে যে বিপুল ক্ষোভের ইঙ্গিত ছিল, ফলাফলে তার সম্পূর্ণ প্রতিফলন নেই। নিঃসন্দেহে নিজেদের আসনসংখ্যা অনেক বাড়িয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। ১০০টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু রাজস্থানে বিজেপি যে ৭৪ আসন পেয়েছে, ততটাও অনেকের কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না।
এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া একমাত্র দক্ষিণী রাজ্য তেলেঙ্গানায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দিয়েছিল বেশ কিছু সমীক্ষা। কিন্তু সব আভাস উড়িয়ে দিয়ে শাসক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ধরে রাখছে। এবার টিআরএস-এর টিকিটেই জয়ী হয়েছেন ৮৭ বিধায়ক। চন্দ্রবাবুর তেলেগু দেশম পার্টিকে সঙ্গে নিয়েও কংগ্রেসের অবস্থা যথেষ্ট বেহাল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দূর্গে। তারা পেয়েছে ২১টি আসন।
হিন্দি বলয়ের কংগ্রেস শিবিরে যে উৎসবের মেজাজ, তা কিন্তু ধাক্কা খেয়ে গেছে উত্তর-পূর্ব ভারতেও। উত্তর-পূর্বে কংগ্রেসের শেষ দুর্গ মিজোরাম হাতছাড়া হয়ে গেছে। গত দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা দুটি আসন থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছিলেন। দু’টিতেই তিনি পরাজিত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘নেডা’ জোটের শরিক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ২৬টি আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এখানে কংগ্রেস পেয়েছে ৫টি আসন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের আভাস অবশ্য দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের রণাঙ্গন। মধ্যপ্রদেশে লড়াইটা যে এবার কঠিন, তা সব পক্ষই মানছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মধ্যপ্রদেশে ভোটগণনার প্রবণতা যেদিকে এগিয়েছে, তাতে আক্ষরিক অর্থেই কাঁটায় কাঁটায় লড়াই দেখা গেছে। কখনও বিজেপি এগিয়েছে, ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছে। আবার কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যবধান কমাতে কমাতে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে কংগ্রেস। ভোট গণনার শেষ পর্যন্ত সেই প্রবণতাই বহাল থেকেছে। এখানে কংগ্রেস জিতেছে ১১৪টি আসন, বিজেপি ১০৮ আসন। ব্যবধান মাত্র ৬। মায়াবতীর বিএসপি এবার মধ্যপ্রদেশে ২টি আসন পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাকি ৬টি আসন পাওয়া ছোট দলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সরকার গঠনের খেলায়। সূত্র : এনডিটিভি, টিওআই।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ শাদমান ইয়াসার শাদাব ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    এইটা হাইলাইট না করে আরেক টা জিনিস হাইলাইট করো বাছাধন। সরকারে বিজেপি থাকার পরেও তিন রাজ্যে তারা হেরেছে এবং কংগ্রেস কে অভিনন্দনও জানিয়েছে। এটা তাদের উদার গনতান্ত্রিকতার পরিচয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Shaoun Lambert ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    যে যত কথায় বলো, ভারতে যে সরকারই আসুক, তাদের পররাষ্ট্রনীতি (আওয়ামী লীগ প্রিতি) কখনো চেইঞ্জ হয় না। এবং তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ও বিচারিক ব্যবস্থা 100% নিরপেক্ষ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Tareq ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ,,জুলুমের শেষ পরিনতি ফেরাউনের মতো হবে,সেদিন আর বেশি দুরে নয়,,নুতন সূর্য উদয় হতে আর অল্প বাকি,,
    Total Reply(0) Reply
  • Sahadat Hossen Chowdhury ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    ৩০ তারিখ মোদীর এদেশীয় দালালদেরও এমন পরিণতি হবে ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Rejaul Karim Shapon ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশেও পরিবর্তনের হাওয়া বইতে পারে। কে হাসবে শেষ হাসি? wait&see
    Total Reply(0) Reply
  • Shahadot Khan ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    Good news I am glad
    Total Reply(0) Reply
  • Azgor Hossain ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    মিঃ মোদি নিজেই এখন টালমাটাল। তার এদেশের এজেন্টদের কি হবে আল্লাহই ভালো জানেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মু. ইউসুফ আলী ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    দেখা যাক গরু কি করে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোদি

২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ