এডিট করা যাবে পাঠানো মেসেজ! অতি প্রয়োজনীয় ফিচার আনছে হোয়াটসঅ্যাপ
অ্যাপেল কিংবা টেলিগ্রামের মতো অ্যাপগুলিতে মেসেজ পাঠিয়ে দেয়ার পরও তাতে কোনও ভুল থাকলে এডিট করা
এ ধারণাটি সমাজে অনেক বেশি প্রচলিত। পড়ালেখা কিংবা কোনো কিছুতেই কিছু করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোনো কিছু করার ব্যাপারে খুবই অলস, এ অলসতার কারণেই নিজের ক্যারিয়ার সাজাতে পারছেন না। এ রকম মানুষজনের ভাবনাতেও থাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার চিন্তা। অনেক সময় এ চিন্তাটা আরও ভয়াবহ হয়। তারা ভেবে থাকেন, কোনো কিছুই আমাকে দিয়ে হবে না।
ফ্রিল্যান্সিংটা তো আছেই, সেটা দিয়েই অনেক টাকা আয় করব
আসল সত্য : ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অযোগ্যদের জায়গা নেই। যত বেশি যোগ্যতা অর্জন করবেন, অনলাইনে আপনার আয় তত বৃদ্ধি পাবে। যোগ্যতা ছাড়া হয়তো পাঁচ-দশ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। কিন্তু সেটি অবশ্যই সাময়িক আয়। ফ্রিল্যান্সিং যখন করবেন, স্বপ্নটা পাঁচ-দশ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা বোকামি।
ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্কে কাজ করা
আমাদের দেশের একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, অনলাইনে আয় করতে হলে আপওয়ার্কেই (পুরনো নাম ওডেস্ক) বিড করে কাজ জোগাড় করতে হবে। আর যখন কাজ না পান, তখন হতাশ হয়ে কাজ ছেড়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে আপওয়ার্কে কাজ পেতে ব্যর্থ হয়ে কাজ পাওয়ার জন্য স্পামিং করছেন, কাজের রেট কমিয়ে বিড করছেন। যার কারণে আমাদের দেশের ব্যাপারে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে একটা বাজে অবস্থান তৈরি হচ্ছে।
আসল সত্য : পৃথিবীতে যত কাজ আউটসোর্স হচ্ছে, তার মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ কাজ মার্কেট প্লেসগুলোতে পাওয়া যায়। মার্কেট প্লেস ছাড়াও আর কীভাবে কাজ পাওয়া যায়, সেটি জানার জন্য পরবর্তী অধ্যায়গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য খুব বেশি যোগ্যতার দরকার নেই
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেকের ভাবনায় থাকে পত্রিকায় অল্প কিছু পড়লাম, কিংবা সেমিনারে গিয়ে কিছু বিষয় জানা হয়েছে, এখন চাইলেই শুরু করে দেওয়া যাবে ফ্রিল্যান্সিং। এক-দুই মাসের প্রস্তুতিতেই অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখেন। আবার প্রস্তুতির জন্য প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না। কম পরিশ্রমেই অনলাইন সেক্টরের স্বপ্নটা একসময় খুব বড় হতাশা সৃষ্টি করে এবং সেই সাথে অনলাইন জগৎ সম্পর্কে বাজে একটি ধারণা তার মনে তৈরি হয়।
আসল সত্য : ফ্রিল্যান্সিং জায়গাটা শুধু যোগ্যদের জন্য। কারণ কোনো ক্রেতা তার কাজ করানোর জন্য সারা বিশ্বের অনেক ফ্রিল্যান্সারের মধ্য থেকে সেরা কাউকে বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সুতরাং যাদের যোগ্যতা কম তাদের তখন কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুরুতে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের চেষ্টা করা উচিত।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়
যারা অনলাইনে আয় করছেন, তাদের মতো আমার যোগ্যতা নেই। সে জায়গায় আমার পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব না— এ ধারণা থেকে অনেকেই পিছিয়ে পড়েন।
আসল সত্য : মাথায় রাখা উচিত, যারা এ মুহূর্তে সফলভাবে অনলাইনে আয় করছেন, তারা একসময় খুবই সাধারণ ছিলেন। পরিশ্রম এবং প্রশিক্ষণ তাদের আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যে কেউ যদি কাজ শিখে নেন এবং প্রচুর পরিশ্রম করেন, তাহলে যে কেউ অনলাইনে সফল হতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং পার্টটাইম চাকরি, ফুলটাইম না
এখনো আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা নতুন দেখে বেশির ভাগই এটাকে চাকরির বিকল্প ভাবতে পারছেন না। চাকরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম হিসেবেই ফ্রিল্যান্সিংকে এখনো সবাই ভাবছেন। আর সে জন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে যে পরিমাণ আয় করা সম্ভব, সেটি বাস্তব হচ্ছে না।
আসল সত্য : ফ্রিল্যান্সিং শুধু অতিরিক্ত টাকা আয়ের মাধ্যম না। এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া সম্ভব। কারণ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মূলত উন্নত দেশের কোনো কোম্পানির হয়ে কাজ করা হচ্ছে। অনেকেই আবার এখানে বসে অন্য কোম্পানির নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে এ দেশে বসে চাকরিও করছেন।
চাকরিতে মাস শেষে নিশ্চিত টাকা, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে চাকরির বেতনের ৫-১০ গুণ আয় হওয়ার পরও এ দেশের পরিবারগুলো থেকে ফ্রিল্যান্সিং করতে বাধা দেওয়া হয়। কারণ চাকরির ক্ষেত্রে কম টাকা হলেও মাস শেষে নিশ্চিতভাবে হাতে টাকা আসবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সাময়িক আয়, একসময় সে আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে— এ ধারণাটি এখনো অনেকের মধ্যেই আছে। আবার সব মাসেই আয় হবে কি না, সেটি নিয়েও সন্দেহটা রয়েই যায়।
আসল সত্য : ধরি, কেউ একজন মার্কেটিংয়ের কাজ করে অনলাইনে আয় করেন। তাহলে তার একসময় কোনো কাজ থাকবে না, এর মানে দাঁড়ায় পৃথিবীতে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন নেই। সেটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে তো দেশের ভেতরেও যারা মার্কেটিংয়ের চাকরি করেন, তারাও বেকার হয়ে পড়বেন। কোনো সেক্টর হিসাব করলে লোকাল পর্যায়ে যদি চাকরির সুযোগ থাকে ১০০ প্রতিষ্ঠানে, তাহলে অনলাইনে চাকরির সুযোগটা থাকবে ১ লাখ প্রতিষ্ঠানে। কারণ অনলাইনে সারা বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানেই আপনার চাকরি করার সুযোগ থাকছে।
কারণ অনলাইনে সারা বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানেই আপনার চাকরি করার সুযোগ থাকছে।
বিদেশিদের মতো ইংরেজি না জানলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবে না
অনেকে কাজের ক্ষেত্রে ভালো দক্ষতা থাকার পরও ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারণে অনলাইনে আয়ের চিন্তা সম্পূর্ণরূপে মাথা থেকে বাদ দিয়ে দেন।
আসল সত্য : অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতাটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন বায়াররা। তবে বায়ার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় যদি দেখেন ফ্রিল্যান্সারটি ভাষার দুর্বলতার কারণে কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিতে পারছেন না কিংবা ফ্রিল্যান্সার বায়ারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভাষা বুঝতে তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়, তখন বায়ার কিছুটা বিরক্তবোধ করেন। সে ক্ষেত্রে কাজে দক্ষ থাকলে অনেক সময় বায়ার তার ভাষার দুর্বলতাকে বিবেচনা করেন। তবে এ ক্ষেত্রে যে ইংরেজিতে দক্ষ এমন কাউকে সঙ্গী করে একসাথে ফ্রিল্যান্সিং করা যেতে পারে।
পড়ালেখা না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জোয়ারের কারণে অনেকের ধারণা, একাডেমিকভাবে শিক্ষিত না হয়েও শুধু বিভিন্ন আইটি-বিষয়ক বিষয়ে ট্রেনিং নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে। আর সে জন্য পড়ালেখাকে সম্পন্ন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
আসল সত্য : সবকিছুর জন্যই পড়ালেখার দরকার আছে। শিক্ষিত ব্যক্তির জ্ঞানের পরিধি একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে অবশ্যই অনেক বেশি উন্নত হবে। যদিও শুধু চাকরি করার জন্য পড়ালেখা করতে হয়, এ রকম একটি ভুল ধারণা আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সাত দিন কিংবা এক মাসের প্রস্তুতি যথেষ্ট
অনেকেই কম্পিউটার কিনেই চিন্তা শুরু করে দেন কিছুদিনের মধ্যেই অনলাইনে আয় শুরু করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার কিংবা পত্রপত্রিকা ও ব্লগ থেকে এ-সম্পর্ক লেখা পড়েই অতি স্বল্পসময়ে অনলাইনে আয় শুরু করবেন।
আসল সত্য : ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যে বিষয়টি আপনি বেছে নিয়েছেন, সেটিতে খুব ভালোভাবে দক্ষ হওয়া ছাড়া কাজ করে প্রচুর পরিমাণে আয় করার সম্ভাবনাটা কম থাকে। আর খুব ভালোভাবে দক্ষ হওয়ার জন্য অবশ্যই ট্রেনিং নেওয়ার পাশাপাশি সেটিতে প্রচুর পরিমাণে প্র্যাকটিস করার জন্য সময় দেওয়া দরকার। অভিজ্ঞরা বলেন, মাসে ২০ হাজার টাকার চাকরি পাওয়ার জন্য স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে যদি ২০ বছর ব্যয় করতে হয়, তাহলে অনলাইনে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করার জন্য কমপক্ষে ৩ মাস থেকে ১ বছর সময় ব্যয় করার মতো ধৈর্য থাকাটা আবশ্যক।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য নিজের পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট লাগবে
অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখার শুরুতেই টেনশনে পড়ে যান, পেপ্যাল তো নেই তার। অনলাইনে আয় শুরু করলে কীভাবে সেই টাকা বাংলাদেশে নিয়ে আসবেন। খরচ করে কাজ শিখব, পরে কষ্ট করে কাজ করে আয় করার পর যদি সেই টাকা পেপ্যাল না থাকার কারণে নিজের কাছে আনতে না পারেন, তাহলে তো শুরুতেই থেমে যাওয়া উচিত— এ রকম ভাবনাও অনেকের মধ্যে কাজ করে।
আসল সত্য : কাজ করার পর ডলার গ্রহণ করতে কেউ এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়নি। এমনকি আমাদের দেশের অনেকেই আছেন, যারা এখনো এসএসসি পাস করেনি, যাদের এখনো বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকেই অ্যাকাউন্ট খোলার বয়স হয়নি। তারাও অনলাইনে আয় করে সেই ডলার রিসিভও করছে। তবে এটা ঠিক পেপ্যাল সুবিধা না থাকার কারণে ডলার দেশে নিয়ে আসাটা অনেক ক্ষেত্রে একটু ঝামেলাও হচ্ছে। তবে ঝামেলা হলেও কোনো না কোনোভাবে গ্রহণ করা যাচ্ছেই।
ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স না করলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায় না
অনেকে টাকার অভাবে ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারেন না এবং এ জন্য আফসোস করছেন। তাদের ধারণা তৈরি হয়ে গেছে ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স না করতে পারলে অনলাইনে আয় করা সম্ভব না।
আসল সত্য : অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে, ইউটিউবে এখন প্রচুর ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে। ইচ্ছা থাকলে সেগুলো দেখে দেখে ঘরে বসেই সবকিছু শিখে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। বর্তমানে বাংলাতেই অনেক ভালো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট। তবে এটা সত্য, নিজে নিজে সেগুলো পড়ে শিখতে গেলে পরিশ্রম এবং সময় বেশি লাগে।
সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না
অনেক সময় কমার্সের স্টুডেন্ট কিংবা মানবিক বিভাগের স্টুডেন্টরা মনে ধারণা পোষণ করেন, তারা অনলাইন থেকে আয় সম্ভব না। যেহেতু কাজটি কম্পিউটারে বসে করতে হয়, তাই শুধু কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্টরাই কাজটি করতে পারবেন, এ রকম ভুল ধারণাও সমাজে প্রচলিত আছে।
আসল সত্য : অনলাইনে ক্যারিয়ারের সাথে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। মানবিক কিংবা বাণিজ্য কিংবা সায়েন্স যেকোনো বিভাগের যে কেউ অনলাইনে কাজের দক্ষতা অর্জন করে সেগুলোর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।