নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সবার আগে ১২ হাজারী
গত এশিয়া কাপে আঙুলের চোট নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা তার হিরন্ময় উদাহরণ। সেই চোটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরলেন তামিম। মাইলফলক গড়ার মঞ্চ তার জন্য প্রস্তুত ছিল সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। সেই ম্যাচে না পারলেও গতকাল ঠিকই ১২ হাজারি মাইলফলকে পা রাখলেন তামিম ইকবাল। মাইলফলকে পৌঁছাতে দরকার ছিল আর মাত্র ৪৭ রান। তামিম একটু বেশি করলেন। কাঁটায় কাঁটায় ৫০। আর তাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১২ হাজার রানের মাইলফলকে পা রাখা প্রথম বাংলাদেশি হয়ে গেলেন এই ওপেনার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে এই মাইলফলক থেকে মাত্র ৫৯ রানের দূরত্বে ছিলেন তামিম। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ায় অনেকেই আশায় ছিলেন প্রথম ম্যাচেই তামিম মাইলফলকটি টপকে যাবেন। চোট কাটিয়ে ফেরায় একটু ধাতস্থ হওয়ার দরকার ছিল তামিমের। সেই ম্যাচে তাই ১২ রানে আউট হয়েছিলেন। এতে সমীকরণটা দাঁড়ায় ৪৭ রানের দূরত্বে। তামিম এদিন ৫০ রান করে সমীকরণটি মিলিয়ে দিলেও আক্ষেপ ছড়িয়েছেন শেরেবাংলার গ্যালারিতে। এত সুন্দর শুরু আর নিয়ন্ত্রিত ইনিংসটি সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার দাবিদার ছিল, হলো না!
এই সিরিজ শুরুর আগেই এ বছর বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন সংস্করণ মিলিয়ে হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম। আজ যেটা থেমেছে ১০৯৪-তে। গত এশিয়া কাপের পর মাঝে চোটের জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা খেলতে পারেননি। নইলে রানসংখ্যা আরও বাড়ত। তারপরও এ বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৮ ম্যাচে ৮ ফিফটি আর ২ সেঞ্চুরিকে একেবারে খারাপ বলা যাবে না।
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩১৩ ম্যাচ খেলেছেন তামিম। রানসংখ্যা ১২০০৩। ৩৪.২৯ গড়ে তুলে নিয়েছেন ২০টি সেঞ্চুরি। তামিমের এক বছর আগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষিক্ত হয়েছেন সাকিব। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১২ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে আরও পথ পারি দিতে হবে সাকিবকে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩১৭ ম্যাচে সাকিবের মোট সংগ্রহ ১০,৭৬২ রান। মুশফিক ৩৩৬ ম্যাচে ১০,৪৬৭ রান নিয়ে তৃতীয়।
সামনে সাঈদ আনোয়ার
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে জয়সুরিয়া-গেইল-শেবাগদের দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। ধীরে ধীরে পরিণত তামিম ইকবাল এখন অনেকটাই ক্ল্যাসিক ঘরানার ওপেনার। পরিণত তামিম এখন ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবিও। আর এই ধারাবাহিকতা দিয়ে আরেক ক্ল্যাসিক ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের একদম কাছে পৌঁছে গেলেন।
গতকাল ফিফটির পরপরই আউট হয়েছেন। ততক্ষণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রান হয়ে গেছে ১২০০৩। ক্যারিয়ারের একটা ইনিংসেই পাঁচে ব্যাটিং করেছেন, সেটিও নিয়মের ফেরে পড়ে, গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সেই ইনিংসে ৩৯ রান করায় ওপেনার হিসেবে তামিমের রান ১১ হাজার ৯৬৪। এটি তিন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়েই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম রানের বিচারে ১৪তম ব্যাটসম্যান! কম বড় অর্জন তো নয়!
এখনো আরও দীর্ঘ পথ পড়ে আছে ২৯ বছর বয়সী তামিমের জন্য। তামিম যত এগোবেন, ততই পথের পাশে একেকটি মাইলফলকে আঁকা বড় নাম দেখতে পারবেন। যেমন আর ১৫০ রান করলেই তামিম পেরিয়ে যাবেন সাঈদ আনোয়ারকে। সুনীল গাভাস্কারকে পেরিয়ে যেতে দরকার ২৯৫ রান। ওপেনার হিসেবে ১২ হাজার ৪৮১ রান করা গর্ডন গ্রিনিজও খুব বেশি দূরে নেই।
এই ধাপ পেরিয়ে গেলে তামিমের সামনে থাকবে ওপেনার হিসেবে ১৪ হাজারি ক্লাবে থাকা ম্যাথু হেইডেন, ১৫ হাজারি ক্লাবের দুই সদস্য শচীন টেন্ডুলকার আর অ্যালিস্টার কুক। ১৬ হাজারি ক্লাবে আছেন গ্রায়েম স্মিথ, ডেসমন্ড হেইনস, বীরেন্দর শেবাগেরা। এঁদের ঠিক ওপরে ক্রিস গেইল। আর রানের দিক দিয়ে ওপেনার-কুল শিরোমণি সনাৎ জয়াসুরিয়া।
বয়স বিবেচনায় তামিম আরও দুটি বিশ্বকাপ খেলতেই পারেন। সামনের এই পথচলার দিকে অনুপ্রেরণা পেতে তামিম একটু পেছন ফিরে তাকাতেও পারেন। এরই মধ্যে ওপেনার হিসেবে তিনি পেছনে ফেলেছেন গ্রাহাম গুচ, হার্শেল গিবস, তিলকারতেœ দিলশান, মার্ক টেলর, মার্কাস ট্রেসকোথিকদের!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনারদের রান
ব্যাটসম্যান রান ১০০ ৫০
সনাৎ জয়সুরিয়া ১৯২৯৮ ৪১ ৯৫
ক্রিস গেইল ১৮০৬১ ৪০ ৯৭
গ্রায়েম স্মিথ ১৬৯৫০ ৩৭ ৮৮
ডেসমন্ড হেইন্স ১৬১২০ ৩৫ ৯৬
বীরেন্দর শেবাগ ১৬১১৯ ৩৬ ৬৭
শচীন টেন্ডুলকার ১৫৩৩৫ ৪৫ ৭৫
অ্যালিস্টার কুক ১৫১১০ ৩৬ ৭৪
ম্যাথু হেইডেন ১৪৮২৫ ৪০ ৬৬
গর্ডন গ্রিনিজ ১২৪৮১ ৩০ ৬৫
গ্যারি কারস্টেন ১২৩৭৩ ২৭ ৭৩
ডেভিড ওয়ার্নার ১২২৭০ ৩৫ ৫৮
সুনীল গাভাষ্কার ১২২৫৮ ৩৪ ৬৭
সাঈদ আনোয়ার ১২১১৩ ৩১ ৬২
তামিম ইকবাল ১১৯৬৪ ২০ ৭৪
মুশফিককে নিয়ে শতরানের জুটি
লিটন দাসের চোট আর ইমরুল কায়েসের শূন্য রানে বিদায়ে শুরুতেই চাপে পড়া বাংলাদেশকে শতরানের জুটিতে পথ দেখান তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। দারুণ এই জুটিতে একটি জায়গায় সবার উপরে উঠে গেলেন তারা। ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি তিন অঙ্ক ছোঁয়া জুটি গড়ার কীর্তি এখন এই দুই জনের।
গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লিটন-ইমরুলের দ্রæত বিদায়ে চতুর্থ ওভারেই জুটি বাঁধেন তামিম-মুশফিক। ২৪তম ওভারে তামিমের বিদায় দিয়ে ভাঙে ১১১ রানের চমৎকার জুটি। ওয়ানডেতে এটি তাদের পঞ্চম শতরানের পার্টনারশিপ।
এই ম্যাচের আগে ৭৪ ইনিংসে জুটি বেঁধে চারটি শতরানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিক। ৪২ ইনিংসেই তাদের পেছনে ফেলে দিল মুশফিক-তামিম জুটি। ৪২ ইনিংসে ৪৩.৪৬ গড়ে ১ হাজার ৬৯৫ রান তোলেন ওপেনার তামিম ও কিপার ব্যাটসম্যান মুশফিক। পাঁচটি শতরানের সঙ্গে সাতটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি আছে তাদের।
প্রথম ২৫ ইনিংসে তাদের তিন অঙ্কের জুটি ছিল না একটিও। ২০১৫ সালে মিরপুরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই ইনিংসে উপহার দেন তারা ১৭৮ ও ১১৮ রানের জুটি। গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৬ ও ভারতের বিপক্ষে ১২৩ রানের দুটি শতরানের জুটি গড়েন তামিম-মুশফিক। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে এগিয়ে গেলেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।