Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উদ্ভাবন-গবেষণায় যথোচিত গুরুত্ব দিতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স- ২০১৮ অনুযায়ী, এশিয়ায় সবচেয়ে কম উদ্ভাবনী দেশ বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেই যদি সর্বনিম্ন হয়, তাহলে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় অবস্থা কী? বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায়? এই দু’টি দেশ এখনো উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষে। তার পরে চীন, জাপান, জার্মানি ইত্যাদি। বাংলাদেশের মানুষের যে উদ্ভাবনী শক্তি নেই, তা নয়। বহু মানুষ অনেক কিছু উদ্ভাবন করে জগতখ্যাত হয়েছেন। যেমন: পাট ও ইলিশের জীন, পাট থেকে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ও কাগজ, ইলিশ মাছের সুপ ও ন্যুডলস, কাচের সোলার ইত্যাদি। যা বিশ্বে প্রথম। এছাড়া, ১০৩৬টি হাইব্রিড ও কৃষি প্রযুক্তিও আবিষ্কার করেছেন এদেশের বিজ্ঞানীরা। তবে এসবের বেশিরভাগই কাজে লাগানো হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও দেশের ক্ষতি হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিবিসি’তে প্রকাশ, ‘তরুণ উদ্ভাবকদের পথ দেখানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে ২০১৫ সালে চালু হয় ‘দ্য ইনোভেশন হাব’। এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান ফাহাদ বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ফান্ডিংয়ের অভাব। উদ্ভাবকরা জানেন না তাদের আইডিয়া নিয়ে কোথায় যেতে হবে, তারা যেটা তৈরি করতে যাচ্ছেন তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে জোগাড় হবে?’ প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ উদ্ভাবনী শক্তির দিকে অন্য দেশের চেয়ে কম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্ভাবকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- মেধার পরিচর্যার অভাব। পাশাপাশি, নানা ধরনের ভৌত সমস্যা তথা বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, মেন্টরের অভাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘উদ্ভাবনী সত্তা তৈরি হয় দেশপ্রেম থেকে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য বহু সফটওয়্যার রয়েছে। কিন্তু তবুও ব্যাংক মালিকরা বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। এ মানসিকতাকে পরিবর্তন করা দরকার। এছাড়া, গবেষণা খাতে সরকারি অর্থায়নের নিয়মকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয়া প্রয়োজন। কারণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গবেষণার জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ থাকে। কিন্তু প্রকৃত গবেষণার বদলে সেই টাকা ব্যয় হয় যন্ত্রপাতি কেনায়।’

বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির । তাই এখন যারা যত বেশি এসবের নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করে ব্যবহার করছে, তারা তত দ্রুত উন্নতি করছে। এ ক্ষেত্রে প্রচন্ড প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বময়। পুরানো কর্মের স্থলে নতুন কর্ম চালু হচ্ছে প্রতিনিয়তই। মানুষের স্থান দখল করছে রোবট। সেন্টেম্বর, ১৮ দাভোসে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম’র সম্মেলনে উপস্থাপিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রোবটের কারণে ২০২২ সাল নাগাদ কাজ হারাবে ৭.৫ কোটি মানুষ। আবার একই সময়ে নতুন প্রযুক্তির কারণে তৈরি হবে ১৩.৩০ কোটি নতুন কাজ। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষের সময় বেঁচে যাবে অনেক, আর সেটা তাদের অন্য কাজ করার প্রচুর সুযোগ করে দেবে। যেমন: ডাটা এনালিস্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপার, শিক্ষক, কাস্টমার সার্ভিস, সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট ইত্যাদি। কিন্তু একাউন্টিং প্রতিষ্ঠান, কারখানা, পোস্ট অফিস ও ক্যাশিয়ারের কাজ রোবট দখল করে নেবে। এই বিরাট পরিবর্তনের মুখে কর্মীদের নতুন কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’ চীনের প্রেসিডেন্ট শি গত ১৭ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব বিজ্ঞান-শিক্ষা সম্মেলন’ উপলক্ষে পাঠানো বাণীতে বলেছেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হচ্ছে মূল উৎপাদন-শক্তি এবং সৃজনশীলতা হচ্ছে উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকাজ চলছে, যা বৈশ্বিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে এবং মানবজাতির উৎপাদন ও জীবন-পদ্ধতিতে আনছে পরিবর্তন। সমাজের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় জোরদার করা এবং এই খাতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বেগবান করা উচিত। এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা আরও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হবে।চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে এবং জনগণকে আরও বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলছে।’

এই অবস্থায় দেশের উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু আলোকপাত করা এবং এ ক্ষেত্রে দেশের ভবিষ্যৎ কি-তা নিয়ে কিছু বলা দরকার। সম্প্রতি এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক করে সাজানোর পরিকল্পনায় ৩৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেও তার সুফল পাওয়া যায়নি। খরচ হয়ে গেছে হাজার কোটি টাকা। আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে সরঞ্জাম এখনো প্যাকেট-বন্দি, নষ্ট হওয়ার পর মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যোগ্য শিক্ষক ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে দেশ।’ অপরদিকে, বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ,‘দেশের অনেক স্কুলে ইংরেজি, অংক ও আইটি বিষয়ে শিক্ষক নেই। কোথাও কোথাও এসব বিষয়ের ক্লাস গ্রহণ করে অন্য বিষয়ের শিক্ষক। আবার অনেক স্থানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদানই হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্বল হচ্ছে। এছাড়া, অসংখ্য শিক্ষাঙ্গন ভাঙ্গাচুরা।’ এ ব্যাপারে মাউশির ২০১৫ সালের রিপোর্ট স্মরণীয়। উক্ত রিপোর্ট মতে, ‘অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা কাক্সিক্ষত মানের নয়।’ গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রাথমিকের ২০% শিক্ষার্থী ইংরেজি ও বাংলায় দুর্বল। তারা নিজের নাম-ঠিকানাও লিখতে পারে না।শতভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ‘ফোরটি’ ও ‘ফোরটিন’ এর পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। এই যদি হয়অবস্থা, তবে শিক্ষকদের অবস্থা কেমন?’ স্মরণীয় যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের অবস্থাও তথৈবচ! এবার ঢাবি’র গ ও খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ১০.৯৮% ও ১৪% । অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উচ্চ মেধাবীরাই আবেদন করে। তাদের মান যদি এই হয়, তাহলে এর নিম্ন মেধাবীদের অবস্থা কি? দ্বিতীয়ত ঢাবিতে ভর্তির ক্ষেত্রেই যদি এ রেজাল্ট হয়, তাহলে বিশ্বের অন্য ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কি হবে? এশিয়ার শ্রেষ্ঠ একশ’ বিশ্ববিদ্যারয়ের মধ্যে ঢাবির স্থান নেই। অথচ ঢাবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বলা হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। কিন্তু এটা শুরুতে যা ছিল, এখনও তাই আছে- মান ও বিষয়ে। আর এর অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক দিয়ে শীর্ষে পৌঁছেছে এবং বিষয়ও আধুনিক। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র আরও নিম্নতর। ইউজিসি’র ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, দেশের ১৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১টিতে গবেষণার জন্য এক টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তন্মধ্যে সরকারি ১০টি ও বেসরকারি ৩১টি। আর নামেমাত্র বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০টিতে । এছাড়া, ৮১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতের বরাদ্দ একবারেই নগণ্য। উপরন্তু ১২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রকাশনা বের হয়নি। আর ১০-এর কোটা পূরণ করতে পারেনি আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়। একই চিত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও। ৩৮টিতে কোনও প্রকাশনা নেই, আর ১৩টি দশটি প্রকাশনা বের করতে পারেনি। কিছুদিন আগে এক দৈনিকে প্রকাশিত রিপোরর্টে বলা হয়েছে, দফায় দফায় সময় নিয়েওস্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি দুই ডজনের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ওকোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বেআইনিভাবে। অর্থব্যয়ের হিসাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারও তোয়াক্কা করছে না। এসব অনিয়ম নিয়মিত ঘটলেও তা বন্ধে ব্যর্থ হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই বর্তমানে ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টিতেই উপাচার্য নেই। কোষাধ্যক্ষ নেই৪৯টিতে। আর উপ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে ৭০টি। এসব নানা কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বেশি খারাপ। আরো উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত মেরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোন দেশীয় শিক্ষক পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট ভিসি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৩০.৫% রয়েছে কলা ও মানবিকে। অথচ চাকরির বাজারে এর চাহিদা মাত্র ১৩.৭%। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। আর বিজ্ঞান শিক্ষায় ২৩.৯% শিক্ষার্থীর চাহিদা থাকলেও এতে অধ্যয়নরত মাত্র ৮%। অর্থাৎ ঘাটতি ১৫.৯%। অপরদিকে, বেশিরভাগ দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ৬০-৭০%। আর বাংলাদেশে ১৪%। সেটাও হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক নারীদের উপবৃত্তি দেওয়ায়। নতুবা হার আরও কম হতো। দ্বিতীয়ত দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি ও শিক্ষক নেই। অন্যদিকে, বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯% বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী। অর্থাৎ এখনও ২৭% মানুষ নিরক্ষর। দ্বিতীয়ত সাক্ষরতার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। তা হচ্ছে: আগে শুধুমাত্র নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষরযুক্ত বলা হতো। তার পর বলা হয় চিঠি লিখতে ও পড়তে পারলেই সাক্ষরযুক্ত হবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, সাক্ষরযুক্ত হতে হলে শুধুমাত্র চিঠি লিখতে ও পড়তে পারলেই হবে না, সে সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। এই মানদন্ড অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার কত তা ভাববার বিষয়। কারণ, আমাদের দেশে যারা সাক্ষরযুক্ত হয়, তাদের অর্ধেকের বেশি ভুলে যায় চর্চার অভাবে। সেই অবস্থায় সাক্ষরতার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা সংযুক্ত করা হলে দেশে সাক্ষরতার হার সিঙ্গেল ডিজিট পার হতে পারবে কি-না সন্দেহ আছে। অপরদিকে, প্রতিবছর দেশের কওমি মাদরাসা থেকে কয়েক লাখ করে শিক্ষার্থী শিক্ষা শেষে কর্মজীবনে অবতীর্ণ হচ্ছে। কিন্তু তারা আধুনিক শিক্ষা কি তা অবগত নয়।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, সব উপজেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। এটা করা উচিৎ ছিল আরও ১০ বছর আগে। তাহলে দেশে এখন যে দক্ষ লোকের ব্যাপক ঘাটতি চলছে, তা হতো না। তবে না হওয়ার চেয়ে বিলম্বে হওয়াও ভালো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, সব উপজেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে প্রয়োজনীয় মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা কম। অবশ্য প্রয়োজনীয় মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া না গেলে ভিন্নপথ খুঁজে বের করা যেতে পারে। জাপানে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখাতে ৫০০ স্কুলে রোবট শিক্ষক সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। ইংরেজি শিক্ষকের সংকট কাটাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি তাদের শিক্ষক হিসেবে স্কুলে আনার মতো ফান্ড নেই দেশটির। তাই এর পরিবর্তে কম খরচে ইংরেজি বলা রোবট স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী এপ্রিল থেকে রোবট সরবরাহের কাজ শুরু হবে। বিশ্বে সর্বপ্রথম রোবট টিচার জাপানই তৈরি করে ২০০৯ সালে, যার নাম ছিল ‘সায়া’। রোবটটি পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর আগে শিক্ষার্থীদের কোডিং শেখাতে রোবট ব্যবহার করে পোল্যান্ড। আরেকটি দিক চিন্তা করা দরকার দেশের প্রশাসনকে পেশাভিত্তিক-ভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রশাসন পেশাভিত্তিক না হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই পেশাজীবীদের কর্ম অমূল্যায়িত হচ্ছে। দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে উঠলেই উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদসহ পেশাজীবীদের মূল্যায়ন হবে। এ ক্ষেত্রে বহু মানুষ এগিয়ে আসবে। দেশের উন্নতি বৃদ্ধি পাবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে দেশের কাংখিত উন্নতি সম্ভব নয়। তাই দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বাধুনিক বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহন, দেশের টোটাল শিক্ষাকে আধুনিক ও বিশ্ব মানের করা এবং শিক্ষার হার শতভাগ করা আবশ্যক। কারণ, আধুনিক শিক্ষা ছাড়া আধুনিক যুগ মোকাবেলা করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে আশার আলো হচ্ছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য চালু করা হয়েছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল(আইকিউএসি) এবং নারী শিক্ষার উত্কর্ষ সাধন, দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশাসনপ্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত করতে দ্বিতীয় প্রজন্মের ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটিকে প্রধান্য দিতে হবে। যেমন: দেশে ব্যবহৃত সোলার প্যানেলের সংখ্যা ৪০ লাখের অধিক। কিন্তু এ থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র ২৯০ মেগাওয়াট। অথচ চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র একটি প্যানেল থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট। আমাদের সৌর প্যানেলের এফিসিয়েন্সি মাত্র ০.৬% আর উন্নত দেশের প্রায় ২৪%। অন্যদিকে, বৃটেনে সেপ্টেম্বর, ১৮-তে অনুষ্ঠিত কৃষি মেলায় ৩২০ কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া ও প্রায় ৮ কেজি ওজনের পিঁয়াজ পুরস্কার পেয়েছে। আর এসব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কি তা ভাবতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্লোবাল


আরও
আরও পড়ুন