বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, খুব শিগগিরই উপযুক্ত কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে। যে কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের পতন হয় সে কর্মসূচী এবার দেয়া হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখতে পাবেন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে চেতনা বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মওদুদ আহমদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশে এখন ন্যূনতম পরিবেশ নাই। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ আছে। কথাটা সত্য নয়। কারণ বাংলাদেশে কোন সাধারণ নির্বাচন করার ন্যূনতম পরিবেশ এখন নাই। বরং বলবো, এই পরিবেশকে নষ্ট করতে ক্ষমতাসীনরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার কারণে বিএনপির সক্রিয় কর্মীদের নামে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভোটের জন্য ন্যূনতম পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। সরকার এটা চায় না। কেনো চায় না? কারণ তাদের উদ্দেশ্য খুব খারাপ। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটা নির্বাচন করতে চায়। একদলীয়ভাবে একটা নির্বাচন করতে চায়। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায়। তবে বাংলাদেশের মাটিতে এটা আর কোন দিন হতে দেওয়া হবে না।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কিছু বলতে পারবেন না। এক মিনিটের ব্যবধানে সংলাপে বসতে বাধ্য হবেন। বাধ্য হবেন বিএনপির দাবি মেনে নিতে। জোর করে যদি ভাবেন ক্ষমতায় থাকবেন, এবার এটা সম্ভব হবে না।
মওদুদ আহমদ বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই বর্তমান সরকারের অপসারণ ঘটানো হবে। সারা জাতি আজকে ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্য নষ্ট করতে সরকার অনেক ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী ও জোরদার হবে। সারা বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে। কারণ একটা স্বৈরাচার সরকারকে সরাতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নাই।
তিনি বলেন, মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ইভিএম ক্ষমতাসীনদের নতুন একটি ষড়যন্ত্র।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নাই। তার মানে, সরকার সংবিধান থেকে সরে আসতে চাচ্ছে। সরে এসে একটা নির্বাচনকালীন সরকার করবেন। এটা একই সরকার হবে মানুষকে বিভ্রান্ত করবার জন্য। প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাব তাদের অধিনে থাকবে। আর তাদের অধিনেই নির্বাচন হবে। তবে নাম দেওয়া হবে নির্বাচনকালীন সরকার। মুখে বলবে আমরা রুটিন অনুযায়ি কাজ করবো। কিন্তু সংবিধান তো বলে না যে, তারা রুটিন অনুযায়ি কাজ করবে এবং তারা কোন পলিসি মেকিংয়ের সিদ্ধান্ত দেবে না। কিংবা প্রশাসন ও পুলিশ তাদের অধিনে থাকবে না। মওদুদ বলেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বলে দেবে যে, আমরা এসব দিয়ে দেবো। এখানে নির্বাচন কমিশনকে এসব ক্ষমতায় দেওয়ার অধিকার কী প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে? আমাদের সংবিধানে এরকম কোন বিধান নাই। প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা, সেটা বিকেন্দ্রীয়করণের ক্ষমতা আমাদের সংবিধানে কাউকে দেওয়া হয়নি। সুতরাং এগুলো মিথ্যা ও ভুল।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, আপনারা সংবিধান থেকে যদি সরে আসতে রাজি হন তাহলে বিএনপির প্রস্তাব মানতে অসুবিধা কোথায়? সংবিধান তো কোন দিন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। অতিতেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাই। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে প্রধান বিচারপতি রেখে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেটা অসাংবিধানিক ছিল। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একাদশ সংশোধনী এনে তাকে বৈধতা দেওয়া হলো।
সরকার আজ শঙ্কিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার একতরফাভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। মানে একদলীয় নির্বাচন হবে। তবে যতই অত্যাচার ও নির্যাতন করুন না কেনো, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারবে না। আর নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সরকার একদলীয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। যত পারেন পোস্টার ও ব্যানার লাগান। কিন্তু ভোট নাই।
সংগঠনের সভাপতি ও দোহার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা রহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।