Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্মম হত্যাকান্ডে নাগরিকরা উদ্বিগ্ন

| প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:২৪ এএম, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চার যুবকের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। আড়াইহাজার থানার ওসি এমএ হক জানিয়েছেন, ভোরে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি লাশ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে। মাথায় আঘাত রয়েছে প্রতিটি লাশের। তবে সে আঘাত গুলির কিনা বলতে পারেনি পুলিশ। লাশগুলোর পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ওসি আরো জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, অন্য কোথাও মেরে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। লাশগুলোর পাশ থেকে দুটি দেশীয় পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। এরা ডাকাত কিনা তা নিয়েও তদন্ত চলছে। নির্বিচার আঘাতের চিহ্ন থাকা ক্ষতবিক্ষত চার যুবকের লাশ দেখে এলাকাবাসী যেহেতু চিনতে পারেনি, সেহেতু ধরেই নেয়া যায় তারা ওই এলাকার কেউ নয়। তাদের পরিচয় অজ্ঞাত। এই অজ্ঞাত পরিচয় যুবকদের ওইভাবে হত্যা করে কারা ওইখানে ফেলে গেছে, এ মুহূর্তে কারো পক্ষেই তা বলা সম্ভব নয়। এটা অবশ্যই একটা ভয়াবহ ঘটনা এবং এই ধরনের ঘটনা যে পরিস্থিতির কথা জানান দেয়, তা অত্যন্ত মারাত্মক ও উদ্বেগজনক। অবশ্য এটাই এ-জাতীয় প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে এরকম বহু ঘটনার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঝাড়ে-জঙ্গলে, নদীর তীরে, সড়ক বা রেললাইনের পাশে, উন্মুক্ত মাঠে-ময়দানে অজ্ঞাত পরিচয় লাশ পাওয়া এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিছু দিন আগে পূর্বাচলে এরকম লাশ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনা এলাকায় আতংক সৃষ্টি করলেও লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। কারা হত্যাকান্ডের হোতা, তাও জানা যায়নি।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা দেশে কত মানুষ যে নির্মম-নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে অজ্ঞাত লাশে পরিণত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। গুম, অপহরণ, খুন, বন্দুকযুদ্ধ সমানেই চলছে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় অন্তত এটা জানা সম্ভব হয়, কিভাবে মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধ ছাড়া যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মৃত্যুর কারণ এবং কাদের হাতে মৃত্যু হচ্ছে তা অজানাই থেকে যাচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনী এই মৃত্যু যেমন ঠেকাতে পারছেনা তেমনি ঘাতকদের হদিসও বের করতে পারছে না। এ নিয়ে রহস্যের এক ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে, যা এখনো অভেদ্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায়ই যুবকরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। তারা কিভাবে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, অনেক সময়ই তা পরিবারের লোকজন বলতে পারছে না। কখনো কখনো আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে, বাড়ি বা রাস্তা-ঘাট থেকে যুবকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ জানানো হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ অস্বীকৃত হচ্ছে। কখনো কখনো স্বীকার করা হচ্ছে। যাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয় অস্বীকার করা হচ্ছে তাদের আর কোনো খোঁজখবর মিলছে না। কোনো কোনো ঘটনার কথা প্রথমে অস্বীকার করেও পরবর্তীতে স্বীকার করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় ব্যক্তিস্বার্থে কিংবা শত্রু তবশত কিও বা কোনো পক্ষ প্রতিপক্ষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কিনা, হত্যা করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিচ্ছে কিনা সেটাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গতকারণে যুবকরা এবং তাদের অভিভাবকরা ভয়-ত্রাস ও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারের পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করে আইনশৃংখলা বাহিনী। সরকার মাদক বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, জঙ্গী বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা এসব অভিযান পরিচালনা করছে। এ ধরনের অভিযানের প্রতি জনসমর্থন থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব অভিযান প্রশ্নাতীত হচ্ছে না। মাদক বিরোধী অভিযানে কয়েকশ লোক নিহত হয়েছে। অথচ মাদকের দৌরাত্ম্য এতটুকু কমেনি। অভিযান চলছে, মাদক কারবারও চলছে। জঙ্গী বিরোধী অভিযানে জঙ্গীরা মারা যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের পরিচয়ও জানা যাচ্ছে না। জঙ্গী হিসাবে বালক-বালিকা পর্যন্ত আটক হচ্ছে। জঙ্গীবাদ দমনে সাফল্যের কথা প্রচার করা হলেও মাঝে মধ্যে অভিযান কিন্তু চলছেই। জীবনের নিরাপত্তার ওপর বড় কোনো নিরাপত্তা নেই। অথচ এই জীবনের নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে অনিশ্চিত। জনগণসহ নাগরিক সমাজ জীবনের এই অনিশ্চয়তা, বিপাকে-বেঘোরে যুবকদের লাশ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন, বিচলিত। সরকারের উচিৎ এই উদ্বেগ ও বিচলন অবলম্বে দূর করা। আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যাকান্ড

২২ এপ্রিল, ২০২২
৯ ডিসেম্বর, ২০২১
৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৪ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন