Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রিয়নবী সা. এর অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য ও অনুপম চরিত্র

মুহাম্মদ বশির উল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

শেষ

হযরত বারা রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেছেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর দৈহিক গঠন ছিলো মধ্যম ধরনের। উভয় কাঁধের মধ্যে দূরত্ব ছিলো এবং কেশরাশি ছিলো দুই কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত। আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাকাদি পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর চাইতে বেশি সুন্দর কোন কিছু কখনো দেখিনি। (বুখারী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০৩)
হযরত বারা রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু আরও বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মুখমন্ডল ছিলো সবচেয়ে সুশ্রী এবং তাঁর আচার-আচরন ছিলো সর্বোত্তম। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মুখমন্ডল কি তলোয়ারের মতো ছিলো? উত্তরে বলা হলো, না! পূর্ণ চন্দ্রের মতো ছিলো। অন্য এক বর্ণনায় আছে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মুখমন্ডল ছিলো গোলাকার। (বুখারী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০২; মুসলিম ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৯)
রাবী’ বিনতে মুয়ায়েজ রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন, তোমরা যদি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে দেখতে তাহলে মনে হত যে তোমরা উদিত সূর্য দেখছো। (মিশকাত ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৭)
হযরত জাবির বিন সামুরাহ রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন, আমি এক চাঁদনী রাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে দেখলাম। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর উপর রক্তিম আভা ছড়ানো ছিলো। আমি তখন একবার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর দিকে একবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলাম, চাঁদের চাইতেও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বেশি সুন্দর। (তিরমিযি, মিসকাত ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৭)
হযরত আবু হুরায়রা রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর চাইতে অধিক সুন্দর আর অন্যকোনো কিছুই দেখি নাই। মনে হত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মুখমন্ডলে সূর্য বিরাজমান করছে। তাছাড়া আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর চাইতে দ্রুত অন্য কোন কিছুই দেখি নাই। মনে হত, পৃথিবিটা যেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর জন্য গুছানো হচ্ছে। আমরা যখন পরিশ্রান্ত হয়ে পরতাম, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কোন চিন্তাই করতেন না। (তিরমিযী ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৬; মিশকাত ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৮)
হযরত কা‘ব বিন মালিক রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম যখন প্রফুল­ থাকতেন তখন তাঁর মুখমন্ডল এরুপ চমকিত হত, মনে হত যেন তা চন্দ্রের একটি অংশ। (বুখারী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০২)
একবার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম হযরত আয়েশা রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় যখন তাঁর দেহ মুবারক ঘর্মাক্ত ছিলো। তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মুখমন্ডল উজ্জ্বলতায় ঝলমলিয়ে উঠল। এ অবস্থা দেখে হযরত আয়েশা রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু আবু কাবীর হুযাইলির এ কবিতা আবৃত্তি করলেন। ‘‘তাঁর মুখমন্ডলের উজ্জ্বলতার দিকে যখন কেউ দেখবে তখন তা এমন ভাবে আলোকিত দেখবে যেন ঘনঘটার মধ্যে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।’’
হযরত আবু বকর রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে দেখে আবৃত্তি করতেন। ‘‘প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ছিলেন বিশ্বাসী, মনোনীত এবং পছন্দনীয়। ভালোর দিকে আহবান জানাচ্ছেন যেন পূর্ণমাত্রার আলোতে যা থেকে অন্ধকার লুকোচুরি খেলছে।’’ (খোলাসাতুস সিয়ার : পৃষ্ঠা ২০)
যে বিষয়টি উল্লেখ না করলেই নয়, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর অতুলনীয় ব্যক্তি-বৈশিষ্ট্য ও অনুপম চরিত্র-মাধুর্য সম্পর্কে ইতোপূর্বে যে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে তাকে সুবিশাল সমুদ্র সৈকতের কয়েকটি উপলখণ্ড ব্যতিত আর কী ই-বা বলা যেতে পারে ? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর চরিত্রের রূপরেখা বা আলোখ্য চিত্রণ কোন সাধারণ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তা তিনি এ বিষয়ে যতই বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ হোন না কেন। যেমনটি অসম্ভব এর তলদেশ পরিমাপ করা।
পরিশেষে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর অতুলনীয় ব্যক্তি-বৈশিষ্ট্য ও অনুপম চরিত্র-মাধুর্য সর্ম্পকে আর একটু উদ্বতি বিশ্লেষণ উপস্থাপনা করে বক্ষ্যমান প্রবন্ধের ইতি টানতে চাই।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ছিলেন সর্বপ্রকার মানবিক গুনে গুণান্বিত এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। ধৈর্যশীলতা, সহনশীলতা, দয়ার্দ্রচিত্ততা, সংবেদনশীলতা, পরহিতব্রততা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি যাবতীয় মানবিক গুণাবলি বিকাশ ঘটেছিলো তাঁর মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে। মানব জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বহুবিধ গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিগণের মধ্যেও কোন না-কোন দোষত্রুটি পরিলক্ষিত হত। কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ছিলেন সকল রকম মানবিক গুণেগুণান্বিত এমন ব্যক্তিত্ব, যে ক্ষেত্রে কস্মিণকালেও কোন ব্যাপারে সামান্যতম ত্রুটিবিচ্যুটিও পরিলক্ষিত হয় নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রিয়নবী

২৯ জুন, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ