Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খুলনায় তৃণমূলের রাজনীতি চাঙ্গা

গায়েবি মামলায়ও দমেনি বিএনপি

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে খুলনায় তৃণমুলের রাজনীতি। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন, মিছিল- সমাবেশ শোডাউনে দলীয় শক্তি-সামর্থ জানান দিচ্ছে আওয়ামীলীগ। সাংগঠনিকভাবে দলটির নেতাকর্মীরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। অপরদিকে গায়েবী মামলা মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি, ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচী ও নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপিও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। 

তবে রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন খুলনার আসনগুলোতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে। খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীক চেয়ে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়েছেন ৩৯ জন। আর ধানের শীষ চেয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপি’র ২২ জন।
সূত্রমতে, দশ বছরে রাজনৈতিক মামলা জটে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ‘গায়েবি মামলা’। কোন ঘটনাই ঘটেনি এমনসব অভিযোগে প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো থানায় মামলা দায়ের হচ্ছে। তাতেও মনোবল হারাচ্ছে না তৃণমূল বিএনপি নেতা-কর্মীরা। একদিকে মামলা, অন্যদিকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন খুলনা বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা।
দলীয় সূত্রমতে, খুলনা মহানগর ও জেলায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল-মতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত দশ বছরে প্রায় হাজার মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি যোগ হয়েছে নতুন আঙ্গিকের মামলা। কোনো ঘটনাই ঘটেনি এমনসব বায়বীয় ঘটনার কাল্পনিক বর্ণনা দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে গায়েবি মামলা করছে বলে অভিযোগ দলটির নেতা-কর্মীদের। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো থানায় দায়ের হচ্ছে এ ধরনের মামলা।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সম্প্রতি পুলিশের দায়ের করা সবক’টি গায়েবি মামলায় নেতা-কর্মীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তারপরও পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই নিত্য-নতুন কাল্পনিক এজাহার সাজিয়ে গায়েবি মামলা রচনা করছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখন আর মামলার ভয়ে ভীত নয়। যে কোনো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফলের জন্য খুলনা বিএনপি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, প্রায় এক যুগ বিএনপি নেতা-কর্মীরা হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলায় জর্জরিত। গায়েবি মামলা দায়ের করে বিরোধী দল-মতের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গ্রেফতার-তল্লাশীর নামে হয়রানি করেছে পুলিশ। স্বৈরাচারের সকল ঘৃণ্য রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে গেছে বহু আগে। একদিকে রাষ্ট্রীয় খরচে ভোট চাইছে ওরা, অন্যদিকে গায়েবি মামলায় আসামি করা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীর সম্ভাব্য এজেন্ট, মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার সক্ষম ব্যক্তি ও আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবার মতো বিএনপি নেতা-কর্মীদের শনাক্ত করে এসব মামলার আওতায় আনা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান ততো বাড়বে। নির্বাচনের আগে এসব মামলা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার আশঙ্কা দলটির। অজামিনযোগ্য এসব মামলায় গ্রেফতার হলে জামিনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত দৌড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। উচ্চ আদালত থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নেতারা আগাম জামিন পাচ্ছেন বটে, জামিনের মেয়াদ নির্বাচনের আগেই শেষও হতে পারে।
এদিকে, খুলনার ৬টি আসন ভাগাভাগিতে টানাপোড়েন চলছে ক্ষমতাসীন আ’লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে। ক্ষমতাসীন দলটির পাশাপাশি জোট শরীকদের সম্ভাব্য প্রার্থীর দাবিও জোড়ালো হচ্ছে। বর্তমানে খুলনায় ৬টি আসনের মধ্যে খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ও খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) দাবি করছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, আবার জাসদের (ইনু) গ্রুপের সম্ভাব্য প্রার্থী চায় খুলনা-২ আসন। জেপির পছন্দ খুলনা-৩। তবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায়। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন, ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টি (জাপা) খুলনার ৬টি আসনেই সম্ভাব্যপ্রার্থী প্রস্তুত করলেও খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ও খুলনা-৬ আসনে মহাজোটের সমর্থন চাইছে জাপা।
খুলনা-১ আসনে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় এবং খুলনা-৬ আসনে একই দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু জোটের মনোনয়ন চাইছেন।
১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, দল যাকে যেখানে মনোনয়ন দেবে সকলকেই সেখানে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেহেতু জোটগতভাবে নির্বাচন হবে, সেহেতু জোটের সকলকেই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে। মনোনয়ন দেবেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোটের শরীকরা তার কাছে চাইতেই পারেন, তবে মনোনয়ন ঘোষণা দেবার পর কেউ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করতে পারবেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ