Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসির কাছে সম-আচরণই কাম্য

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রায় গণহারে প্রার্থিতা বাতিল করেন। ছোটখাটো ভুল-ত্রæটি দেখিয়েও অনেকের প্রার্থিতা বাতিল করেন। সারাদেশে ৩ হাজার ৬৫ জনের মধ্যে বাতিল করা হয় ৭৮৬ জনের মনোনয়পত্র। এর মধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থী ১৪১ জন। প্রাথমিক বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। গত বৃহস্পতিবার ছিল আপিল শুনানির প্রথম দিন। এ দিনে মনোনয়ন বাতিলকৃত মোট প্রার্থীদের মধ্যে ১ থেকে ১৬১ জনের আপিল শুনানি হয়। এতে প্রার্থিতা ফিরে পান ৮১ জন। তিন দিনের আপিল শুনানির আজ শেষ দিন। ইসির সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। আপিলে হলফনামায় সই না করাসহ ছোটোখাটো অসঙ্গতির ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে ইসি। বিএনপির অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার কারণে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ইসি ন্যায়বিচার করেছে। বিএনপির অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার ঘোষণা একটি বিজয়। আমরাও মনে করি, আপিল শুনানিতে প্রার্থীদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন নীতি-নৈতিকতা এবং আইনের মধ্যে থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে রায় দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রার্থীদের প্রতি এ ধরনের আচরণকে আমরা স্বাগত জানাই এবং অনুরূপ আচরণ পুরো নির্বাচন পর্যন্ত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের (জেলা প্রশাসক) নির্দেশ দিয়েছিলেন, ছোটোখাটো ভুল এবং তাৎক্ষণিক সংশোধনযোগ্য ত্রæটি-বিচ্যুতির কারণে যাতে মনোনয়নপত্র বাতিল না করা হয়। দেখা গেছে, রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ নির্দেশনা না মেনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। প্রার্থীর স্বাক্ষর নেই, টিপসই নেই, স্ট্যাম্প সংযেজন না করা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না দেয়া, আয়কর রিটার্ন জমার রশিদ না দেয়া, মনোনয়নপত্রে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অস্পষ্ট স্বাক্ষর ইত্যাদি নানা অজুহাতে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের একাংশের এ ধরনের আচরণ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশনা আমলে না নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের উপর যেন তাদের বেশি দৃষ্টি ছিল। অথচ যেসব ছোটোখাটো ভুলের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়, তা তারা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনের জন্য প্রার্থীদের বলতে পারতেন। তা না করে তাদেরকে আপিল শুনানি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। মনোনয়পত্র বাতিলের প্রেক্ষাপট বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর আপিল শুনানি করতে নির্বাচন কমিশনকেও যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও নির্বাচন কমিশন আপিলকৃত প্রার্থীদের বিষয়গুলো ধৈর্য্যসহকারে বিবেচনা করে নিষ্পত্তি করে দিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ ধরনের আচরণ অনেকটা পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রতীয়মাণ হয়। অনেক আগে থেইে জেলা প্রশাসকদের (রিটার্নিং কর্মকর্তা) ক্ষমতাসীন দলের অনুগত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনযোগ্য বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্য দিয়ে তারা তাদের নিরপেক্ষতার বিষয়টি দৃষ্টিকটুভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ ধরনের ভূমিকা নিঃসন্দেহে ন্যাক্কারজনক। নাগরিক সমাজসহ দেশের সাধারণ মানুষও জানে, বিগত দশ বছরে প্রশাসনকে ক্ষমতাসীন দল ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করেছে। এই প্রশাসনের অধীনেই এবারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবং বিরোধী দলগুলোও অংশগ্রহণ করছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তারা একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চান, সেখানে ছোটোখাটো ভুলে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়টি, সেই দলীয়করণের অভিযোগকেই সামনে নিয়ে আসে। প্রশাসন তো বটেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন পর্যন্ত নির্বাচন উপযোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেনি। তাদের সব রোষ যেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর। এখনও নির্বিচারে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এক মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে নেতাকর্মীদের প্রতিদিনই দলে দলে কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দলটির অভিযোগের অন্ত নেই। তাদের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, যখন সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, তখন এ সময়টিতে নির্বিচারে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তাবে এবং তার নিরপেক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ ব্যাপারে কমিশনকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থানমূলক পরিবেশের উপযোগী অবস্থায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনকে বরাবরই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এমনকি যখন নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে, তখনও অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বের অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন কমিশনকে এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন কমিশনের পক্ষ নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের অনুকূলে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, যাতে কোনো দলই তার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে না পারে। বলা বাহুল্য, এবারের নির্বাচনটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে দেশ রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়তে পারে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন ব্যাহত হবে। দেশের এই অগ্রযাত্রাকে মসৃণ রাখতে এবারের নির্বাচনটি অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্চনীয়। আমরা আশা করি, দেশের ক্রান্তিলগ্নে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন