Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গাঁজার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৩১ পিএম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গাঁজার ব্যবহার ক্রমে বিস্তৃত ও উন্মুক্ত হয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যগত উপযোগীতা ও কিছু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিমিত গাঁজা সেবনের উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন। কোনো কোনো দেশে গাঁজার ব্যবহার ও বিপণনে কড়াকড়ি অনেকটা শিথিল করা হচ্ছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বে গাঁজার ব্যবহার ও চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে চলেছে গাঁজার অর্থনৈতিক গুরুত্ব। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিশ্ববাজারে গাঁজার বাণিজ্য সাড়ে ১৪ হাজার কোটি ডলারের বেশী। এই বিশাল বিশ্ববাজারের মাত্র কয়েক শতাংশও ধরতে পারলে বাংলাদেশের সামনে বছরে অন্তত দু’শ কোটি ডলারের বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। গাঁজা চাষ ও ব্যবহার বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও এটা কখনো বন্ধ করা যায়নি। গোপনে ও লুকিয়ে এর চাষ ও অবৈধ ব্যবহার চলছেই। দেশে এর অবাধ ব্যবহার হোক, এমনটা আমাদের কাম্য নয়। তবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত উপায়ে বাণিজ্যিকভাবে গাঁজা চাষ মধ্য দিয়ে তা বিদেশে রফতানীর মাধ্যমে বাংলাদেশে লাভবান হতে পারে। এই বিবেচনায় এর সম্ভাবনা সম্পর্কে যাচাই বাছাই করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
দেশের রফতানি বাণিজ্য গার্মেন্টের মত একক পণ্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা জাতীয় অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণেই সরকার দীর্ঘদিন ধরে রফতানি বহুমুখীকরণের উপর জোর দিচ্ছে। তৈরী পোশাকের পাশাপাশি ওষুধ, হিমায়িত খাদ্য, পাট. চা ও চামড়ার মত রফতানি পণ্যের বাজার নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কুঁচে, ব্যাঙ, কাঁকড়ার মত কৃষিপণ্যের আভ্যন্তরীণ বাজার না থাকলেও এসব পণ্যও বিদেশে রফতনী হচ্ছে। পক্ষান্তরে আভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা ক্রমশ: বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি সত্তে¡ও চা রফতানীর ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারীর মাধ্যমে গাঁজা চাষ ও রফতানির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ওষুধের কাঁচামাল হিসেবেও গাঁজার ব্যবহার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বেড়েছে। কানাডা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সমস্যায় গাঁজার ব্যবহার উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সেখানকার ওষুধের দোকান থেকে গাঁজা কেনার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় অর্ধকোটি কানাডীয় চলতি বছর গাঁজা কিনেছে বলে এক পরিসংখ্যানে জানা যায়। সেখানকার শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ গাঁজা ব্যবহার উন্মুক্ত করার আইনের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে। আইনগত বৈধতা পুরোপুরি নিশ্চিত হলে শুধুমাত্র কানাডায় প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের গাঁজার বাজার সৃষ্টি হবে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভাষ্য থেকে জানা যায়।
এ দেশে গাঁজা চাষ ও ব্যবহারের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। তবে বৃটিশ আমলে সরকারী লাইসেন্স ও নজরদারীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিতভাবে গাঁজা চাষ ও বিপণন হতো। গাঁজাচাষীদের নিয়ে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম সমবায় সমিতিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বৃটিশ আমলেই। নেশাদ্রব্য হিসেবে দেশে গাঁজা বা অন্য কোনো মাদকের ব্যবহার উন্মুক্ত হোক, এমনটা এমনটা কেউ প্রত্যাশা করে না। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গাঁজার মত কৃষিজ পণ্য রফতানি করে শত শত কোটি ডলার আয়ের সুযোগকে অগ্রাহ্য করা বোকামি। পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় অর্থনীতি ও রফতানি বাণিজ্যের বহুমুখীকরণের গুরুত্ব বিবেচনা করেই নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হিসেবে গাঁজাচাষ ও রফতানির সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে। গাঁজা চাষের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও সরকারী নজরদারীর মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে গাঁজা চাষ ও রফতানির বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকতার্রা এ বিষয়ে কিছুই নাকি জানেন না। দেশের যে সব অঞ্চলে লোকচক্ষুর অন্তরালে, অবৈধভাবে গাঁজা চাষ ও অবৈধ কেনাবেচা হচ্ছে তা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে গাঁজার ব্যবহার এবং বৈদেশিক আয়ের খাত হিসেবে গাঁজার বাণিজ্যিক উৎপাদনের সমুহ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, কৃষি ও নারকোটিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে এখন ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।



 

Show all comments
  • Justina ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৪১ পিএম says : 0
    These are really impressive ideas
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাঁজা

২২ জানুয়ারি, ২০২২
২২ জানুয়ারি, ২০২২
আমার এক নিকটাত্মীয় মদ-গাঁজা সেবন করত। স্বামী-স্ত্রী প্রায় সময়মই ঝগড়া হতো, স্বামী তার স্ত্রীর গায়ে অনেক সময় হাত তুলত। স্ত্রীও খুব বেশী একটা ছাড় দিত না। আবার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্য পুরুষের সাথে দীর্ঘ দিন রাতে-বিরাতে গোপন ফোনালাপের অভিযোগ ছিল। তাদের দুই ছেলে আছে। স্বামী তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক একাউন্টে ১৫-১৮ লাখ টাকার সম্পদ রেখেছিল। স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়ে সেগুলো হাত করে নেয় এবং নেশাখোর স্বামীর সংসার করবেনা বলে জানায়। এ অবস্থায় কয়েকটি ব্যর্থ আলোচনা বা বৈঠক হয়। প্রায় এক বছরের বেশী সময় পর স্ত্রী ওই স্বামীকে এক উকিলের মাধ্যমে ডাকযোগে ডিভোর্সলেটার পাঠায়। স্বামী বলে সে ওই লেটার রিসিভ ও সাইন করেনি। এর প্রায় এক বছর পর তার স্ত্রী ওই গোপন ফোনালাপের অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই বিয়ে করে। প্রশ্ন হলো স্ত্রীর এ তালাক ও পরবর্তী বিয়ে ইসলামের বিধান মতে সঠিক ভাবে হয়েছে কি না? আর না হলে এখন করনীয় কি?
১১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন