Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিজ তো নয় যেন মরণফাঁদ

৫ বছর ধরে জরাজীর্ণ দুর্ভোগে ১০ হাজার পরিবার

মো. নুরুল ইসলাম, বেতাগী (বরগুনা) উপজেলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিশা বাজার ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের সংযোগ স্থানে বেড়েরধন নদীর উপর ব্রিজটির উপরের পাটাতন ধসে পরায় মরণ ফাঁেদ পরিণত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার প্রায় ১০ হাজার পরিবার। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। সীমাহীন এই দুর্ভোগে পড়েছে ওই ইউনিয়নের ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি কলেজ, ১টি মাদাাসাসহ দেড় হাজার শিক্ষার্থী, ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, মরণফাঁদ জেনেও পার হচ্ছে গ্রামবাসীসহ কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্রিজের দুইপাশ থেকে ভেঙে গেছে। উপরের সিমেন্টের তৈরি পাটাতন ধসে পড়েছে। ভাঙা বিধ্বস্ত কয়েকটি স্পাউনডে মরিচা ধরে লোহার এঙ্গেলের উপর ঝুলে আছে । ওই এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচলের মোটরবাইক, রিকশা, ভ্যান, অটো-রিকশা, ছোট যাত্রী চলাচলের মাহিদ্রা, টেম্পো পরাপারের বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ ৫ বছর যাবত জরাজীর্ণ হয়ে যানবাহন চলাচলের বন্ধ রয়েছে। অনেকসময় ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পরেছেন চালকরা। এক বছর পূর্বে স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রউফ তার নিজ অর্থায়নে কাঠের তক্তা ক্রয় করে সাময়িক ভাবে পাটাতন মেরামত করে দেন। কিন্তু যোগাযোগের তাগিদে প্রতিনিয়ত ব্রিজ দিয়ে মোটরবাইক, রিকশা, ভ্যান, সেই সাথে হাজার হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের কারণে এখন কাঠও ভেঙ্গে গেছে। শিশুরা ঝুঁকিপ‚র্ণ ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ব্রিজটির অবস্থা খুবই নড়বড়ে ও ঝুঁকিপুর্ণ যে কোনো সময় ভেঙে পরে নানা ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে পথচারীসহ স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের। স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থীর চলাচলের একমাত্র ব্রিজটি ঝুঁকিপ‚র্ণ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা।

শফিকুল ইসলাম ইরান জানিয়েছেন,‘ প্রতিদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন থাকতে হয় এবং স্কুল ছুটির সময় অভিভাবকরা বিজ্রের কাছে এসে বিকল্প ব্যবস্থায় নৌকার মাধ্যমে বেড়েরধন নদী পাড়াতে হয়।’ ভুক্তভোগী কয়েকজনই জরুরি ভিত্তিতে ব্রিজ সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জলিশা বাজারের ফল ব্যবসায়ী মো.জসিম জানান,‘ ব্রিজটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বেশি টাকা খরচ করে মালামাল অন্য পথ দিয়ে অথবা নৌকায় নদী পাড় করতে হয়।’ তিনি ক্ষোভ করে এ প্রতিনিধিকে আরো বলেন , ‘শুকনো মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মালামাল বহনের নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় জলিশা বাজারের ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’ সমাজসেবক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন,‘ ৯৫ সালে এই ব্রিজটি নির্মিত হয়। যেকানে সময় বেশি মানুষ উঠলে কখনো ডানে কখনো বামে কাঁত হয়। আবার অনেক স্থানে স্পাউনড না থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী পারাপার হতে হয়। মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন মাথা ব্যাথাই নেই।’

তাছাড়া বেতাগী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বাৎসরিক অনুষ্ঠান মোকামিয়া দরবার শরিফ ও মির্জাগঞ্জের ইয়ারউদ্দিন খলিফার দরবার শরিফ, চতরা ওলামা মঞ্জিল , ছালেহিয়া দীনিয়া মাদরাসায় র্সবদা আসা যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। মির্জাগঞ্জে বাৎসরিক মাহফিলের সময় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত এই পথ দিয়ে।

এ বিষয় হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন,‘ আমার ইউনিয়নের এটি সবচেয়ে ঝুঁকির্পূণ ব্রীজ। এটি জাইকা প্রকল্পের আওতাধীণ করা হয়েছে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে টেন্ডার হবে।’ বেতাগী উপজেরা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে প্রকল্পের অর্থের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন,‘ ব্রিজের এমন বেহাল দশার কথা আমার জানা ছিল না। ব্রিজটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। ’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রিজ

২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১৬ জানুয়ারি, ২০২২
৪ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ