Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘তাৎক্ষণিক সৈন্য নামলে ৩শ’লোক রক্ষা পেত’

গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি, পাঠানো সেনাদল একটি দিন বিমানবন্দরে আটকে ছিল

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

২০০২ সালের শেষ ফেব্রুয়ারিতে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ভয়াবহ রূপ নেয়ার প্রেক্ষিতে সরকার দাঙ্গা দমনের জন্য ৩ হাজার সৈন্য পাঠায়। কিন্তু সেনাবাহিনি বিমানবন্দরে প্রায় ৩৪ ঘন্টা আটকা পড়ে থাকে। তাই রাজ্য জুড়ে রক্তের বন্যা বয়ে যেতে থাকলেও তারা সেদিন কোনো ভ‚মিকা রাখতে পারেনি। গুজরাট রাজ্য সরকার সৈন্যদের পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। ফলে গোটা একটি দিন বিমানবন্দরে আটকা পড়ে থাকে। পরদিন ২ মার্চ তাদের প্রয়োজনীয় পরিবহন ও লজিস্টিক সহায়তা দেয়া হয়। ততক্ষণে বহু প্রাণ ঝরে গেছে। পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে তাদের দাঙ্গা দমনে যেতে দেয়া হলে কমপক্ষে ৩ শ’ মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত। সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ কথা জানিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনির অবসরপ্রাপ্ত লে.জেনারেল জমিরুদ্দিন শাহ। তিনি ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গা বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত বিশেষ তদন্ত দলের (এসআইটি) তদন্ত রিপোর্টের সহিংসতা দমনে মোতায়েন সেনাবাহিনীর তৎপরতা সংক্রান্ত অংশকে ‘চরম মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন। উল্লেখ্য, তিনি ছিলেন সহিংসতা দমনের জন্য প্রেরিত সেনাদলের কমান্ডার। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান ও আলিগড় বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি লে. জেনারেল শাহ তার প্রকাশিতব্য স্মৃতিকথা ‘ দি সরকারি মুসলমান’-এ বলেছেন যে ১ মার্চ ৩ হাজার সৈন্য আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কিন্তু বিভিন্ন নগর ও শহরে চলা দাঙ্গা দমনের জন্য যেতে পরিবহন ও অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য তাদেরকে পুরো একটি দিনেরও বেশি সময় বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি গুজরাটে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তৎকালিন সেনাপ্রধান জেনারেল এস. পদ্মনাভনের নির্দেশে এ সৈন্যদের বিমানযোগে যোধপুর থেকে আহমেদাবাদে পাঠানো হয়। তিনি এনডিটিভিকে বলেন, সৈন্যরা অবতরণের পর তিনি ১ মার্চ ভোর ২টার সময় গুজরাটের তৎকালিন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ ব্যাপারে অনুরোধ জানাতে তার বাসভবনে যান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেস সে সময় মোদির কাছে উপস্থিত ছিলেন। তা সত্তে¡ও এ বিলম্বের ঘটনা ঘটে। অবাক করার বিষয়, এসআইটির রিপোর্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অশোক নারায়ণের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মোদিকে দায়মুক্ত করে বলা হয়েছে যে, সৈন্য তলব ও মোতায়েনে কোনো বিলম্ব হয়নি। রিপোর্টে বলা হয়, সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা ও রাজ্য প্রশাসনের সাথে মুখ্যমন্ত্রী মোদি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বৈঠকের পর ১ মার্চ ২০০২ বেলা ১১টায় সেনা নামতে শুরু করে। লে. জেনারেল শাহ বলেন, এটা চরম মিথ্যা। রাজ্য সরকার সৈন্যদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করছে বলে ৩ হাজার সৈন্যকে বিমানবন্দরে একদিনেরও বেশি সময় আটকে রাখা হয়। তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন জেনারেল পদ্মনাভন। লে. জেনারেল শাহ ঐ বছর জুন মাসে তার কাছে দাঙ্গা দমনে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। জেনারেল পদ্মনাভন চেন্নাই থেকে টেলিফোনে ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিস (আইএএনএস)কে কলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে এ ঘটনায় রাত মধ্যরাত নাগাদ সৈন্যরা অবতরণ করে। যদি তারা মধ্যরাতে অবতরণ করে তাহলে তারা কি করবে? কিভাবে তারা সব জায়গায় যাবে? সেখানে কোনো যানবাহন ছিল না। রাজ্য সরকার তাদের যানবাহন দেয়নি। তাহলে তারা কিভাবে কাজ করবে? তাই তিনি যা বলেছেন অবশ্যই ঠিক বলেছেন। সরেজমিনে তিনিই ছিলেন। এসআইটি কখনো লে. জেনারেল শাহর সাথে কথা বলেনি। তাদের রিপোর্ট দেখে মনে হয়, তারা জেনারেল পদ্মনাভনের কাছে পেশ করা লে. জেনারেল শাহর রিপোর্টটি দেখেনি। পরে রিপোর্টটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়। লে. জেনারেল শাহ বলেন, আমি পরিবহন পাই ২ মার্চ। তিনি এর আগে একবার আইএএনএসকে বলেছিলেন যে রাজ্য প্রশাসন যদি সেনাদলকে ১ মার্চেই পরিবহন ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করত তাহলে আরো বহু জীবন রক্ষা করা সম্ভব হত। জাকিয়া জাফরি ও অন্যান্য বনাম গুজরাট রাজ্য ও অন্যান্যরা মামলায় এসআইটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়। জাকিয়া জাফরি ছিলেন গুজরাটের কংগ্রেস দলীয় লোকসভা সদস্য এহসান জাফরির স্ত্রী। গুলবার্গ হাউজিং সোসাইটিতে হিন্দু জনতা তাকে হত্যা করে। জাকিয়া যে ৩০টি অভিযোগ করেন তার মধ্যে ১৪ নং অভিযোগ ছিল যে সো তলব ও মোতায়েনে অযৌক্তিক বিলম্ব করা হয়। এসটিআই তাদের চ‚ড়ান্ত রিপোর্টে এ অভিযোগ খারিজ করে দেয় এ বলে যে এ অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। উল্লেখ্য ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া গুজরাট দাঙ্গা ৩ দিন চলার পর ২ মার্চ বন্ধ হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরার কাছে সবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে পুড়ে ৫৯ জন হিন্দু কর সেবকের মৃত্যু হয়। এর জন্য মুসলমানদের দায়ী করে গুজরাটে শুরু হয় মুসলিমদের উপর হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ। এতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হন যাদের প্রায় সবাই মুসলিম। তবে এ দাঙ্গায় আড়াই হাজার মুসলমান নিহত হয় বলে মুসলিমদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। গালফ নিউজ।



 

Show all comments
  • বাতেন ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 1
    ঠিক কথা বলেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Tarek Aziz ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৪৫ এএম says : 0
    Right
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam ১২ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৪৬ এএম says : 0
    ata sokole e jane tobe kaw bole nai. bolar jonno apnake thanks
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সৈন্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ