পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা সূচকে গতবছরের চেয়েও তুলনামূলক ভালো ফল করলেও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সামগ্রিক বিবেচনায় এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩। ২০১৭ সালে এই অবস্থান ছিল ১০২। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল সিরডাপ মিলনায়তনে ব্যবসায় পরিবেশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পিছিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পণ্য বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের গতিশীলতা আনার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। আর সিপিডি বলেছে, গত এক বছরে বাংলাদেশ বেশ কিছু খাতে উন্নতি করলেও দুর্নীতি, অবকাঠামোগত সমস্যা, উচ্চ কর হার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগসহ বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ১৬টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে যা এক ধাপ অবনমনে প্রভাব ফেলেছে। এগুলো হচ্ছে-দুর্নীতি, অবকাঠামোগত সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দক্ষ কর্মীর অভাব, দুর্বল শ্রম আইন, অর্থের যোগানে সমস্যা, অস্থিতিশীল ব্যবসায়িক নীতি, উচ্চ কর হার, সরকারের স্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, জটিল কর নীতি, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও সৃজনশীলতার অভাব, দুর্বল জনস্বাস্থ্য, বৈদেশিক মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি এবং কঠোর শ্রমনীতি। গত বছরের তুলনায় এর ছয়টি সূচকে সামান্য উন্নতি হলেও তা অবনমন ঠেকাতে যথেষ্ট ছিল না।
সিপিডির ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্য দেশগুলো এগিয়েছে দৌড়ানোর ভিত্তিতে, আর আমরা এগুচ্ছি হাঁটার ভিত্তিতে। ফলে আমাদের উন্নয়ন ধীরগতির, আমাদের চেয়ে অন্যরা এগিয়ে গেছে।
ফোরামের গ্লোবাল কমপেটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৮ বলছে, এবার ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৩তম অবস্থানে। আগের বছর ১৩৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০২তম অবস্থানে ছিল। ঢাকার অর্থনৈতিক ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
চলতি বছরের শুরুতে চালানো জরিপের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গতকাল বিশ্বব্যাপী একযোগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে-দুর্নীতি। এর পরই রয়েছে অবকাঠামো সমস্যা। আগামী নির্বাচনে চারটি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও সিপিডির প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে। তা হল-উৎপাদন, রফতানি, রেমিট্যান্স ও কর্মসংস্থান।
প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সিপিডির গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় গবেষণা সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সার্বিকভাবে এবার বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেনি বরং শূন্য দশমিক সাত পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্ত এবার নতুন করে তথ্যপ্রযুক্তি খাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ খাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় সার্বিকভাবে অবস্থানগত পরিবর্তন হয়েছে।
একটি দেশের অবস্থান বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্যবাজার, শ্রমবাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতা, নতুন ধারণার আত্মীকরণ-এই ১২টি মানদন্ড ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, সূচকের মানদন্ডগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, শ্রমবাজার, বাজারের আকার, উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলাদেশের উন্নতি হলেও পণ্যবাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের গতিশীলতায় অবনতি হয়েছে।
বিশ্বে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দিক দিয়ে এবারের সূচকের শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের স্কোর ৮৫ দশমিক ৬। এর পরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ডস, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইডেন ও ডেনমার্ক। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ৬২ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৫৮ নম্বরে। গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে দেশটির। শ্রীলংকা ৫৬ স্কোর নিয়ে সূচকের ৮৫তম, ৫১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান সূচকের ১০৭ নম্বরে এবং নেপাল ৫০.৮ স্কোর নিয়ে ১০৯ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সিপিডি বাংলাদেশে বৈশ্বিক এ ফোরামের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ তালিকায় সুইজারল্যান্ডকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সিঙ্গাপুর ও জার্মানি রয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে।
শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য দেশগুলো হলো যথাক্রমে-সুইজারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ড, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইডেন ও ডেনমার্ক। শীর্ষ দশ এর মধ্যে এক ধাপ করে অবনমন নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য। এই সূচকে পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে তিন ধাপ পিছিয়ে থাকলেও এগিয়ে আছে ভারত। পাঁচ ধাপ উন্নতি করে ভারতের বর্তমান অবস্থান ৫৮তম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।