চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলিমদের জন্য একটি কেন্দ্রবিন্দু হতে চায় উজবেকিস্তান। মুসলিমদের আকর্ষণ করার মাধ্যমে দ্বিতীয় মক্কা হিসেবে পরিচিতি পেতে চায় দেশটি। মধ্য এশিয়ার জনবহুল দেশ উজবেকিস্তানে রয়েছে বহু পুরনো মসজিদ এবং মাজার যেগুলো বেশ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়। সামরকান্দ এবং বুখারা শহরে এসব মসজিদ এবং মাজারের বেশিরভাগ অবস্থিত। উজবেকিস্তানের লক্ষ-লক্ষ মানুষের জন্য এসব মসজিদ এবং মাজার পবিত্র জায়গা। কিন্তু দেশটির সরকার মনে করে এসব স্থাপনার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করা যায়। কয়েক দশক বিচ্ছিন্ন থাকা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর উজবেকিস্তান এখন উন্মুক্ত হয়েছে।
সামরকান্দ শহরে বেশ কিছু সমাধি রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে সম্রাট তামেরলেন, জ্যোতির্বিদ উলুংবেক এবং ইসলামের নবী মোহাম্মদের চাচাতো ভাই কুসাম ইবনে আব্বাস-এর সমাধি। সপ্তম শতকে তিনি এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটিয়েছেন সামরকান্দ-এ একটি সমাধি আছে যেটি অন্য সমাধিগুলোর চেয়ে আলাদা। মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়ের চূড়ায় এ সমাধি অবস্থিত। প্রতিদিন সকালে হাজার-হাজার মানুষ সেখানে যায়। যারা সেখানে প্রার্থনা করতে যায় তারা শুধুই মুসলিম নয়। কারণ এ জায়গায় এমন এক ব্যক্তির সমাধি আছে যিনি ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে ঈশ্বরের একজন বার্তাবাহক বা নবী হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর নাম হচ্ছে দানিয়েল। মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা এখানে এসে নিজেদের ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করে, বলেছিলেন সামরকান্দের এক তরুণ পর্যটক গাইড ফিরদোভাসি। তিনি বলেন, সেন্ট ড্যানিয়েল (দানিয়েল) ছিলেন একজন ইহুদি। কিন্তু আমাদের মুসলিমরা তাকে শ্রদ্ধা করে। কারণ তিনি আল্লাহর একজন নবী। দিলরাবো নামের এক নারী জানালেন, তিনি তিনি প্রায়ই এখানে আসেন দানিয়েল-এর জন্য প্রার্থনা করতে। তিনি শুধু ইহুদির একজন নবী ছিলেন না, তিনি সকল মানবতার জন্য ছিলেন। আমার নাতির নাম তাঁর নাম অনুসারে রেখেছি, বলছিলেন মিস দিলরাবো। তিনি তাঁর মেয়ে এবং নাতিকে নিয়ে এ সমাধিতে এসেছেন। প্রার্থনায় যোগ দেবার পর সমাধি কাছ থেকে দেখার জন্য তিনি দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দানিয়েল-এর সমাধি একটি অনন্য স্থাপনা। প্রায় ৬৫ ফুট লম্বা এ সমাধি তৈরি করা হয়েছে বালুর রং-এর মতো ইট দিয়ে।
পৃথিবীর যে কয়েকটি জায়গায় বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ আসে দানিয়েল-এর সমাধি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইসরায়েল থেকে আসা সুজান জানালেন, আমি একজন ইহুদি। আমি এখানে প্রার্থনা করতে পারি। একজন খ্রিস্টানও এখানে প্রার্থনা করতে পারে। এ জায়টি মানুষের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে। মস্কো থেকে আসা ক্রিস্টিনা জানালেন, তাঁর বন্ধুরা এখানে এসেছিল অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে। তারা এখন সুস্থ, জানালেন ক্রিস্টিনা। উজবেকিস্তানের সংস্কৃতিতে অনেক মানুষ মনে করে রোগমুক্তি পাবার জন্য এসব মাজার কিংবা পবিত্র স্থানের জাদুকরী ভূমিকা আছে। দানিয়েল-এর সমাধি ১৮ মিটার লম্বা। অনেক মানুষ বিশ্বাস করে সেন্ট ড্যানিয়েল (দানিয়েল) হয়তো অনেক লম্বা ছিলেন, নতুবা তাঁর সমাধি প্রতিবছর লম্বা হয়েছে। উজবেকিস্তানে অনেক সমাধি আছে যেগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ সেখানে যেতে পারতো না।
উজবেকিস্তানের অনেক মানুষ মনে করে সেন্ট্রাল এশিয়ায় ইসলাম অনেক নমনীয়। এখানে ধর্মকে সহিষ্ণু-ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। মাজার দেখতে যাওয়া এবং সেখানে প্রার্থনা করা উজবেকিস্তানের সংস্কৃতির একটি অংশ বলে মনে করেন ইয়োলডোশেভ, যিনি ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। মাজারে যাওয়া কিংবা প্রার্থনা করার সাথে রাজনৈতিক ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। উজবেকিস্তানে সাবেক স্বৈরশাসক ইসলাম করিমভ-এর জামানায় ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহার হয়েছে। তিনি প্রায় ২৬ বছর দেশ শাসন করেছেন। সে সময় অনেক মুসলিমকে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু এখন উজবেকিস্তান পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিওয়েভ ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০১৬ সালে ইসলাম করিমভের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতায় আসেন। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।