Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেনা। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আহত হচ্ছে অনেকে। গতকালের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তেলবাহী লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু, পটিয়ায় বাসের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী, বন্দর থানায় এক গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়ায় দুই বাসযাত্রী, পুলিশের এক উপপরিদর্শক, এক মোটরসাইকেল আরোহী, নাটোরে ট্রাক চালকসহ দু’জন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় এক বৃদ্ধ এবং শরীয়তপুরে এক হেলপার নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার খুলনা শহরে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক দম্পতি এবং ফেনী, লালমনিরহাট, গাজীপুর, সাতক্ষীরা ও মাদারীপুরে সাত জন নিহত হয়েছে। শনিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ট্রাক চাপায় একজন উদীয়মান ফুটবল খেলোয়াড়ের স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিহত হয়েছে, তিনিও গুরুতর আহত। একই দিনে সাভারের আশুলিয়ায় একটি মিনিবাস এক পুলিশ কর্মকর্তাকে চাপা দিয়েছে মোটরসাইকেলসহ। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এভাবেই সড়কে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এক হিসাবে দেখা যায়, গত প্রায় পৌনে দু’বছরে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশী মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের পরও সড়ক দুর্ঘটনা মোটেই কমেনি। বরং বেড়েছে এবং বাড়ছে। আশা করা গিয়েছিল, আন্দোলনের ফলে সড়কে শৃংখলা ফিরবে, চালক ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। এর ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমবে। এর কোনোটাই হয়নি। এতবড় আন্দোলন এক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক প্রভাবই ফেলতে পারেনি। সব কিছু চলছে আগের মতোই। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ আন্দোলন তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতা থেকে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তাদের চোখ খুলেছে। কয়েকদিন হৈ চৈ, সড়কে কড়াকড়ি, ট্রাফিকসপ্তাহ পালন ইত্যাদির মাধ্যমে তারা দায়িত্ব শেষ করেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার বিশেষ উল্লেখযোগ্য কারণগুলো মোটামুটি সকলেরই জানা। অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন উপেক্ষা, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা, সড়কে ক্ষুদ্র ও কমগতির যানবাহন বিশেষত, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশার অবাধ চলাচল, ভাঙচোরা ও বাঁকবহুল সড়ক, সড়কে হাটবাজার ইত্যাদি অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর তথ্য মতে, দেশে গাড়ি আছে ৩৫ লাখ। আর চালক আছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার। এই ১৮ লাখ ৭০ হাজার চালকের প্রত্যেকেই যদি একটি করে গাড়ি চালায়, তাহলে অবশিষ্ট গাড়িগুলো চালাচ্ছে কারা? নিশ্চয় অদক্ষ ও আধাদক্ষ চালাক। প্রশিক্ষণ নেই, দক্ষতা নেই, লাইসেন্স নেই এমন চালকরা গাড়ি চালালে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ২০ হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষ সেসব দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ চালকের নিশ্চয়তা বিধান করা কি অসম্ভব? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো যথাযথ দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করলে মোটেই অসম্ভব নয়। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ আর আই’র গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা। চালকদের একাংশ সড়কে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালায়। এই প্রতিযোগিতাই অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিযোগিতা বন্ধে চালকদের সচেতনতা যেমন কাজে আসতে পারে তেমনি গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক পুলিশের কঠোর অবস্থান সুফল দিতে পারে। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে বাধা হলো, দায়িত্বে অবহেলা ও উৎকোচ গ্রহণ। সড়কে বিশেষ করে কিছু মহাসড়কে অযান্ত্রিক যানবাহন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং নসিমন-করিমন-ভটভটি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা যায়নি। এখনো এসব যানবাহন মহাসড়কগুলোতে দিব্যি চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশসহ মহাসড়ক পুলিশ ইচ্ছা করলেই এদের চলাচল রহিত করতে পারে। একথাও কারো অজানা নেই, সড়ক মহাসড়কে দখল, হাটবাজার ও দোকানপাট উচ্ছেদের নির্দেশনাও কার্যকর হয়নি বা হয়না। এমতাবস্থায়, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কিভাবে কমতে পারে?
সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রুখতে আমরা আসলেই আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির দিক দিয়ে ইতোমধ্যেই আমরা বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করেছি। এই অখ্যাতি, দুর্নাম এবং জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি রোধ করতে যে ধরনের কার্যব্যবস্থা, সচেনতা ও তৎপরতা আবশ্যক, তা বলতে গেলে অনুপস্থিত। সড়ক দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারায় কিংবা আহত ও পঙ্গু হয়ে যায়, তাদের পরিবার-পরিজন কী দুর্ঘটে পতিত হয়, তা ব্যাখ্যা বুঝানো যাবে না। বলা বাহুল্য, সড়ক দুর্ঘটনার চিহ্নিত কারণগুলো দূর করা মোটেই অসম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্বশীল হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়। এক্ষেত্রে যাত্রী ও পথচারিদের সচেতনতা ও আইন মান্য করা জরুরি। অতিরিক্ত যাত্রী হওয়া কিংবা যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়া উচিৎ নয়। দুর্ঘটনার জন্য যাত্রী-পথচারীদের অসচেতনতা, অপরিনামদর্শিতা ও আইন অমান্য করার প্রবণতা বিশেষভাবে দায়ী। সংশ্লিষ্ট সকলের আইন মান্য করা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আইন মানতে বাধ্য করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা ও আইনের মান্যতা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন