Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসামে বৃদ্ধের নাগরিকত্ব বাঁচাল ৬৭ বছরের পুরনো সার্ভিস বুক!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৫:৩৫ পিএম

সরকারি অফিসে কোণে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত নথি খুবই পরিচিত দৃশ্য। চরম অবহেলায় বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা ওই ‘আবর্জনার’ স্তূপ থেকে খুঁজে পাওয়া ৬৭ বছরের পুরনো একটি সার্ভিস বুক-ই শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্ব রক্ষা করল এক ৯০ উর্দ্ধ বৃদ্ধের।

অধুনা আসামের বাসিন্দা শচীন্দ্রকুমার বিশ্বাস এক সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী ছিলেন। নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি)-এর সময় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেই নিয়োগপত্র দাখিল করেছিলেন তিনি। সেই নথি যাচাইয়ের জন্য এ রাজ্যে পাঠিয়ে দেন এনআরসি কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র অনুসারে ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর শচীন্দ্রবাবুকে ‘আর্টিজেন অ্যাসিস্ট্যান্ট, টেক্সটাইল ডেমনস্ট্রেশন পার্ট‘ হিসেবে নিয়োগ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু সেই নথির সত্যতা এত দিন যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কারণ, প্রথমত, ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজের অস্তিত্বই এখন আর নেই। কালক্রমে তা ভেঙে তৈরি হয়েছে শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বস্ত্রের মতো দফতর। দ্বিতীয়ত, শচীন্দ্র ১৯৮৭ সালে অবসর নেন। অবসরের তিন দশক পরে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের কোনও বিধান আইনে নেই। এই ধরনের নথি হয় নষ্ট করে ফেলা হয়, না হয় কালের নিয়মে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে যাচাই না-হওয়া নথি এনআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। আর ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল শচীন্দ্রবাবুর ভবিষ্যৎ নিয়ে।
কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, এনআরসি কর্তৃপক্ষ যে নথি পাঠাবেন, তা একবারে যাচাই করা না-গেলে সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠানো হবে না। বরং আরও কিছুটা সময় নিয়ে খোঁজ চালানো হবে। সেই কাজ করতে গিয়েই নব মহাকরণের নথি বোঝাই একটি ঘর থেকে সম্প্রতি পাওয়া গিয়েছে শচীন্দ্রবাবুর সার্ভিস-বুক। এক আধিকারিকের কথায়, “জমি সংক্রান্ত নথি চিরকালের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। কিছু নথি তিন বছর পর্যন্ত রেখে দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিছু নথির সংরক্ষণের সময় আরও কম। কোনও কর্মচারীর অবসরের কয়েক বছর পরে প্রয়োজন আর থাকে না বলে সার্ভিস বুকের মতো নথি সংরক্ষণ করা হয় না। সে দিক থেকে শচীন্দ্রবাবুর সার্ভিস বুক খুঁজে পাওয়াটা খুবই ব্যতিক্রমী “
সেই সার্ভিস-বুক বলছে, ১৯২৭ সালের ১ ডিসেম্বর শচীন্দ্রবাবুর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। সেখানকার জেলা বয়ন বিদ্যালয় (ডিস্ট্রিক্ট উইভিং স্কুল) থেকে হস্তচালিত বয়ন শিল্পের উপরে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এর পর ১৯৪৮ সালে কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন হুগলির শ্রীরামপুরের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে। ১৯৫১ সালে সরকারি কাজে যোগ দেওয়ার সময় তার মূল বেতন ছিল ৪০ টাকা। চাকরির প্রথম দিকে তিনি কাজ করতেন অবিভক্ত বর্ধমান জেলার অন্ডালে। তার পর চলে যান কোচবিহারে। অবসর নেওয়ার পর থেকে তিনি পাকাপাকি ভাবে আসামের বাসিন্দা। সূত্র: এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আসামে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ