Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি আলোচনায় সম্মত ইয়েমেনে যুদ্ধরত পক্ষগুলো : জাতিসংঘ দূত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ইয়েমেন যুদ্ধ অবসানে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সুইডেনে অনুষ্ঠিতব্য এক শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘ দূত মার্টিন গ্রিফিতস। শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ইয়েমেন সরকার ও হুথি বিদ্রোহীরা ‘নতুন প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে। তিন বছরের এই নৃশংস যুদ্ধে ইয়েমেনের লাখ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে। সামনের সপ্তাহে হুথিদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনার আয়োজন করতে যাওয়ার কথা জানালেও মূল আলোচনা কবে শুরু হবে তা নিয়ে কিছু জানাননি গ্রিফিতস।
মার্টিন গ্রিফিতস বলেন, ‘ইয়েমেনি পক্ষগুলোর নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে আমি দৃঢ় নিশ্চয়তা পেয়েছি। অবশ্যই প্রথমে ইয়েমেন সরকার এবং পরে হুথি বিদ্রোহীদের নেতৃবৃন্দ আলোচনায় বসতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে’। তিনি জানান, চূড়ান্ত আয়োজন করতে তিনি আগামী সপ্তাহে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানাতে যাওয়ার আশা করছেন। ওই সফরে হুথি প্রতিনিধি দলের সুইডেন সফরের প্রয়োজন পড়লে তার ব্যবস্থা করা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
সা¤প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, ইয়েমেন যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই যুদ্ধ অবসানে নতুন দফা শান্তি আলোচনায় নভেম্বরে অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করা হলেও তা ডিসেম্বরে পিছিয়ে গেল। গ্রিফিতস বলেছেন, সউদী আরব ও আমিরাত জোট সানার বাইরে বের হওয়ার পথ প্রস্তুত করার যৌক্তিক ব্যবস্থা করতে দেওয়ায় সম্মত হয়েছে। বন্দি ও আটককৃতদের বিনিময়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি হওয়ার কথাও জানান তিনি। পরিকল্পিত আলোচনা অনুষ্ঠানের আত্মবিশ্বাস তৈরির অংশ হিসেবে ওই চুক্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ইয়েমেনের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মন্তব্য করে গ্রিফিতস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মাঠ পর্যায়ে লড়াই জোরালো হলে শান্তি প্রক্রিয়া লাইনচ্যুত হতে পারে।
স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে সউদী-আমিরাত জোট ও হুথি বিদ্রোহীদের আহ্বান জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামীকাল সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে ইয়েমেন সংঘাত নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করবে যুক্তরাজ্যের দূত কারেন পিয়ার্স। ২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধে রিয়াদ জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সউদী আরবের কাছে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত হোদায়দাহ বন্দরে অভিযান স্থগিত করে সরকারপন্থী একটি বাহিনী। ওই বন্দর দিয়েই ইয়েমেনের বেশিরভাগ পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। সউদী জোটের আশঙ্কা, হোদায়দাহ বন্দর দিয়ে হুথি বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র পাচার করা হয়ে থাকতে পারে। জাতিসংঘ দূত জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি হোদায়দাহ বন্দরও ঘুরে দেখবেন। আর বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘের অধীনে নিয়ে ত্রাণ আমদানি ও সরবরাহের বিষয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে তার। রাজধানী সানার বাসিন্দারা একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য মধ্যস্থতা করতে আন্তর্জাতিক সস্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সানার বাসিন্দা হাসান আব্দুল কারিম ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘আমরা এই যুদ্ধ, রক্ত আর হত্যা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি’। সাত সন্তানের এই বাবা বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। এখন ইয়েমেন পুনর্গঠনের সময়। আর পুনর্গঠনের জন্য ইয়েমেনের প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রয়োজন।’
স¤প্রতি ইয়েমেন থেকে ঘুরে এসে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বাসলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ৬ মাসের মধ্যে দেশটিতে পুর্ণমাত্রায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, ইয়েমেনের ৮০ লাখ মানুষ এখন তীব্র খাদ্যাভাবে রয়েছে। এছাড়া এক কোটি ৪০ লাখ বা ইয়েমেনের অর্ধেক মানুষই বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়েমেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ