পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ডজন খানেক দেশ গত এক যুগ থেকে বিমান ব্যবসার প্রতি অধিক মনোযোগ দিয়েছে। এখন তারা নিজেদের মধ্যে প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ওদিকে নিত্যনতুন বিমানবন্দর তৈরি থেকে নিয়ে সর্বশেষ মডেলের বিমান কেনার এখন একটা হিড়িক চলছে। কেউ কাউকে তোয়াক্কা না করে প্রত্যেকে যার যার মতো বিশ্বের নামী দামী বিমান কিনছে। অতীতে দেখেছি, যাত্রীবাহী বিমান তৈরিতে আমেরিকার বোয়িং, ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানি শীর্ষে ছিলো। এবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ব্রাজিল ও রাশিয়া। তারাও কম রেইটে অনেক দেশের অর্ডার নিচ্ছে আর বিমান তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ইরান চাচ্ছে, নতুন বিমান কিনে তাদের দেশে একটি শক্তিশালী এয়ার লাইন্স কোম্পানি গড়ে তুলতে। দেশটি যে ৫০০ বিমানের অর্ডার দিয়েছে ওইগুলো পর্যায়ক্রমে ডেলিভারি পেতে সর্বমোট ১০ বছর সময় লাগবে।
এখন আমার কথা হলো, অধিকাংশ মুসলিম দেশে এত অর্থ ডলার আর পেট্রোল আছে বলেই আজকে তরতাজা নতুন বিমান কিনে কোনো বাহাদুরী না দেখিয়ে তাদের উচিৎ আগে ওইগুলোকে কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় তার বিকল্প চিন্তা করা। এ জন্য দরকার নিজ দেশের শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে থেকে নতুন পাইলট, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য দক্ষ কর্মচারী তৈরি করা।
গত বছর নিউ ইয়র্কের একটি পত্রিকায় শীর্ষ খবর ছিলো, বিশ্বের বড় বড় ধনী দেশের এয়ার লাইন্সগুলো যে হারে নতুন নতুন বিমান কেনার অর্ডার দিচ্ছে তাতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে নতুন ৫ লাখ পাইলট দরকার পড়বে। তাই বিত্তশালী মুসলিম দেশগুলোর রাজা-বাদশাহের উচিত, প্রথমে নিজ দেশের শিক্ষিত যুবকদের থেকে পর্যাপ্ত পাইলট বের করা। এ জন্য দরকার সঠিক চিন্তা-ফিকির করে অগ্রসর হওয়া। অর্থ আছে বলেই বাইরে থেকে ভাড়াটিয়া পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার এনে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করা হলে সেটা হবে মারাত্মক বোকামী। আল্লাহ পাকের দেয়া অফুরন্ত পেট্রাডলারের দেশ সৌদি আরব এবারও অস্ত্র কেনার শীর্ষে। দুনিয়ার সব অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কিনে তার ভান্ডারে মজুত করছে। অথচ ওইগুলো অপারেট করার মতো দক্ষ লোকের অভাব থাকায় তারা বাধ্য হয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বাইরে থেকে এক্সপার্ট নিয়ে আসে। মুসলিম বিশ্বের এত অর্থ-ডলার নিজ নিজ দেশে সুনাগরিক ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজে ব্যয় করা হবে উত্তম পন্থা। আমার প্রশ্ন, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ পাইলট তৈরি করতে পারলে মুসলিম দেশগুলো কেনো পারবে না। আমাদের মধ্যে প্রথম দরকার শক্তিশালী ঐক্য ও সীমাহীন আন্তরিকতা এবং সহি নিয়ত।
ভারতের দিকে একটু নজর দেয়া যেতে পারে। সেখানে শত শত পাইলট ট্রেনিং ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল রয়েছে। প্রতি বছর দেশটি উন্নত মানের পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক, নার্স, আইটি ও ইংরেজি শিক্ষক বহির্বিশ্বে রফতানির মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এর মধ্যে মুসলিম বিশ্বের শত শত ফ্লাইটসমূহে হাজার হাজার পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও দক্ষ কর্মী চাকরি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের দেশ আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এখন মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর শাসকদের উচিত ৫/৭ বছরের একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়া। ভাড়াটিয়া পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার আর নয়- অনেক হয়েছে এখন থেকে নিজ দেশে হুমড়ি খেয়ে পাইলট স্কুল
তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে। বছরে হাজার হাজার পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক, নার্স, আইটি এক্সপার্ট ইত্যাদি তৈরি করে বিশ্বকে জানিয়ে দিতে হবে যে, মুসলিম দেশগুলো আর পিছনে নয়, দ্রুত গতিতে সামনের দিকে যেতে বদ্ধপরিকর। এখনো সময় আছে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে বিমান না কিনে, দরকার নিজ দেশের প্রতি অধিক মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি সেক্টরে দক্ষ মানুষ তৈরির ব্যবস্থা করা। দেশের যুব শিক্ষিত ছেলেমেয়েকে পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলা। দক্ষ জনশক্তি কেন বাইর থেকে আনবো? আমরা বাইর থেকে ওদেরকে এনে চাকরি দিচ্ছি এবং বছর শেষে ওরা শত শত বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। নিজ দেশের ছাত্রছাত্রী কি এতই অযোগ্য? প্রতিটি দেশের শাসক যদি সিরিয়াস হন তাহলে আমরা নিজেদের দেশের শিক্ষিত যুব সমাজকে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও সব ধরনের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
২০১৫ ও ১৬ সালে শুধুমাত্র মুসলিম দেশের বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা থেকে আড়াই হাজার নতুন বিমান কিনার অর্ডার পেয়ে এয়ার বাস ও বোয়িং কোম্পানি হিমশিম খাচ্ছে আর ভাবছে সময় মতো ডেলিভারি দিতে পারবে কিনা? তবুও তারা ১০ বছর টার্গেট নিয়ে নতুন নতুন বিমান তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে আমাদের ধনী দেশগুলো যদি নিজেদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে পারে তবে আগামীতে মুসলিম বিশ্বের যে কোনো একটি দেশ এইরকম বিমান তৈরি করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অনেক দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষিত ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছাত্র-যুবকদের ইমিগ্রেন্ট ভিসায় নিয়ে পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত করে লাভবান হচ্ছে। তাদের ভালো উদ্যোগকে আমরা অনুসরণ করতে পারি। তাই বলছিলাম, বিত্তশালী সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের উচিত ষোলআনা আন্তরিকতার সাথে একটি মহাপরিকল্পনা যদি নেয়া হয় এবং বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে থেকে লাখ লাখ উচ্চ শিক্ষিত যুবক হায়ার করে নিজ নিজ দেশে এনে পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়ে পাইলট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি এক্সপার্ট, নার্স, ইংরেজি শিক্ষক ইত্যাদি তৈরি করা। এটা করা হলে বছরে লাখ লাখ মেধা শক্তি বের হবে। এতে ওইসব দেশ এবং মুসলিম উম্মাহ লাভবান হবে।
লেখক: গবেষক ও সমাজসেবক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।