২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলায় একটা কথা আছে “মুলা শাক আর কচু শাক শরীরে থাকে না কোনো খাদ”। সত্যিই মুলা শাক স্বাস্থ্য অটুট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেহকে নানা রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। নিয়মিত মুলা ও মুলা শাক খেলে শরীরের নানা দোষ কমে যায়। শীতকাল নানা শাক সবজির ভরপুর মৌসুম। এসময়ে বাজারে টাটকা তরতাজা নানা সবজি ও তরকারি পাওয়া যায়। দামেও সস্তা। আসলে আমাদের জানার অভাবে বা অবহেলায় অতি গুরুত্বপূর্ণ সহজলভ্য তরিতরকারি আমরা খাই না। শীত মৌসুমের শাক সবজির মধ্যে মুলা আমাদের নিকট একটি অতি পরিচিত সবজি। যার যথেষ্ট পুষ্টি ও ঔষধী গুণ রয়েছে। মুলা এমন একটি সবজি যার সমস্ত অংশই খাওয়া যায়। এটি কাঁচা অবস্থায় ও তরকারি এবং পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন যে সব সবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় তা রান্নার চেয়ে কাঁচা অবস্থায় খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। কারণ রান্না করলে সবজির পুষ্টি গুণ উপাদান কমে যায়।
মুলা উদ্ভিদ জগতের ঈৎঁপরভবৎধব (ক্রসিফেরি) পরিবারের উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম জধঢ়যধহঁং ঝধঃরাঁং র্যাফানাস স্যাটাইভাস। আমাদের দেশের মুলার রং সাদা এবং লাল হয়। পুষ্টি মানের দিক দিয়ে দুইটি সমান। লৌহ, ক্যালসিয়াম ও সোডিয়ামের একটি ভালো উৎস মুলা। মুলার পাতা শাক হিসেবে আর মূল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে মুলা পাতার পুষ্টি উপাদান বেশী। এতে ৯৫ ভাগই পানি। এতে খুব কম পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ মুলায় পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, ফোলেট, আঁশ, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম যথেষ্ট পরিমানে পাওয়া যায়। মুলাতে রয়েছে সিসটিন সমৃদ্ধ প্রোটিন এর নির্যাস এন্টিইউরোলিথিক।
উপকারিতা ঃ মুলাতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। মুলাতে আছে ছত্রাক এবং ব্যাক্টোরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার মতো উপাদান। মুলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে। মুলা হজম শক্তি বৃদ্ধিকারক, শীতল কারক, মূত্রকারক। মুলা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ও চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। কিডনি ও পিত্ততলিতে পাথর তৈরী প্রতিরোধ করে। যকৃতের প্রদাহ, জন্ডিস হলে মুলা বেশ উপকার সাধন করে। এছাড়া মুলা মুখের রুচি বাড়িয়ে ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। মুলা দেহের অর্শ্ব রোগ বা পাইলস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে খুবই উপকার সাধন করে।
পুষ্টি উপাদান ঃ পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম কাবার উপযোগি কাঁচা মুলাতে পুষ্টি উপাদান নি¤œরুপ ঃ
জলীয় অংশ ৯৫.৩ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, শর্করা ৬.৮ গ্রাম, প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, আঁশ ০.৮ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩২ কিলোক্যালরি, ভিটামিন বি ০.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩৫ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম, ক্যারটিন ৭ ইউনি, পটাসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১.৩ মাইক্রোগ্রাম, জিংক ০.৩ মিলিগ্রাম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ৩১ মিলিগ্রাম, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড ১৭ মিলিগ্রাম।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে ১০০ মুলা পাতার শাকে পুষ্টি উপাদান নি¤œরুপ ঃ
জলীয় অংশ ৯০.৮ গ্রাম, প্রোটিন ৩.৮ গ্রাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.৬ গ্রাম, আঁশ ১ গ্রাম, শ্বেতসার ২.৫ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ বা ক্যারোটিন ৯৭০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৪ মিলিগ্রাম, বি২ ০.১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৬৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫৯ মিলিগ্রাম, আয়রন বা লৌহ ৩.৬ মিলিগ্রাম, খাদ্য শক্তি ৪০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম।
ঔষধী গুণ ঃ * যাদের খাওয়ার রুচি খুব কম তারা ভাত বা রুটি খাওয়ার সময় কাঁচা মুলা টুকরা করে বা সালাদ করে খেলে হজম হয় খুব তাড়াতাড়ি। তার সাথে মুখের রুচি ও খিদে বেড়ে যায়।
* টাটকা মুলার রস অর্শ নিরাময়ের একটি কার্যকর খাদ্য ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা অর্শ রোগে ভুগছেন তারা টাটকা মুলার রস ৬০-৯০ মিলিলিটার মাত্রায় সকাল বিকাল খান উপকার পাবেন।
* যারা জ্বরে ভুগছেন তারা নিয়মিত পরিমাণে মুলা খান জ্বর কমে আসবে মুখের রুচিও বাড়বে। জ্বর সারার গুণ মুলাতে আছে। তবে মনে রাখবেন জ্বর কোনো রোগ নয় অন্য কোনো রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
* মুলার পাতায় যথেষ্ট পরিমাণে নানা গুণ আছে। যাদের প্র¯্রাব কম হয় ও প্রস্রাব নির্গমনের সময় ব্যথা করে অথবা মূত্রথলির প্রচন্ড ব্যথা হয় তারা মুলা পাতার রস এক কাপ পরিমাণ বা ৭০-১০০ মিলিলিটার প্রতিদিন ১ বার করে ১৫ দিন খান সমস্যা কমে আসবে তার সাথে প্রস্রব ও পায়খানা পরিষ্কার হয়ে শরীরের ঘ্লানি বেরিয়ে আসবে।
* মুলা পাতায় প্রচুর আঁশ আছে তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন অর্থাৎ পায়খানা শক্ত হয় বা নিয়মিত পায়খানা হয় না তারা প্রতিদিন মুলা, মুলা শাক ও মুলার তরকারি খান উপকার পাবেন।
* ২ চামচ পরিমাণ মুলার পাতার রসের সাথে একটু সোডিয়াম বাই কার্বনেট মিশিয়ে খেলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয়। কোনো কারনে প্রস্রাব জমে থাকার কষ্ট দূর হয়। * শীতকালে কাঁচা মুলা খেলে খাবার সহজে হজম হয় ও শরীরের পুষ্টি হয় কাজে উৎসাহ বাড়ে।
* গুরুপাক খাবারের পর বা বেশী খেলে যাদের পেটে ব্যথা বা গ্যাস হয় তারা মুলার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খান সমস্যা কমে আসবে।
* স্বরভঙ্গ, হুপিং কাশি, ব্রংকিয়াল, গোলযোগ বা বুকের অন্য কোনো রোগে ১ চামচ তাজা মুলার রস সমপরিমানে মধু ও সামান্য লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন ২/৩ বার খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
* যেসব মায়ের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা নিয়মিত মুলা খান বুকে দুধের পরিমাণ বাড়বে শিশু পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে।
* যেসব মহিলার নিয়মিত মাসিক হয় না কোমরে বা পেটে ব্যথা হয় তারা নিয়মিত মুলা খান উপকার পাবেন।
* মুলার বীজ পিষে তার সাথে পেয়াজের রস মিশিয়ে শরীরে সাদা দাগ হলে তাতে তা লাগান এবং মুখের কালো দাগ (ছুলি বলে) হলে মুলার রসের সাথে মধু মিশিয়ে লাগান সেরে যেতে পারে।
* মৌমাছি অথবা যেকোন পোকা কামড়ের স্থলে মুলার রস লাগিয়ে দিন জ্বালা যন্ত্রণা ও ফোলা কমে যাবে। খাওয়ার আগে মুলা খেলে খাবার ভালো হজম হয় না। টক ঢেকুর ওঠে। পেটে গ্যাস হয়। তাই মুলা খাবেন কিছু খাওয়ার পর বা খাবারের সাথে। খাবারের পরে খাওয়া সবচেয়ে ভালো। মনে রাখবেন সব সময় কঁচি মুলা খাবেন। মুলা শক্ত হয়ে গেলে খাবেন না।
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।