পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। সবে মাত্র সংগ্রাম শুরু। নানা ষড়যন্ত্র গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এত সহজ নয়। ২৩ বছরে পাকিস্তানে (১৯৪৭-১৯৭০)। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ না দেওয়ার কারণে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর চারবার গণতন্ত্র আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ১৯৭৫, ১৯৮১, ২০০৭ (ওয়ান ইলেভেন) এবং ২০১৪ সাল এই চারবার আমরা গণতন্ত্রের পাহারাদার হিসাবে মুখ্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থের কারণে। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত একান্ত প্রয়োজন। দরকষাকষি করে জনগণের ঐক্য মজবুত হয় না। বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্তানের কথায় বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেবেন- এরকম ঘটনা ২০১৮ সালে পড়ন্ত বেলায় এসে জাতিকে দেখতে হলো। দেশে বহুমত, বহুদলের সংমিশ্রণ আছে। এটা বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। তবে ছোটখাট মতভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি মনে করলে তখনই আপনা আপনি কর্তৃত্বপরায়ন সরকারের পতন ঘটে এবং তখন দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম হয়।
৬ নভেম্বর ২০১৮ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসমাবেশে বর্ষীয়ান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মালিক হলো জনগণ আর সরকার হলো জনগণের সেবক। দেশে সেভাবেই চলবে জনগণ যেভাবে চাইবে। দেশের প্রকৃত মালিকরা সচেতন হয়েছে। জেগে উঠেছে। গুলি, টিয়ার সেল এবং গরম পানি ছিটিয়ে তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়। জনগণের দাবি উপেক্ষা করলে যে শাস্তি পেতে হবে তা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারছে না। যেমনটি অতীতের সরকারও ভাবতে পারেনি। কিন্তু তারা এখন শাস্তি ভোগ করছে ক্ষমতা হারানোর পর। অন্যায়কারীদের শাস্তি ভোগ করতে হবে এটাই চিরন্তন সত্য। কিন্তু এ সরকার বার বার সংবিধানের কথা বলে উল্টো সংবিধান লঙ্ঘন করছে। জনগণকে কেন সরকার ভয় পাচ্ছে। কারণ সরকার জনগণের অধিকার বঞ্চিত করছে। এর জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। নানাভাবে সংবিধান লঙ্ঘনের জবাবদিহি আদায় করে ছাড়বে জনগণ। এই বর্ষীয়ান নেতা আরো বলেছেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে এই সরকর। নিজেরা আইন তৈরি করে দেশের সচেতন মানুষকে গ্রেফতার করাও বেআইনী কাজ। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে ডা. কামাল হোসেন বলেন, তার মুক্তি এখন আর চাওয়ার বিষয় নয়, তার মুক্তি এখন হওয়ার বিষয়। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই মন্তব্য করেছেন, চট্টগ্রাম নসিমন ভবনের সম্মুখস্থলে সমাবেশ স্থলটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তেমনি ৬ই নভেম্বর ঢাকা সোহওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা ও মহাসমুদ্রে রূপ ধারণ করে। উক্ত জনসভায় এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, পুরো বাংলাদেশের মালিক জনগণ। লালদীঘির ময়দান, সোরওয়ার্দী উদ্যান- সব জেলা-উপজেলা শহরের ময়দানগুলোর মালিক জনগণ। তাদের মাঠে জনসমাবেশ করতে অনুমতি লাগবে কেন? মানুষকে প্রায় ৪ ঘণ্টা কষ্ট সহ্য করে আমাদের বক্তব্য শুনতে হয়েছে। নির্ধারিত লালদীঘির ময়দানে এই জনসভা হলে জনগণের কষ্ট সহ্য করতে হতো না। এসব ময়দান জনগণের জন্য নির্মাণ ও বরাদ্দ করা হয়েছিল। অথচ তারা নিজেদের মালিকানা মাঠে নিজেরা বক্তব্য দিতে পারছে না অন্যদের বক্তব্য শুনতে পারছে না। এটা একটা দুঃখজনক ব্যাপার। আমরা ভুলে যাই কেন যে, একদিন আমাকেও বিরোধী দলের ভূমিকায় আসতে হতে পারে। তখন যারা সরকারে আসবে তারা যদি বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয় তাহলে তারা কি করবেন? কিছুই করার থাকবে না। পেছনের দিকে তাকিয়ে তখন ভাবতে হবে এ কাজতো আমরাও করেছিলাম। ক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দবস্ত নয়। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতারাও ক্ষমতায় সাড়ে তিন বছরের বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। আইয়ুব ইয়াহিয়া, এরশাদ, জিয়া কেউই টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান সরকার সংবিধান সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন করেছে। সংবিধানকে নিজেদের মতো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন, ভেবেছে এটা করলে পৈত্রিক সূত্র ধরে আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। ধ্রæব সত্য যে, যারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে অসাংবিধানিক কাজ করেছেন তাদের একদিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। জনসভা করা জনগণের মৌলিক অধিকার। সিলেটে ঐক্যফ্রন্টকে জনসভা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে আদালতের মাধ্যমে অনুমতি পাওয়া গেছে। একদিন না একদিন এসব কুশাসনের বিচার করতেই হবে। আমরা মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা চাই, তেমনি তাদের ভোটেরও নিশ্চয়তা চাই, আমার ভোট আমি দেব অন্যরা কেন আমার ভোট দেবে?
আমরা সবাই জানি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বলা হয়েছিল, এটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন পরবর্তী অল্প সময়ের ব্যবধানে আলাপ আলোচনা মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু এর পর ৫ বছর নির্বাচন দেয়া হয়নি। এটা সংবিধান বিরোধী। এত বড় অনিয়ম করার পরও শক্তি প্রদর্শন করে পার পেয়ে গেছে। এবার সেটা হবে না। জনগণের জন্য তৈরি করা ৭ দফা দাবি সেভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর অসংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় আসতে না পারে। আসলে আমাদের ৪৭ বছরের ইতিহাস থেকে জনগণ শিক্ষা নিলেও রাজনীতিবিদরা শিক্ষা নেয়নি। তার জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভোগান্তি বেড়েছে। রাজনীতিকদের ভুলের কারণে আমাদেরও ভোগান্তি বেড়েছে। উল্লেখ্য, এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১০ বছর যেমন লড়াই করতে হয়েছে। তেমনি বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ গণতন্ত্র এবং অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জন্য লড়াই করেছে। জনসভা গণতন্ত্রের বহু অংশের একটি অংশ মাত্র। জনগণ যাকে ভাল মনে করবে তাকেই ভোট দেবে। সরকার তো অনেক উন্নয়ন করেছেন তাহলে জনগণকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। সরকারের ভয় একটি জায়গায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যেদিন বাতিল হয়, সেদিন থেকেই তো জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই কলঙ্কের বোঝার ভার যদি তারা সইতে না পেরে সমুদ্রে ডুবন্ত জাহাজের মত ডুবে যায়। হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, গায়েবি মামলা এবং হাজার হাজার মানুষকে যারা খুন করেছে তাদের তো বিচার হবে, এ ধরনের আশঙ্কাও তাদের মধ্যে কাজ করেছে। জেলে যাওয়ার পূর্বে খালেদা জিয়া একটি কথা অতি উচ্চমনের মানসিকতার জোরে বলেছিলেন- আমি নাও থাকতে পারি, তবুও শেষ কথা বলছি, জনগণের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত।
বেগম জিয়ার সেই কথার প্রতিধ্বনি আকাশে-বাতাসে এখন প্রবল শক্তিশালীরূপে আছড়ে পড়বে সমুদ্রের কিনারার জলোচ্ছ্বাসের মতো। গণগ্রেফতার তার পূর্ব লক্ষণ। এটা সমুদ্রের নিম্ন চাপ হলে যেমন হয় সেরকম একটা অবস্থা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে। ডা. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট থেকে আগামী দিনের সুন্দর ও পরিছন্ন জীবনের দিক নির্দেশনা আসবে। বেগম জিয়া ও তারেক জিয়া নেই তাতে কিছুই যায় আসে না। লক্ষ-কোটি মানুষের আন্দোলনের জোয়ারে দুষ্টচক্র ভেসে যাবে খড়কুটার মতো। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যারা চায়না তারা ভিন্ন কিছু চায়। সেটা হলো স্থায়ী স্বৈরশাসন। আইয়ুবের স্বৈরশাসনে, এরশাদের স্বৈরশাসনে দেশের প্রচুর উন্নয়ন হয়েছিল। কিন্তু গণতন্ত্রের উন্নয়ন যেটা-সেটা হলো প্রকৃত উন্নয়ন, সেটা তারা দিতে পারেনি বলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখনো মানুষ আইয়ুব ইয়াহিয়া, এরশাদকে স্বৈরশাসক বলে ডাকে। আমরা চাইনা এখনো হাতে সময় আছে, দেশের মানুষকে একটি সুষ্ঠ ও অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়ে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, আরেকটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন শাসকদল আওয়ামী লীগ গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়ে করতে যাচ্ছে। এটা অনেকটা দৃশ্যমান হলেও সামনের দিনগুলোতে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটতে পারে। আমরা চাই সরকারের মধ্যে সুবুদ্ধির উদয় হোক। কেননা মানুষ ভাবছে, পুরো প্রশাসন যখন দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সুসজ্জিত, তখন আমার ভোট আমি দিতে পারবো তো?
লেখক: গ্রন্থকার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।